E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বুধবার নিজামীর চূড়ান্ত রায়

২০১৬ জানুয়ারি ০৫ ১৪:১০:০৩
বুধবার নিজামীর চূড়ান্ত রায়

স্টাফ রিপোর্টার : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর আপিল মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বুধবার।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ উভয়পক্ষের শুনানি শেষে গত ৮ ডিসেম্বর নিজামীর আপিল মামলার রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করে আদেশ দেয়।

বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন নিজামীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

এ আপিলের শুনানি গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে চলে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত। পরে ৩০ নভেম্বর নিজামীর আপিলের যুক্তিতর্ক শুরু করে ২ ডিসেম্বর আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক পেশ শেষ করে। ট্রাইব্যুনালে নিজামীর বিরুদ্ধে প্রমাণিত আটটি অভিযোগে সাক্ষ্য-প্রমাণ বিষয়ে তিন কার্যদিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে আসামিপক্ষ। এর বিপরীতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এর আগে আপিল বিভাগ এক আদেশে ৩০ নভেম্বর, ১ ও ২ ডিসেম্বর আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ধার্য করে দেয়। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ৭ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। এরপর যুক্তিখণ্ডনের জন্য ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করে দেয়া হয়। আপিল মামলাটির শুনানির শুরুতে গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ কার্যদিবস মামলার পেপার বুক উপস্থাপন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড সীমাহীন অপরাধ বলে উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসিই এ অপরাধের একমাত্র সাজা। ফাঁসি ছাড়া এর অন্য কোনো বিকল্প সাজা নেই। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে সব মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় দিয়েছে তা যেন বহাল থাকে এর স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন তিনি।

নিজামীর বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ৮টি অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে।

প্রমাণিত চারটি অর্থাৎ সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দু’টি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে গণহত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ (২ নম্বর অভিযোগ), করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (৪ নম্বর অভিযোগ), ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (১৬ নম্বর অভিযোগ) দায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়।

অন্য চারটি অর্থাৎ পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন হত্যা (১ নম্বর অভিযোগ), মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র (৩ নম্বর অভিযোগ), বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী হত্যা (৭ নম্বর অভিযোগ) এবং রুমী, বদি, জালালসহ সাত গেরিলা যোদ্ধা হত্যার প্ররোচনার (৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ৫ ও ৯ থেকে ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি।

নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর আপিল দায়ের করেন তিনি। ৬ হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট পেশ করে তাতে ১৬৮টি কারণ উল্লেখ করে দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন এ আপিলটি দাখিল করেন। ১২১ পৃষ্ঠায় মূল আপিল আবেদনের সঙ্গে ৬ হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার নথিপত্র দাখিল করা হয়েছে। মূল আপিলে ১৬৮ টি গ্রাউন্ড পেশ করে দণ্ড থেকে খালাস চাওয়া হয়েছে।

নিজামীর মামলাটির মাধ্যমে সর্বোচ্চ আদালতে চূড়ান্ত রায় হতে যাচ্ছে ৬ষ্ঠ আপিল মামলার। ট্রাইব্যুনাল থেকে আপিল বিভাগে আসা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে এর আগে ৫ জনের মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে।

এর মধ্যে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আর গত বছরের ১১ এপ্রিল জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং ২১ নভেম্বর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।

আপিল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তবে সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশ হলেও এখনও রিভিউ নিষ্পত্তি হয়নি।

এছাড়া শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যুবরণ করায় আপিলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ০৫, ২০১৬)


পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test