E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ব্রাজিল দিয়ে মোদির বহুপাক্ষিক কূটনীতির পরীক্ষা শুরু

২০১৪ জুলাই ১৫ ১২:৪০:৫৫
ব্রাজিল দিয়ে মোদির বহুপাক্ষিক কূটনীতির পরীক্ষা শুরু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  ব্রাজিলে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলন৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এটাই হবে প্রথম বহুপাক্ষিক সমন্বয়ের কূটনীতির পরীক্ষা৷ বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা দেবেন তিনি৷

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি তার বিদেশ নীতির যাত্রা শুরু করেছিলেন গত ২৬ মে, নিজের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সার্কভুক্ত সাতটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে এবং তাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলাপ আলোচনায় মিলিত হয়ে৷ এবার বিদেশের মাটিতে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে তিনি একই মঞ্চে মিলিত হচ্ছেন স্বাগতিক দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে। এটাই হবে মোদির প্রথম বিদেশ নীতির গুরুত্বপূর্ণ পাঠ৷ তার কূটনৈতিক অ্যাজেন্ডার মধ্যে আছে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার পাশাপাশি ব্রিকস দেশগুলির উন্নয়ন ব্যাংকের প্রকৃত বাস্তবায়ন৷
শীর্ষ সম্মেলনের পার্শ্ব বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদি মিলিত হবেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ডিলমা রুসেফ, চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার সঙ্গে৷ শুধু তাই নয় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে উপস্থিত থাকছেন ল্যাটিন আমেরিকার ১১টি দেশের সরকার প্রধানরা৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বিশ্ব অর্থনীতিতে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো ভারতের অর্থনৈতিক সহযোগিতার এক উদীয়মান চারণভূমি৷ প্রধানমন্ত্রী মোদি সেই সুযোগ ও সম্ভাবনাকে কতদূর কাজে লাগাতে সক্ষম হবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়৷
ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় যেহেতু ‘সার্বিক প্রবৃদ্ধি ও ধারাবাহিক উন্নয়ন' তাই মোদির অ্যাজেন্ডায় অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে নতুন ব্রিকস উন্নয়ন ব্যাংকের প্রকৃত বাস্তবায়নের ওপর, যার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে দিল্লি ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে। গত বছর ডারবানে তা অনুমোদিত হয়৷ শুরুতে অনুমোদিত মূলধন হবে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, পরে বাড়িয়ে তা করা হবে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ এই পাঁচটি দেশের জনসংখ্যা বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ৷ অথচ বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলো থেকে ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত৷ তাই এইসব আর্থিক সংস্থাগুলির সংস্কারের পাশাপাশি ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের দাবিও জানাবে আবার জোরেশোরে, এমনটাই মনে করছেন কূটনৈতিক মহল৷
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মিলিত হয়ে মোদি সরকারের চীন-নীতির কোন কোন দিক তুলে ধরবেন? মোদি তুলে ধরতে পারেন চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার পরিসর বাড়াতে ভারতের আগ্রহের কথা৷ চীনের বিনিয়োগ বাড়াতে প্রস্তাব দিতে পারেন ভারতে ‘চীনা শিল্পপার্ক' গড়ে তোলার৷ পাশাপাশি রয়েছে চীনের দিক থেকে ভারতের নিরাপত্তা ও স্ট্যাটিজিক প্রশ্ন। বারংবার ভারতীয় ভূখণ্ডে চীনা অনুপ্রেশের প্রশ্ন৷ মোদি নীতি হলো, সীমান্ত বিবাদের মতো জটিল সমস্যাগুলোর চূড়ান্ত সমাধান আপাতত শিকেয় তুলে হাতের কাছে যেসব সুযোগ রয়েছে তাকে কাজে লাগানো৷ দুদেশের ব্যবসা বাণিজ্যে একটা ভারসাম্য আনা৷
উল্লেখ্য, ভারত-চীন বাণিজ্যে চীন অনেক সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে৷ ভারত চীন থেকে আমদানি করে বেশি, রফতানি করে অপেক্ষাকৃত কম৷ এবছরের শেষের দিকে চীনের প্রেসিডেন্ট আসছেন ভারত সফরে৷
রাশিয়া ভারতের পুরানো বন্ধু হলেও সম্প্রতি তাতে কিছুটা ভাটা পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে, বিশেষ করে সমরাস্ত্র রফতানিকারক দেশ হিসেবে৷ চীনের আঞ্চলিক প্রতিপত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে উভয় দেশকেই দরকার ভারতের৷ তাই উভয় দেশের সম্পর্কে একটা ভারসাম্য বজায় রাখা হবে মোদীর বিদেশ নীতির আর একটা পরীক্ষা৷ রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে দুদেশের সহযোগিতার সম্পর্ক অটুট রাখার কথা বলবেন মোদি৷ উঠতে পারে বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতার ইস্যু৷
ব্রিকসের ভবিষ্যত সাফল্য সম্পর্কে সংশয় পোষণ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমন কল্যান লাহিড়ি বলেন, ব্রিকস দেশগুলির মধ্যে মতাদর্শগত অমিল যথেষ্ট৷ যেমন, ভারত ও চীনের অবস্থানে মিল নেই৷ ভারত যেভাবে আন্তঃআঞ্চলিক ধারণা গড়ে তুলতে চাইছে সেটা চীনের ধারণার সঙ্গে মেলে না৷ তাই এর ভবিষ্যত খুব উজ্জ্বল বলে মনে হয় না৷
(ওএস/এএস/জুলাই ১৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test