E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাগীব আলী ও তার ছেলের ১৪ বছরের কারাদণ্ড

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ০২ ১৫:৫১:৩০
রাগীব আলী ও তার ছেলের ১৪ বছরের কারাদণ্ড

সিলেট প্রতিনিধি : সিলেটে বহুল আলোচিত শিল্পপতি রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইকে পৃথক চারটি ধারায় মোট ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বুধবার বিকেল ৩টা ০৫ মিনিটে আলোচিত এই মামলার রায় দেন সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরু।

দণ্ডাদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। দণ্ডিত রাগীব আলী আঞ্চলিক দৈনিক সিলেটের ডাকের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ও তার ছেলে আবদুল হাই ওই পত্রিকার সম্পাদক।

তারা গ্রেফতার হওয়ার পর পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন তার ভাতিজা আবদুল হান্নান।

এর আগে, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৩ মিনিটে পুলিশ ভ্যানে রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরুর আদালতে হাজির করা হয়।

আদালতের অতিরিক্ত পিপি মাহফুজুর রহমান রায়ের পর সাংবাদিকদের জানান, এ মামলায় পাঁচটি ধারায় দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল।

এর মধ‌্যে ৪৬৬ ধারায় ৬ বছর, ৪৬৮ ধারায় ৬ বছর, ৪৭১ ধারায় ১ বছর এবং ৪২০ ধারায় ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। এ সময় রাগীব আলী ও তার ছেলে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর সিলেটের ধর্ন‌াঢ‌্য এই ব‌্যক্তি ও তার ছেলে পালিয়ে ভারতে চলে যান। পরে গতবছরের শেষ দিকে তাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হয়।

এদিকে, তারাপুর চা বাগান নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর ১৯৯৯ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।

২০০৫ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতি এবং সরকারের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা করে।

এর বিরুদ্ধে রাগীব আলী উচ্চ আদালতে গেলে দীর্ঘদিন পর চলতি বছরের শুরুতে তার নিষ্পত্তি হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ গত ১৯ জানুয়ারি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে মামলা পুনরায় চালুর নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে তারাপুর চা-বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়।

এই আদেশের পর ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়াও ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।

মামলা হওয়ার ১১ বছর পর সিলেটে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত সুপার সারোয়ার জাহান গত ১০ জুলাই ওই দুই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

এর মধ‌্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলেকে আসামি করা হয়। আর প্রতারণা মামলায় রাগীব আলী, তারাপুর চা-বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত, রাগীব আলীর আত্মীয় মৌলভীবাজারের রাজনগরের বাসিন্দা দেওয়ান মোস্তাক মজিদ, রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাই, জামাতা আবদুল কাদির ও মেয়ে রুজিনা কাদিরকে আসামি করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা তারাপুর চা-বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। ১৯৯০ সালে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে বাগানটির দখল নেন রাগীব আলী।

দুই মামলায় গত ১০ আগস্ট রাগীব আলী ও তার একমাত্র ছেলে আবদুল হাইসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে সিলেটের আদালত। ওই দিনই জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যান তিনি।

গতবছর ১২ নভেম্বর ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার পথে রাগীব আলীর ছেলে আব্দুল হাইকে গ্রেপ্তার করে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশ। ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় লুকিয়ে দেশে ফেরার চেষ্টার ২৪ নভেম্বর ভারতে গ্রেফতার হন রাগীব আলী। ওই দিনই তাকে দেশে এনে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর অভিযোগ গঠনের মধ‌্য দিয়ে বিচার শুরু হয়।

(ওএস/এএস/ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test