E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চাপে নয়, দুর্নীতি তদন্তের ভয়ে দেশ ছেড়েছেন সিনহা

২০১৮ অক্টোবর ০৩ ১৪:৪১:০৩
চাপে নয়, দুর্নীতি তদন্তের ভয়ে দেশ ছেড়েছেন সিনহা

স্টাফ রিপোর্টার : সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের চাপের মুখে দেশ ছাড়ার এবং পদত্যাগ করার যে দাবি করেছেন, সেটি সত্য নয় বলে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। বলেন, সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত শুরু করার কারণেই তিনি বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন।

বুধবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এসব কথা বলেন। গত বছরের ১ অক্টোবর অবসরে যান বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। অবসরে যাওয়ার পরপরই সব সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নেয়া হয়েছে বলে সেসময়ের প্রধান বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সাবেক এ বিচারপতি।

বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে মতানৈক্য দেখা দেয়ার এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে সেসময় চিঠিও দেন আলোচিত এই বিচারপতি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে টিভি টকশোতে অংশ নিয়ে এসকে সিনহার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক মনে করেন, নির্বাচনের আগমুহূর্তে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বইটি তড়িঘড়ি করে প্রকাশ করা হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণার দলিল।

বিবিসি বাংলাকে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘আপিল বিভাগের পাঁচজন বিচারক সিনহার সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।’

এসকে সিনহা যখন প্রধান বিচারপতি তখন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা হয়। আর এই মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে আইন, শাসন ব্যবস্থা, সংসদ নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য করেন তিনি। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর এক মাসের ছুটি নিয়ে বিদেশে যান সিনহা। ১০ নভেম্বর তার দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু আগের দিন তিনি সিঙ্গাপুর দূতাবাস থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

সম্প্রতি সিনহা আত্মজীবনীমূলক বই প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, যেখানে তিনি দাবি করেন, তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে ভয় দেখিয়ে। আর বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন বলে জানান।

নির্বাচনের আগমুহূর্তে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সিনহা বইটি প্রকাশ করেছেন বলে দাবি বিচারপতি মানিকের। বলেন, ‘আমি বইটি পড়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এটি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রচারণার একটি দলিল। নির্বাচনে যাতে আওয়ামী লীগকে হেস্তনেস্ত করা যায় সেই উদ্দেশ্যেই এই বইটি তিনি লিখেছেন।’

তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত ক্ষমতাধর একজন ব্যক্তি। তাকে বের করে দেওয়া তো চাট্টিখানি কথা না। প্রধান বিচারপতি অনেক কিছু করতে পারেন। বিচারপতি মানিকের ভাষ্য, উনাকে (সিনহা) আপনি দেশ ছেড়ে চলে যান আর উনি চলে যাবেন- আমিও নিজেও বিচারপতি ছিলাম, এটা আমি বিশ্বাস করতে নারাজ। প্রধান বিচারপতি তো দূরের কথা একজন হাইকোর্টের বিচারপতিকেও এভাবে দেশ থেকে বিতাড়ন সম্ভব নয়।

দেশে ত্যাগে বাধ্য করা নিয়ে সিনহা তার বইতে যে বর্ণনা দিয়েছেন সেটিকেও অসত্য বলে দাবি করেন বিচারপতি মানিক।

তার মতে, সিনহার বিরুদ্ধে দভিযোগগুলো আসার পর আপিল বিভাগের পাঁচ জন বিচারপতি অভিযোগগুলোর নথিপত্র দেখে দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তারা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আর বসবেন না। সে অবস্থায় তার পদত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।

কারণ তিনি তখন কাজ করতে পারতেন না। এছাড়া অভিযোগগুলো যখন আসলো তখন দুদক সচল হলো। আমি মনে করি দুদককে এড়ানোর জন্য উনি দেশ ছেড়েছিলেন।

সিনহার দাবি ৫ বিচারপতিকে চাপ সৃষ্টি করে তার সঙ্গে কাজ না করতে রাজি করানো হয়েছে। এটিও মানতে নারাজ মানিক। তার মতে, ওই ৫ বিচারপতির সঙ্গে তিনি (মানিক) দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। এরা অত্যন্ত দৃঢ়চিত্তের এবং দৃঢ়চরিত্রের, ইস্পাত কঠিন চরিত্রের মানুষ কিন্তু এই পাঁচজনই।

‘তারা কারো প্রভাবে প্রভাবিত হওয়ার লোক নয়। তারা কারও চাপের মুখে নতি স্বীকার করার মানুষও তারা নয়। তারা কোনো অবস্থায় কারও চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। সুতরাং সিনহার এই অভিযোগ একেবারেই অসত্য বলে মনে করছি।’

অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে জানিয়ে বিচারপতি মানিক বলেন, পাঁচজনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা পরিষ্কার বলেছেন যে, তারা যেসব প্রমাণাদি দেখেছেন এরপর বিচারপতি সিনহার সঙ্গে বসার প্রশ্নই উঠতে পারে না।

বিচারপতি সিনহা তাকে গৃহবন্দী করে রাখার বিষয়ে বইতে যা লিখেছেন সে দাবিও প্রত্যাখ্যান করেন মানিক। বলেন, ‘উনি লিখেছেন বা বলেছেন তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিলো। কিন্তু ওই সময় বহু সাংবাদিক তার বাড়ির চারপাশে ছিলো। তারা কিন্তু কখনোই এমনটি বলেনি।’

মানিকের ভাষ্য, ওই সময় তিনজন মন্ত্রী তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। উনি দাঁতের ডাক্তারের কাছে গেছেন। বিভিন্ন দূতাবাসে গেছেন ভিসার জন্য। স্বজনদের সঙ্গে দেখা করছেন। প্রচুর আইনজীবী বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবীরাও দেখা করতে গেছেন। তারাও এমনটি বলেননি যে, প্রধান বিচারপতিকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। উনিও বলেননি। এখন নতুন শোনা যাচ্ছে।’

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ০৩, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test