E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রবিবার ডা. জাফরুল্লাহ’র আদেশ

২০১৫ জুলাই ০৭ ১৩:১৬:৫৭
রবিবার ডা. জাফরুল্লাহ’র আদেশ

স্টাফ রিপোর্টার : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনতে তিন মুক্তিযোদ্ধাসহ পাঁচজনের আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী রবিবার এ বিষয়ে আদেশ দেবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

ট্রাইব্যুনাল-২ এর তিন বিচারককে ‘মানসিক অসুস্থ’ বলাসহ ঔদ্ধত্যপূর্ণ নানা কটূক্তি করায় সোমবার এ আবেদন জানান স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল, মুক্তিযোদ্ধা আলী আসগর, মুক্তিযোদ্ধা শেখ নজরুল ইসলাম এবং গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের আহবায়ক কামাল পাশা চৌধুরী ও কর্মী এফ এম শাহীন। তাদের পক্ষে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আবেদনটি দাখিল করেন তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামিম আজিজ।

মঙ্গলবার এ আবেদনের সপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামিম আজিজ ও আবেদনকারী মনোরঞ্জন ঘোষাল।

শুনানি শেষে এ অভিযোগ আনার বিষয়ে আগামী রোববার আদেশের দিন ধার্য করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

শুনানিতে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিলকারীদের পক্ষে মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, তিনজন বিচারক ও বিচারালয় সম্পর্কে তিনি যেসব মন্তব্য করেছেন, তাতে আদালতকে অবমাননা করা হয়। এটি আদালতের সম্মান ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে।

ব্রিটিশ নাগরিক ও সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনালের সাজার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ায় গত ১০ জুন আদালত অবমাননার দায়ে ডা. জাফরুল্লাহকে এক ঘণ্টার কারাদণ্ড (এজলাসকক্ষে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা) এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে একমাসের কারাদণ্ড সাজা দেন ট্রাইব্যুনাল-২।

কিন্তু অনেকের অনুরোধ ও জোরাজুরিতে আসামির কাঠগড়ায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার দণ্ড ভোগ করলেও জরিমানা দেবেন না জানিয়ে আদালতের ভেতরে-বাইরে নানাভাবে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেন ডা. জাফরুল্লাহ।

ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার পর কাঠগড়ায় উঠতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দীর্ঘ এক ঘণ্টা ২৫ মিনিট ধরে এজলাসে বাকবিতণ্ডা, ট্রাইব্যুনাল ও বিচারপতিদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন তিনি। বিচারপতিদের তিনি বলেন, আপনারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ আদেশ দিয়েছেন। এটি সম্পূর্ণ অন্যায়। বিচারকরা এজলাস ত্যাগ করার পরও উচ্চকণ্ঠে তিনি বলতে থাকেন, এটা বিচারকদের অসহিষ্ণুতার লক্ষণ।

সাজা ভোগ করে বাইরে বের হয়ে আদালত অবমাননার রায়কে তিনজন বিচারকের মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ বলেও কটূক্তি করেন ডা. জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, এখানে বিচারপতিরা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। যেখানে তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, সেখানে ন্যায়বিচার হয় না।

যখন তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, তখন যুক্তি থাকে না বলেই আইনের আড়ালে আত্মগোপন করেন। এই আদালত অবমাননার একটি বিষয় আছে। সেখানে তিনটির একটি বিষয় প্রমাণ করতে হয়। আদালতের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, বিচারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, আদালতের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করা।

জাফরুল্লাহ বলেন, বিচারপতিরা আদেশের কোথাও সুস্পষ্টভাবে বলেননি, কোন জায়গাতে আমরা বা বিশেষ করে আমি এই তিনটি বিষয় ভঙ্গ করেছি। তাদের যুক্তি নাই বলেই তিন বিচারপতি উষ্মা প্রকাশ করেছেন এ মামলার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত। পৃথিবীর মধ্যে এটা অভদ্রতাজনিত ব্যবহার।

রায়টা অত্যন্ত অবিবেচনাপ্রসূত দাবি করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, সম্পূর্ণ রায়টাই তারা পড়েছেন উষ্মা ও রাগ নিয়ে।

আদেশের সময় এজলাসকক্ষে অভিযুক্তদের দাঁড় করিয়ে রাখাটা অভদ্রতা মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ বলেন, যখন রায় পড়েন তখন সকল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে রাখা অর্থহীন। এটা প্রাগৈতিহাসিক, মধ্যযুগের ঘটনা। কিন্তু তারা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। তারপর বলেছেন বয়স। কিন্তু বয়সের সম্মান আমি তাদের কাছে কামনা করিনি।

যুক্তি না থাকলে হঠাৎ একজনকে খুঁজে বের করা হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, আমি কোনো জরিমানা দেবো না। আপিল করবো। আপিলে যা হয় তা পরে দেখা যাবে। আমি কোথাও ভুল করিনি। সমালোচনা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার।

এরপর যদি দেখা যায়, উচ্চ আদালতে আমার বিরুদ্ধে দেওয়া রায়টা যদি ভুল হয় তাহলে তারা কি আমার এই জীবনের সময়টা ফিরিয়ে দিতে পারবেন? তাহলে কি তিনজন বিচারপতি আমার এই জায়গায় এসে বসে থাকবেন এক ঘণ্টা? বলেও মন্তব্য করেন জাফরুল্লাহ।

এদিকে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আবেদনে তাকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ গত ১৬ জুন স্থগিত রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত। একই সঙ্গে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন আবেদনটি। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে এ আবেদন শুনানির জন্য অপেক্ষমান রয়েছে।

এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আদালত অবমাননার অভিযোগ এলো ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

(ওএস/এএস/জুলাই ০৭, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test