E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

কে পাচ্ছেন শান্তিতে নোবেল?

২০১৮ অক্টোবর ০৫ ১৪:২৬:১৬
কে পাচ্ছেন শান্তিতে নোবেল?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলতি বছরের সবচেয়ে প্রত্যাশিত নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে আজ। সংঘাত, সংঘর্ষ, বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে অবিচল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে উঠছে সম্মানজনক এই পুরস্কার। শুক্রবার সুইডেনের স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টা) বহুল আকাঙ্ক্ষিত এ পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে।

তবে এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কার কে পাচ্ছেন; সেটি নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি বছর শান্তির এই নোবেল পুরস্কারের জন্য ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৩১ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান মনোনয়ন তালিকায় জায়গা পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এক বছর আগে রাখাইনে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা সঙ্কট। গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, হত্যা, ধর্ষণ ও জ্বালাও পোড়াওয়ের হাত থেকে বাঁচতে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

বছরজুড়ে আলোচিত ও বিশ্ব নেতাদের চরম উদ্বেগের মাঝে রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। এছাড়া বিশ্বের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ও অনুন্নত দেশগুলোতে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের জন্য খাবার সরবরাহ করছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। এবারের শান্তির নোবেল পাওয়ার দৌড়ে তাই এগিয়ে রয়েছে এ দুই সংস্থা।

অসলোর পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান হেনরিক আর্ডালের বিশ্বাস, বিশ্বজুড়ে প্রত্যেক বছর লাখ লাখ অভূক্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দেয়ার কাজে নিয়োজিত জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এবারে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘ইয়েমেনের যুদ্ধের ময়দান থেকে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে, আমরা এখন দেখছি যে, বর্তমান সময়ের বৃহত্তর মানবিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ক্ষুধা।’ আর জাতিসংঘের এই সংস্থা যদি এবারে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়; তাহলে এর সঙ্গে জড়িয়ে যাবে বাংলাদেশের নামও। তবে অভিবাসন সঙ্কট মোকাবেলায় মানবিক পদক্ষেপ নেয়ায় ফেবারিটের তকমা পাওয়া জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল ও খ্রিস্টান ধর্মের রোমান ক্যাথলিক শাখার প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস।

এছাড়া কোরীয় উপদ্বীপের দীর্ঘদিনের উত্তেজনা কমিয়ে আনতে ও উপদ্বীপকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কাজ করায় মনোনয়ন তালিকায় রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন বরিস জনসন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জ্যায়ে ইন কোরীয় উপদ্বীপে নেয়া পদক্ষেপের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন বলে মন্তব্য করেছিলেন।

কিন্তু ট্রাম্পের বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত; বিশেষ করে প্যারিস জলবায়ূ চুক্তি এবং ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া। যা নেতিবাচক এবং শান্তির জন্য উদ্বেগের, সেসবের দিকে ইঙ্গিত করে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) প্রধান ড্যান স্মিথ বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘এ ধরনের পুরস্কার ট্রাম্পের সঙ্গে যায় না।’

পাশাপাশি আন্তঃকোরীয় শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখায় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জ্যায়ে ইন ও উত্তরের প্রেসিডেন্ট কিম জং উনও রয়েছেন তালিকায়। শান্তির সম্ভাব্য নোবেল বিজয়ী হিসেবে দুই কোরিয়ার উভয় নেতাকেও অনেকে এগিয়ে রাখছেন।

এদিকে, ২০ বছরের যুদ্ধ শেষে প্রতিবেশি ইরিত্রিয়ার সঙ্গে ইথিওপিয়ার শান্তিচুক্তি হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী এই শান্তিচুক্তির সঙ্গে জড়িত দুই দেশের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে শান্তির সর্বোচ্চ এই পুরস্কার পেতে পারেন বলে প্রত্যাশা করছেন অনেকে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের বিশেষজ্ঞ ও সুইডিশ অধ্যাপক পিটার ওয়ালেস্টিনের মতে, এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কার ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ পেতে পারেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় এসেছেন চলতি বছরের এপ্রিলে। যা নোবেল পুরস্কারের মনোনয়নের আবেদনের সময়ের পর। বছরের শুরুতেই নোবেল কমিটি মনোনয়নের জন্য আবেদন গ্রহণ করায় তিনি এবারের এই সুযোগ নাও পেতে পারেন।

যৌন সহিংসতা ও হয়রানির ব্যাপারে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা তৈরি করায় মি টু (#MeToo) আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কঙ্গোর ধাত্রীবিদ্যাবিশারদ ডেনিস মুকওয়েজি অথবা জঙ্গিদের হাতে ধর্ষণের শিকার ইয়াজিদি নারী নাদিয়া মুরাদও নোবেল শান্তির পুরস্কারের দৌড়ে পিছিয়ে নেই।

অতীতে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য বেশ কয়েকবার মনোনয়ন পেয়েছিলেন মুকওয়েজি। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার নারীদের নিয়ে দুই দশক ধরে কাজ করছেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের হাতে অপহরণের শিকার হয়ে ‘যৌনদাসী’ হিসেবে তাদের আস্তানায় কাটাতে হয়েছিল মুকওয়েজিকে।

নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আরো রয়েছে, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, সৌদি আরবের কারাবন্দি ব্লগার রাইফ বাদায়ি, গণমাধ্যমের সুরক্ষায় কাজ করা রিপোর্টার্স উইথাউট বর্ডারস, কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (আরএসএফ) ও রুশ মানবাধিকার সংস্থা এনজিও মেমোরিয়াল এবং দেশটির বিরোধীদলীয় সংবাদপত্র নোভায়া গ্যাজেটা। এএফপি, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ০৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test