E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আসামকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি

২০১৯ জানুয়ারি ২৮ ১৮:৩১:০৯
আসামকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ‘যদি আসামের জনগণের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাবোধ দেখানো না হয় এবং নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাস হয় তাহলে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে বাধ্য হবে আসাম।’ আসামের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের বিরুদ্ধে আয়োজিত এক সমাবেশে এমন মন্তব্য করেছেন আসামের কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির (কেএমএসএস) নেতা অখিল গগৈয়।

আসামের তিনসুকিয়া জেলার পানিতোলায় ওই সমাবেশে কেএমএসএসের এই নেতা বলেন, ‘আমাদের প্রাপ্য সম্মান যদি সরকার দেয়, আমরা ভারতের সঙ্গে থাকব। কিন্তু আদিবাসী অসমীয়ারা যদি উপেক্ষিত হয় এবং বিল পাস হয় তাহলে প্রত্যেক অসমীয়ার এটা বলার সাহস আছে যে, তারা ভারতের অংশ হয়ে থাকবে না।’

আসামের প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে পাড়ি জমানো শুধুমাত্র অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দিতে চায় ভারত। কিন্তু আসামের অনেক দল এবং সংগঠনের দাবি, সংবেদনশীল সীমান্ত রাজ্যের জনগণের ওপর এই নাগরিকত্ব বিল প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে।

আসামের নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা করে স্থানীয় অন্তত ৭০টি সংস্থা আন্দোলন করছে। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির (কেএমএসএস) নেতা অখিল গগৈয়।

তিনি বলেছেন, আমরা এটা পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, যদি প্রয়োজনীয়তা এবং পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে অবশ্যই আসাম বলতে বাধ্য হবে, তারা ভারতের সঙ্গে না থাকার জন্য প্রস্তুত... যদি সরকার আমাদের সম্মান করে, আমরা ভারতের সঙ্গে থাকবো নতুবা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব।

নাগরিকত্ব বিলের সংশোধনের প্রতিবাদে এ বছর ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন বয়কট করেছে মিজোরামের বেশ কয়েকটি সংস্থা। এর আগে গত ৭ জানুয়ারি এক সমাবেশে বিচ্ছিন্নতাবাদী মন্তব্য করার দায়ে আসাম পুলিশ গগৈয়-সহ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার জয়ী সাহিত্যিক হিরেন গোহাইন ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মানজিত মহন্তের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করে।

ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে আসামে গত বছর আবেদন করেন প্রায় ৩ কোটি ২৯ লাখ মানুষ। ১ জানুয়ারি প্রথম দফায় এক কোটি ৯০ লাখ মানুষকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দিয়ে এনআরসি তালিকা প্রকাশ করা হয়।

গত বছরের জুলাইয়ের শুরুর দিকে ভারতের জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা (এনআরসি) কর্তৃপক্ষ প্রথম দফার চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে দেড় লাখ মানুষের নাম বাদ দেয়ার কথা জানায়। যথাযথ নথিপত্র ও প্রমাণ দিতে না পারায় তারা নাগরিকত্ব পাবেন না বলে জানানো হয়। এদের মধ্যে ছিলেন প্রায় ৫০ হাজার গ্রামীণ নারী।

এই নারীরা গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে থেকে একটি সনদ নেয়ার পর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছিলেন। গ্রাম পঞ্চায়েতরা ওই সনদে নারীদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে এনআরসি থেকে তাদের বৈবাহিক ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ চাওয়া হয়; যা তাদের নেই।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে ভারতে পাড়ি জমানোর পর যে সংখ্যালঘুরা সেখানে ছয় বছর অতিবাহিত করেছেন; তারা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন বলে কেন্দ্র থেকে একটি আইনের প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু আসামসহ অন্যান্য রাজ্য সরকার এই আইনের বিরোধিতা করেছে।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদি নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের অঙ্গীকার করেছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর ২০১৬ সালে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার নাগরিকত্ব সংশোধন বিল-২০১৬ সালে পাস করে।

কিন্তু বিজেপির এই প্রস্তাবে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও মনিপুরের কিছু রাজনৈতিক দল নাখোশ; যারা ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জোট গঠন করে সরকারে রয়েছে। এই ইস্যুতে বিজেপির ওপর থেকে তারা সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়ারও হুমকি দেয়। পিটিআই, ওপিইন্ডিয়া।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ২৮, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test