E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আসিয়া বিবির খালাসে উত্তপ্ত পাকিস্তান

২০১৮ নভেম্বর ০২ ১৭:৪১:২৮
আসিয়া বিবির খালাসে উত্তপ্ত পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পাওয়া খ্রিষ্টান নারী আসিয়া বিবিকে খালাস দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। তবে ৩১ অক্টোবর আদালতের এ রায় দেয়ার পর পাকিস্তান জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের তৈরি হয়েছে। তৃতীয় দিনের মতো চলা বিক্ষোভে বিভিন্ন স্থানে আসিয়া বিবির কুশপুত্তলিকা দাহ করাসহ নানাভাবে এ রায়ের প্রতিক্রিয়া করছেন দেশটির জনগণ।

২০০৯ সালে আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। এরপর ২০১০ সালের ডিসেম্বরে নিম্ন আদালতে আসিয়াকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন তিনি। ওই আপিলের প্রেক্ষিতেই তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আসিয়ার বিবির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিলের ঘটনায় তৃতীয় দিনের মতো চলা আন্দোলনে শুক্রবার দেশটির প্রধান প্রধান মহাসড়ক বন্ধ করে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা। বিভিন্ন স্থানে আসিয়ার কুশপুত্তলিকা দাহ করার মাধ্যমে এ রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন তারা।

বিক্ষোভকারীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে টায়ারে আগুন দিয়ে, কুশপুত্তলিকা দাহ ছাড়াও স্লোগান ও মিছিলে মাধ্যমে এ রায়ের বিরোধীতা করছেন। তাছাড়া দেশটির স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।

পাকিস্তানের অন্যতম বড় শহর করাচিতে কমপক্ষে ২৫টির মতো স্থানে রাস্তা অবরোধ করে রাখা হয়েছে। এতে করে শহরটিতে মানুষের চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। করাচির জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে।

একইভাবে লাহোরকেও অবরুদ্ধ করে রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদের মূল মহাসড়কগুলোতে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে রাজধানী শহরের সঙ্গে দেশটির অন্য অঞ্চল বিশেষ করে প্রাদেশিক শহর গুলো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

রেল কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ডন বলছে, বেশ কিছু ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যেতে পারেনি। এছাড়া এই অচলাবস্থার কারণে অনেক রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

দেশটির তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরি প্রধান চারটি শহরে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা মাগরিবের নামাজ পর্যন্ত মেবাইল ফোন নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ করে দেয়ার কথা নিশ্চিত করেন। রাজধানী ইসলামাবাদ, লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি ও গুরজানওয়ালা এ চারটি শহরে মোবাইল সেবা বন্ধ রয়েছে।

দেশটির ১৪টি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বিক্ষোভ পালনের মাধ্যমে দেশকে অচল করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে ১৩ অক্টোবর উগ্র ডানপন্থী তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) আসিয়াকে মুক্তি দিলে দেশব্যাপী বিক্ষোভ করার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় রাজধানী ইসলামাবাদসহ দেশটির প্রধান শহরগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে দেশটির সেনাবাহিনী বিক্ষোভাকারীদের এসব বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এসব ঘটনা যদি ঘটতে থাকে তাহলে সেনাবাহিনী তাদের ধৈর্য্য রাখতে পারবেন না বলে আন্দোলনকারীদের সতর্ক করে দিয়েছেন।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে মেজর জেনারলে আসিফ গফফার বলেন, ‘আমরা আমাদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়েছি। এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা না থাকলেও সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি সবার সম্মান দেখানো উচিত।’

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের জুনে আসিয়া বিবি একদল নারীর সঙ্গে কৃষি জমিতে কাজ করতেন। এসময় এক বালতি পানি নিয়ে দলের অন্য নারীদের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। আসিয়া বিবি বালতি থেকে এক গ্লাস পানি নেন। এনিয়ে দলের অন্য নারীরা তার সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তারা বলেন, আসিয়া বিবি মুসলিম নন, সেজন্য তিনি মুসলিমদের বালতির পানিতে গ্লাস ডুবিয়ে পানি তুলতে পারেন না।

বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালতে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে তিনটি অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। ওই নারীরা আসিয়া বিবিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের দাবি জানান।

নিজ বাড়িতে মারধরের শিকার হন আসিয়া বিবি। ব্লাসফেমির দায়ে তাকে মারপিট করেন অভিযোগকারীরা। পরে তদন্তের পর আসিয়া বিবিকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান পুলিশ।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ০২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test