E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘আমাদের ওপর অনেক বালা-মুসিবত’

২০২৪ এপ্রিল ০২ ১৬:২৩:৪৫
‘আমাদের ওপর অনেক বালা-মুসিবত’

স্টাফ রিপোর্টার : নোবেল বিজয়ী ও অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমাদের ওপর অনেক বালা-মুসিবত। ব্যক্তিগতভাবে আমার ওপর বালা-মুসিবত, আমার সহকর্মীদের ওপর বালা-মুসিবত এবং দেশের ওপর বালা-মুসিবত। এই বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা যেন দোয়া করি।’

আজ মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের সংরক্ষিত ফান্ডের লভ্যাংশের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে করা মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট আমলে গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেন। এসময় ড. ইউনূস আদালতে উপস্থিত হন। শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সামনে ঈদ আসছে। ঈদ খুশির দিন। আমরা যেন এই ঈদ উদযাপন করতে পারি। সামনে পহেলা বৈশাখ আরও খুশির দিন। সব খুশি একত্রে আসছে। এর মধ্যে বালা-মুসিবত থেকে উদ্ধার পাবো সেটা যেন সবাই মিলে চিন্তা করি। একভাবে আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, দেশের মধ্যে বালা-মুসিবতের জন্য সমষ্টিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কাজেই এগুলো অতিক্রম করতে না পারলে আমাদের কোনো মুক্তি নেই, রেহাই নেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের নিজের মনে কাজ করে যাই। এগুলো হলো বৈজ্ঞানিক তথ্য নিয়ে কাজ করার নির্ভর। কতগুলো অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করি, কতগুলো স্বপ্ন নিয়ে কাজ করি। দেশের মানুষ বিশেষ করে এটাতে এগিয়ে এসেছে। দেশ বিদেশের মানুষ এটাতে বিশ্বাস করেছে। তারা উৎসাহিত হয়ে সারা দুনিয়ার মধ্যে সামাজিক ব্যবসা বলছি। এটা আমাদের মনে হয়েছে মানুষের জন্য মঙ্গল হবে। মানুষের মঙ্গলের জন্য আমরা এটা করছি।

এদিন মামলার চার্জশিট গ্রহণ করে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ-৪ নম্বর আদালতে বদলির আদেশ দেন। আগামী ২ মে মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত।

এদিকে, গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালক শাহজাহান অসুস্থ থাকায় আদালতে উপস্থিত না হয়ে সময়ের আবেদন করেন। আদালত সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার।

গত বছরের ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সংস্থার উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

দুদকের মামলায় আসামি ছিলেন ১৩ জন। চার্জশিটে নতুন একজন আসামি বেড়েছে।

আসামিরা হলেন-গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস. এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।

এছাড়া অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক কামরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্নসাৎ করেছেন। সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় হিসাব খোলা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট চুক্তি হয় ওই বছরের ২৭ এপ্রিল।

গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভার হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত ৯ মে হলেও হিসাব খোলা হয় একদিন আগে ৮ মে। সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টেও ৮ মে ব্যাংক হিসাব দেখানো আছে, যা বাস্তবে অসম্ভব। এরকম ভুয়া সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টের শর্ত অনুযায়ী ও ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২২ সালের ১০ মে গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়।

পরবর্তী সময়ে ২২ জুন অনুষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকমের ১০৯তম বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে অতিরিক্ত ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়। অন্যদিকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নামীয় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের লোকাল অফিসের হিসাব থেকে তিন দফায় মোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়।

কিন্তু কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের আগেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদের না জানিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে ২০২২ সালের মে ও জুন মাসের বিভিন্ন সময়ে সিবিএ নেতা মো. কামরুজ্জামানের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাবে মোট ৩ কোটি টাকা, সিবিএ নেতা মাইনুল ইসলামের হিসাবে ৩ কোটি ও সিবিএ নেতা ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ-বাংলা ব্যাংক মিরপুর শাখার হিসাবে ৩ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়।

একইভাবে অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলীর কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ধানমন্ডি শাখার হিসাবে ৪ কোটি টাকা ও দ্য সিটি ব্যাংকের গুলশান শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠানো হয়। ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই অনুসন্ধান শুরু হয়।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ০২, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test