E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে কায়সারের আপিল

২০১৫ জানুয়ারি ১৯ ১৪:২২:৫৫
নিজেকে নির্দোষ দাবি করে কায়সারের আপিল

স্টাফ রিপোর্টার : সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার। তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে দেওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর রায়ের বিরুদ্ধে সোমবার এ আপিল করেন তিনি।

রায় বাতিলের পক্ষে মোট ৫৬টি কারণ দেখিয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিলটি (নং: ০৪/২০১৫) দায়ের করেন কায়সারের আইনজীবীরা। এতে কায়সারকে নির্দোষ দাবি করে ফাঁসির সাজা বাতিল ও বেকসুর খালাসের আরজি জানানো হয়েছে।

আপিল মামলাটির অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হয়েছেন জয়নাল আবেদিন তুহিন। কায়সারের পক্ষে শুনানিতে নেতৃত্ব দেবেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ ‍গঠন করে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের দায়ে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর কায়সারকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহীনুর ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২। হবিগঞ্জ মহকুমার এ রাজাকার কমান্ডারের বিরুদ্ধে আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, মুক্তিপণ আদায়, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন এবং ষড়যন্ত্রের ১৪টিই প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সর্বোচ্চ এ দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর ৩(২)(এ), ৩(২)(সি), ৩(২)(জি), ৩(২)(আই), ২০ (২) এবং ৪(১) ধারা অনুসারে কায়সারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে ছিল ১৫২ জনকে হত্যা-গণহত্যা, ২ নারীকে ধর্ষণ, ৫ জনকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় এবং দুই শতাধিক বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের অভিযোগ।

এগুলোর মধ্যে রায়ে প্রমাণিত হয়েছে ৪ ও ১৫ নম্বর বাদে সবগুলো অভিযোগ। প্রমাণিত ১৪ অভিযোগের মধ্যে ৭টিতে অর্থাৎ ৩, ৫, ৬, ৮, ১০, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির আদেশ পেয়েছেন কায়সার। ৪টি অর্থাৎ ১, ৯, ১৩ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে তাকে দেওয়া হয়েছে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ। এছাড়া ২ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর, ৭ নম্বর অভিযোগে ৭ বছর এবং ১১ নম্বর অভিযোগে ৫ বছর মিলিয়ে আরও ২২ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে তাকে। প্রমাণিত না হওয়া ৪ ও ১৫ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন কায়সার।

রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, একাত্তরে সৈয়দ কায়সার প্রথমে হবিগঞ্জ মহকুমা শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ৫০০/৭০০ স্বাধীনতাবিরোধী লোক নিয়ে নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ নামে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করার জন্য একটি সহযোগী বাহিনী গঠন করেন। তিনি নিজে ওই বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ‘কায়সার বাহিনী’ নামাঙ্কিত এ বাহিনীর নিজস্ব ইউনিফরমও ছিল।

কায়সার এ বাহিনীর মাধ্যমে তিনি হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বৃহত্তর কুমিল্লায় হত্যা, গণহত্যা, মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, ধর্ষণ, হামলা, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান। তিনি পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রামে নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের লোক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ চালান।

রায়ের পর্যবেক্ষণে কায়সার বাহিনীকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী বাহিনী বা অক্সিলারি ফোর্স না বললেও ট্রাইব্যুনাল বলেন, এ বাহিনী ও সৈয়দ কায়সার ভিক্টিম ও অপরাধ সংঘটনস্থল এলাকাগুলোর মানুষের কাছে ঘৃণিত হয়ে থাকবে।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ১৯,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test