E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কারাগারে আরাম-আয়েশে কাটছে নুর হোসেনের দিন

২০১৭ আগস্ট ১৯ ১৩:৫৫:৫৯
কারাগারে আরাম-আয়েশে কাটছে নুর হোসেনের দিন

স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নুর হোসেনসহ তিন আসামি কাশিমপুর কারাগারে রয়েছে। এর মধ্যে দুর্ধর্ষ খুনি নুর হোসেনের দিন কাটছে আরাম-আয়েশের মধ্যেই। যদিও কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করছে নুর হোসেনসহ অন্যান্য যে আসামি রয়েছে তারা প্রত্যেকেই কঠোর নজরদারি ও কারা নিয়মের মধ্যে রয়েছে।

কাশিমপুর কারাগার-২ এর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জেলকোডের ধারা মোতাবেক আদালত থেকে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করা হলে তাকে কারাগারে নেয়ার পর ফাঁসির সেলে রাখার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ নুর হোসেনকে কনডেম সেলের পরিবর্তে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও দাগী আসামিদের সাথে রাখার ব্যবস্থা করেছে।

কারাগারের এক কর্মকর্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, কাশিমপুর কারাগারে ফাঁসির আসামিদের রাখার জন্য চারটি ভবন রয়েছে। প্রতিটি ভবনে রয়েছে ১০টি করে সেল। চারটি ভবনে মোট ৪০টি সেল থাকায় এই ভবনগুলোর নামকরণ করা হয় ‘৪০ সেল’। কারাগারের সাক্ষাৎ কক্ষের উল্টো দিকের দক্ষিণ-পূর্বে এই সেলগুলোর অবস্থান। এই সেলের যেকোনো একটিতে নুর হোসেনকে রাখার নিয়ম থাকলেও কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ৬০ সেলের একটি কক্ষে রাখার ব্যবস্থা করেছে। ওই সেলগুলোর নিচতলায় নুর হোসেন অবস্থান করলেও পাশের সেলগুলোতে রয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল, কিলার আব্বাসসহ দুর্ধর্ষ সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা। তবে নুর হোসেন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কারাগারের সামনের বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করে ও স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ করছে। এর মধ্যে টাকা দিয়ে কারা ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে খেতে পারছে।

গতকাল বিকেলে কাশিমপুর কারাগারের জেল সুপার প্রশান্তকুমার বণিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার কারাগারে বর্তমানে আলোচিত সাত খুন মামলার তিন আসামি আছে। এর মধ্যে লে.কর্নেল তারেক সাঈদ, নুর হোসেন ও বেলাল হোসেন। এ ছাড়া ১ নম্বর কারাগার ও হাইসিকিউরিটি কারাগারেও কয়েক আসামি আছে।

আপনার কারাগারে ৬০ সেল নামে কোনো সেল কি আছে? ওই সেলে কি ফাঁসির আসামি নুর হোসেনকে রাখা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কনডেম সেলে রুম ছিল ৪০টি। পরে এখানে ফাঁসির আসামি বেড়ে ১৪০ জনে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের কারাগারে যত সেল আছে সব সেলই একই রকম। সেলগুলোর গঠন কাঠামোও সব এক। ফাঁসির সেল আর ৬০ সেলের গঠন একই রকমের। কিন্তু ৪০টি সেলে ১৪০ জন বন্দীকে রাখা অত্যন্ত দুর্বিষহ ব্যাপার। পরে এই বিল্ডিংগুলো (৬০ সেল) আমরা কনডেম সেল ঘোষণা করি। এখানের একটি সেলে নুর হোসেনসহ ফাঁসির আসামিদের রাখার ব্যবস্থা করি।
অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৬০ সেলের ১৫টি রুমকে আমরা কনডেম সেল ঘোষণা করেছি। সেখানে প্রতি রুমে দুইজন করে মোট ৩০ জন ফাঁসির আসামিকে রাখার ব্যবস্থা করেছি।

এই ৬০ সেলে শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও অবস্থান করছে। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা তো উপরের সেলে আছে। কত দিন আগে ৬০ সেলকে কনডেম সেল ঘোষণা করেছেন- জানতে চাইলে জেল সুপার প্রশান্তকুমার বণিক বলেন, এটা ঘোষণার তো বিষয় না। এটা কারা কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা আর কি।

তিনি দাবি করেন, ফাঁসির আসামি নুর হোসেনসহ অন্য আসামিদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়েছে। ফাঁসির আসামিদের যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে মোট ৪০টি রুম থাকায় নাম হয়েছে ৪০ সেল। একইভাবে ৬০টি সেল থাকায় সেটির নাম দেয়া হয়েছে ৬০ সেল। এখন যিনি ৬০ সেল সম্পর্কে তথ্য দিলেন তাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কোন উদ্দেশ্যে এটা বলছেন।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, নুর হোসেন এখন যে কনডেম সেলে আছে সেটা ফাঁসির সেল। ধরেন কালকে তার ফাঁসি হয়ে গেল। এরপর আমি ওই ফাঁকা সেলে একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে রাখলাম। তখন কিন্তু আর এটা কনডেম সেল থাকবে না। জেলকোডে একজন ফাঁসির আসামির যে নিয়মে থাকার কথা নুর হোসেন ওই নিয়মের মধ্যেই আছে। ৬০ সেল মানে যে ফাঁসির সেল না- এই কথাটা মনে হয় সঠিক নয় বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, বর্তমানে কাশিমপুর-২ কারাগারে দুই হাজার ১০০ আসামি অবস্থান করছে। এই কারাগারটির পরিবেশ সুন্দর ও গোছানো। তবে এই কারাগারে বন্দীদের নিয়ে দেখা সাক্ষাৎ, জামিনে মুক্তি পাওয়াসহ অনেক ধরনের বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের তিন দিন পর তাদের লাশ উদ্ধার হয় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে।

ওই ঘটনায় নিহত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দনকুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম। সাত খুনের ঘটনায় প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার চার সহকর্মী হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদি হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় জামাতা বিজয়কুমার পাল বাদি হয়ে একই থানায় আরেকটি মামলা করেন। দুটি মামলার বিচারিক কার্যক্রম এক সঙ্গে শেষ করে রায় দেন বিচারিক আদালত।

মামলার প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও র্যাবের বরখাস্তকৃত তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। সাজাপ্রাপ্ত ৩৫ আসামির মধ্যে ১২ জন পলাতক রয়েছে। গ্রেফতারকৃত ২৩ জনের মধ্যে ১৮ জনকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার ও গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-২ এ আছে তিনজন এবং কাশিমপুর ১ নম্বর কারাগার ও হাইসিকিউরিটি কারাগারে দুইজন আছে বলে জানা গেছে।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ১৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test