E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভারতে শৌচাগার ব্যবহারে এত অনীহা কেন! 

২০১৮ এপ্রিল ২০ ১৩:২৭:৩৩
ভারতে শৌচাগার ব্যবহারে এত অনীহা কেন! 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত কয়েক বছরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সরকারি উদ্যোগে কয়েক কোটি শৌচাগার নির্মাণ করা হলেও এখনও দেশটির বেশিরভাগ মানুষ খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করছে। বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও তাদের শৌচাগারমুখী করা যাচ্ছে না।

ভারতের অন্যতম বৃহৎ রাজ্য মহারাষ্ট্রে সরকার ঘোষণা করেছে- রাজ্যে কাউকে আর খোলা আকাশের নিচে মল-মূত্র ত্যাগ করতে হবে না। কারণ গোটা রাজ্যে সবার হাতের নাগালে শৌচাগার বানানোর কাজ শেষ হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাডনবিশ জানিয়েছেন, গত সাড়ে তিন বছরে মহারাষ্ট্রে অন্তত ৫৫ লক্ষ নতুন শৌচাগার বানানো হয়েছে।

মহারাষ্ট্রের মতো ভারতে অনেক রাজ্যই গত কয়েক মাসে নিজেদের 'ওপেন ডিফেকেশেন ফ্রি' বা ওডিএফ বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বহু জায়গাতেই শৌচাগার যাওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ভারতীয়রা এখনও কিন্তু উন্মুক্ত জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করতেই বেশি পছন্দ করছেন।

কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? কেন শৌচাগার বানানোর পরও মানুষ সেখানে যেতে চাইছেন না?

ভারতে নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর যে 'স্বচ্ছ ভারত অভিযান' শুরু হয়েছিল, তার আওতায় দেশ জুড়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েক কোটি শৌচাগার তৈরি হয়েছে। কিন্তু তারপরও ভারতীয়দের উন্মুক্ত জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করার অভ্যাস পুরোপুরি পাল্টানো যায়নি।

কেন তারা শৌচাগারে যাচ্ছেন না, এ প্রশ্নের জবাবে অনেকেই বলেছেন- দেয়ালে ঘেরা বদ্ধ জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করতে তাদের ভাল লাগে না। গরম লাগে, গ্যাসে-দুর্গন্ধে নাকি বমি-বমি পায়।

গ্রামীণ নারীদের অনেকের আবার বলেছেন পানির অভাবের কথা।

উত্তরপ্রদেশের এক নারী বলেন, ‘ক্ষেতে গেলে এক লোটা পই কাজ সারা যায়- কিন্তু শৌচাগারে গেলে লাগে পুরো এক বালতি পানি। এলাকায় পানির এত সমস্যা যে শৌচের জন্য এত পানি খরচ করা যায় না। কাজেই ভোরবেলায় কেউ ওঠার আগে আমি মায়ের সঙ্গে গিয়ে ক্ষেতেই কাজ সেরে আসি।’

গ্রামীণ স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করেছেন সুস্নাত চৌধুরী, তিনিও বলছিলেন- একটা শৌচাগার বানানোর পর তার প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ অনেক সময়ই থাকে না। আর সেটাই মানুষকে শৌচাগার থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। আমি শৌচাগার নামে একটা ঘর তাকে বানিয়ে দিলাম। কিন্তু সেই ঘরটা পুরোদস্তুর ব্যবহারযোগ্য থাকার জন্য আর যে সুবিধাগুলো দরকার মানে ধরুন নর্দমা, পানির, জীবাণুনাশক ইত্যাদি- সেগুলো কি সেখানে আদৌ থাকছে?

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গ্রামে গ্রামে এখন ভোররাতে স্বেচ্ছাসেবীদের টহলও শুরু হয়েছে, শৌচাগার থাকা সত্ত্বেও যারা ক্ষেতে যাচ্ছেন তাদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নিরস্ত করাই এদের কাজ। চেষ্টা হচ্ছে কিছুটা লজ্জায় ফেলারও।

বিহারে এমনই একজন স্বেচ্ছাসেবী জানান, আমরা তাদের বলি যখন তোমার বউ-মেয়ে লোটা নিয়ে সকালে ক্ষেতে যায় তখন তার শরীরের এমন সব অংশ গোটা গ্রাম দেখতে পায়, যা স্বামী ছাড়া কারুর দেখার কথাই নয়। তখন তোমাদের লজ্জা-শরম কোথায় যায়?

শৌচাগার আন্দোলনে যুক্ত ভারতের বৃহত্তম এনজিও সুলভ ইন্টারন্যাশনাল অবশ্য মনে করে, ভারতের আবহমান সংস্কৃতি যেহেতু বলে শৌচের কাজ বসতবাড়ি থেকে দূরে হওয়া উচিত তাই বাড়ির ভেতরে বা লাগোয়া শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাস তৈরি হতে আরও সময় লাগবে।

পানি বা পরিচ্ছন্নতার সমস্যা দূর করতে সেই সঙ্গে লাগবে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও।

সুলভের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা মদন ঝা বলেন, ‘এত বড় দেশে পাইপ দিয়ে সব জায়গায় পানির সরবরাহ অসম্ভব, তাই আমরা সুলভ মডেলের শৌচাগারে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করি যাতে প্রতিবার ব্যবহারের পর মাত্র এক লিটার পানিতেই ফ্লাশ করা সম্ভব। আর যেহেতু ভারতে অনেক শহরেও সিওয়ার নেই, তাই মল পরিশোধনের জন্য আমরা ব্যবহার করি টু-পিট সিস্টেম। এক একটা পিট এক এক বছরে ব্যবহার হয়, অন্যটা ততদিনে সারে পরিণত হয়। এই পদ্ধতি এখন ভারত সরকারও অনুসরণ করছে।’

ফলে মহারাষ্ট্রের মতো অনেক রাজ্যই সারা দেশে হয়তো লক্ষ লক্ষ শৌচাগার বানিয়ে ফেলেছে, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সেগুলোকে পরিচ্ছন্ন রেখে মানুষকে সেখানে নিয়ে যাওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test