E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আজহারুলের ফাঁসির আদেশ

২০১৪ ডিসেম্বর ৩০ ১২:৫৫:২০
আজহারুলের ফাঁসির আদেশ

স্টাফ রিপোর্টার : মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার দুই, তিন ও চার নম্বর অভিযোগে তাকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

আজহারুলের বিরুদ্ধে আনিত ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হয়েছে। শুধু এক নম্বর অভিযোগটি প্রমাণিত হয়নি। এক নম্বর অভিযোগে আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। দুই, তিন ও চার নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড, পাঁচ নম্বর অভিযোগে ২৫ বছর কারাদণ্ড এবং ছয় নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বেলা ১১টা ১৮ মিনিটে এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলার রায় পড়া শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল-১। শুরুতে সংক্ষিপ্ত সূচনা বক্তব্য দেন ট্রাইব্যুনাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। মোট ১৫৮ পৃষ্ঠার রায়ের সার সংক্ষেপ পাঠ করা হয়।
এর আগে রায় ঘোষণা উপলক্ষে সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে কঠোর নিরাপত্তায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে পুরাতন হাইকোর্ট এলাকায় স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। এরপর ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় রাখা হয় তাকে। পরে সেখান থেকে ১০টা ৫৫ মিনিটে তাকে আসামির কাঠগড়ায় নেওয়া হয়।
সোমবার রাত ৮টার দিকে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার (ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার-২) থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়।
এদিকে, এই রায় ঘিরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
সাক্ষ্য, জেরা ও উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়েছিল। অপেক্ষমাণ রাখার ১০৩ দিন পর এ মামলার রায় হলো।
এটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ১৫তম রায়। এরমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ৭টি মামলা এবং ট্রাইব্যুনাল-২ এ ৮টি রায় ঘোষণা করা হয়।
জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা চালিয়ে ১ হাজার ২২৫ ব্যক্তিকে হত্যা, চারজনকে খুন, ১৭ জনকে অপহরণ, একজনকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে আটক ও নির্যাতন এবং শতশত বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের মোট ছয়টি অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ-১, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২৭ মার্চের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাসানী (ন্যাপ) নেতা ও রংপুর শহরের বিশিষ্ট আয়কর আইনজীবী এওয়াই মাহফুজ আলীসহ ১১ জনকে অপহরণ, আটক, শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এরপর তাদের ৩ এপ্রিল রংপুর শহরের দখিগঞ্জ শ্মশানে নিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ-২, ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল আজহারের নিজ এলাকা রংপুরের বদরগঞ্জ থানার ধাপপাড়ায় ১৫ জন নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালিকে গুলি করে হত্যা, গণহত্যা, বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করেন।
অভিযোগ-৩, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল রংপুরের বদরগঞ্জের ঝাড়–য়ারবিল এলাকায় লুণ্ঠন ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং গণহত্যা চালিয়ে ১ হাজার ২শ’রও বেশি নিরীহ মানুষকে হত্যা করেন।
অভিযোগ-৪, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কারমাইকেল কলেজের চারজন অধ্যাপক ও এক অধ্যাপকের স্ত্রীকে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে অপহরণ করে দমদম ব্রিজের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।
অভিযোগ-৫, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে রংপুর শহর ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন বয়সের নারীদের ধরে এনে টাউন হলে আটক রেখে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করেন। একই সঙ্গে নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালিদের অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম, হত্যা ও গণহত্যা চালানো হয়।
অভিযোগ-৬, ১৯৭১ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রংপুর শহরের গুপ্তপাড়ায় এক ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। ১ ডিসেম্বর রংপুর শহরের বেতপট্টি থেকে একজনকে অপহরণ করে রংপুর কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে নিয়ে আটক রেখে নির্যাতন ও হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম করেন।

(ওএস/এইচআর/ডিসেম্বর ৩০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test