E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

না খেয়ে থাকাই জামার্নির চিকিৎসা

২০১৪ এপ্রিল ১৪ ১১:১৬:১৪
না খেয়ে থাকাই জামার্নির চিকিৎসা

আন্তজার্তি ডেস্ক : না খেয়ে না থাকলে রোগ ভালো হয়। তাই যত পারুন না খেয়ে থাকুন। ডাক্তারের কাছ থেকে রোগী এমন কথা শুনলে হয়তো ভাববে ব্যাটা নিশ্চয়ই ‘সবদার ডাক্তার’। ডাক্তারির মাথামুণ্ডু কিছুই জানে না। না খেয়ে থেকে শেষে মরবো নাকি! যাদের ঘরে খাবার নেই তারা না খেয়ে থাকুক। রোগ হলে বরং একটু ভালো মন্দ খাওয়া চাই।

আপনার এমন ধারণার সঙ্গে মোটেও একমত নন জামার্নির বাসিন্দারা। তারা অসুখ-বিসুখে বরং উপোস থাকে। এটি তাদের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি। যার নাম ‘উপোস চিকিৎসা।’ অসুখ যেমন উপোসও হবে তেমন। এই ধরুণ জ্বর হলে এক বেলা না খেয়ে থাকা। বদহজম হলে পুরো দিনটাতে পেটে একফোটাও দানা-পানি দেয়া যাবে না।

জ্বর,বদহজম হলেই যে উপোস চিকিৎসা নিতে হবে এমনটা নয়। শ্বাসকষ্ট, বাত-ব্যথা এমনকি বিসন্নতায় ভুগলেও চিকিৎসা একটাই। উপোস থাকো।

উপোস চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে তাঁদের জন্য গড়ে উঠেছে বহু ক্লিনিক। রোগীকে যত্নআত্তি করে ভালো-মন্দ খাওয়ানোর বদলে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়। যাতে করে রোগী আড়ালে-আবডালে গিয়ে এটা সেটা খেতে না পারেন। শুধু তাই নয় জামার্নিতে উপোস বীমাও চালু আছে। ব্যাপারটা হাস্যকর হলেও সত্যি।

দিন দিন হাতির মতো মুটিয়ে যাচ্ছেন জার্মানির মিউনিখের ৫৭ বছর বয়সি মিশায়েল ফান আল্মজিক। মোটার ধাত থেকে রেহাই পেতে মিশায়েল বছরের একটি মাস হাসপাতালে কাটান। হাসপাতালটি সুইজারল্যান্ড সীমান্তের লেক কনস্ট্যান্সের তীরে। বুখিংগার-ভিলহেল্মি নামের এই ক্লিনিকে তিনি উপোস চিকিৎসা নেন। আর এই পদ্ধতিটা তিনি দুই দশক ধরে করে আসছেন।

ওই একমাস তাঁর দিন শুরু হয় কেবল এক কাপ হারবাল চা দিয়ে৷ দুপুরে শুধুমাত্র ফলের রস৷ বিকালে দুই ঘণ্টা হাঁটার পর নৈশভোজে পাতলা ঝোল আর একটুখানি মধু৷ আর হ্যাঁ, এই খাবার হজম করতে তিনি সারাদিনে পান করেন কম করে হলেও দুই লিটার পানি৷

মিশায়েল মিউনিখে একটি পিআর ফার্ম চালান৷ এই ক্লিনিকে তিনি প্রথম এসেছিলেন মুটিয়ে যাওয়া নিজে থেকে ঠেকাতে না পেরে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, বছরে একমাস প্রায় অভুক্ত থেকে কী উপকার হচ্ছে? মুচকি হেসে মিশায়েলের উত্তর, ‘‘এক সপ্তাহ করে দেখুন, মাত্র একটা সপ্তাহ, নিজেই বুঝতে পারবেন৷''

শুধুমাত্র মুটিয়ে যাওয়ার জন্য জামার্নিরা উপোস চিকিৎসা নেন এমন নয়। হাইপারটনশনের চিকিৎসা চলে ক্লিনিকে৷ এ ধরনের রোগীদের দিনে ২০০ থেকে ২৫০ ক্যালরির বেশি খাওয়া মানা৷ একজন মধ্যবয়সি ব্যক্তিকে সাধারণত দিনে যে পরিমাণ খাবার খেতে বলা হয়, হাইপারটনশনে খেতে হবে তাঁর এক দশমাংশ৷

ভাবছেন হাসপাতালে উপোস থাকলে বুঝি খরচ অনেক কমে যাবে। কিন্তু না উপোস থাকতেই গুনতে হবে অনেক ইউরো। এ ধরনের একটি ক্লিনিকের মোটামুটি একটি ঘরে ১০ দিন থাকলে গুণতে হয় প্রায় আড়াই হাজার ইউরো৷ বেশি সুযোগ সুবিধা চাইলে খরচও বাড়ে৷

নয়নাভিরাম লেক কনস্ট্যান্সের তীরে যার নামে বুখিংগার-ভিলহেল্মি ক্লিনিক, সেই ওটো বুখিংগার উপসোর পথ বেছে নিয়েছিলেন গেঁটে বাত থেকে রেহাই পাওয়ার আশায়৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৭ সালে ওই রোগেই তাঁকে নৌ-বাহিনীর চিকিৎসকের চাকরি ছাড়তে হয়েছিল৷ প্রায় একশ বছর পর তাঁর সেই ‘উপোস চিকিৎসা' পুরো জার্মানিতেই এখন দারুণ জনপ্রিয়৷

স্পেনের মারবেলা এলাকার উবেরলিংগেন ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফ্রাঁসোয়া ভিলহেল্মি দে টলেডোর দাবি, উপোস মানবদেহের ‘নিজস্ব সঞ্জীবনী শক্তিকে' জাগিয়ে তোলে৷

এই ক্লিনিকের প্রধান চিকিৎসক স্তেফান দ্রিনদা জানান, মারবেলায় তাদের শাখাটি চলছে গত ৪০ বছর ধরে৷ প্রতি বছর তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার রোগী পাচ্ছেন তারা৷ এর মানে হলো, এ পর্যন্ত আড়াই লাখ রোগীকে ‘উপোস চিকিৎসা' দিয়েছে উবেরলিংগেন ক্লিনিক৷

জার্মানিতে এ পদ্ধতির জনপ্রিয়তার কারণে প্রভাবশালী সাপ্তাহিক ‘ডের স্পিগেল' ২০১১ সালে একটি সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করে উপোস চিকিৎসা নিয়ে৷ ওই প্রতিবেদনে উবেরলিংগেন ক্লিনিকের সাবেক কর্মী হেলমুট ল্যুয়েৎসনারের লেখা উপোস বিষয়ক একটি বইয়ের কথা বলা হয়, যেটি সেই ১৯৭০ এর দশকে ২০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছিল৷

এসেন, ইয়েনা ও বার্লিনের মতো শহরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে উপোস নিয়ে গবেষণা হয়, এমনকি এ চিকিৎসা পদ্ধতির প্রশিক্ষণও দেয়া হয়৷

এত জনপ্রিয়তার পরও বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী হলো – উপোস যদি করতেই হয়, তা অবশ্যই কোনো চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করা উচিত৷ এছাড়া স্বাস্থ্যে কতেটা পরিবর্তন এলো – তাও পরীক্ষা করাতে হবে নিয়মিত৷


(ওএস/এটি/ এপ্রিল ১৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test