E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গ্রীসের রক্তাক্ত স্ট্রবেরি : নেয়া মানোলাদা দিবস আজ

২০১৪ এপ্রিল ১৭ ১৩:২৫:৫৭
গ্রীসের রক্তাক্ত স্ট্রবেরি : নেয়া মানোলাদা দিবস আজ

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : আজ ১৭ এপ্রিল। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ কমিউনিটির ইতিহাসে এক রক্তাক্ত স্মৃতিময় দিন। ট্র্যাজেডির সূত্রপাত গত বছর ঠিক এদিনই দক্ষিণ ইউরোপীয় দেশ গ্রীসে। রাজধানী এথেন্স থেকে ২৬০ কিলোমিটার দূরে ‘নেয়া মানোলাদা’ এলাকায় স্ট্রবেরি খামারে কর্মরত নিরীহ বাংলাদেশিদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল প্রত্যন্ত গ্রামের মেঠোপথ। গুরুতর আহত হন ২৯ জন বাংলাদেশি।

অধিকার আদায়ের সংগ্রামে রক্তের বিনিময়ে সৃষ্টি হয়েছিল যে ইতিহাস, আজ তার এক বছর পূর্তিতে পালিত হচ্ছে “রক্তাক্ত স্ট্রবেরি নেয়া মানোলাদা দিবস”।
বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনরত বাংলাদেশিদের উপর স্ট্রবেরি খামার মালিক সেদিন নিজ হাতে বেপোরোয়া গুলি চালালে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন অনেকেই, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। আশংকাজনক কয়েকজন তখন সৌভাগ্যবশতঃ প্রাণে বেঁচে গেলেও নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। গ্রেফতার করা হয় খামার মালিক সহ গুলিবর্ষণের ঘটনার সাথে জড়িত কয়েকজনকে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয় এই নেক্কারজনক ঘটনার বিবরণ।
সমালোচনার ঝড় ওঠে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে, কৃষিনির্ভর ‘নেয়া মানোলাদা’র স্ট্রবেরিকে ‘রক্তাক্ত’ আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে তা বয়কটের ডাক দেয়া হয়। কঠোরতম ভাষায় ঘটনার নিন্দা জানায় গ্রীস সহ ইউরোপের মানবাধিকার সংস্থাগুলো। আহত বাংলাদেশিদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণই শুধু নয়, তাঁদেরকে বৈধ করে নেয়ার জন্য রাজধানী এথেন্সে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে গ্রীক কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক চালিয়ে যান এথেন্সে দায়িত্বরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ।
অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন আয়েবা’র সভাপতি গ্রীসের ইঞ্জিনিয়ার ড. জয়নুল আবেদিন এবং সেক্রেটারি জেনারেল ফ্রান্সের কাজী এনায়েত উল্লাহর নেতৃত্বে সাংগঠনিকভাবে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করা হয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে প্যারিসের গ্রীক দূতাবাসে সময়পোযোগী স্মারকলিপি এবং ব্রাসেলসের ইউরোপীয় সদর দফতরে কর্মকর্তা পর্যায়ে আয়েবা সেক্রেটারি কাজী এনায়েতের ফলপ্রসু বৈঠক হয় ‘নেয়া মানোলাদা’র গুলিবর্ষণসহ অন্যান্য ইস্যুতে।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত জয় হয় মানবতার। ঘটনার ৬ মাসের মাথায় হাসি ফোটে গুলিবর্ষণে আহত বাংলাদেশিদের মুখে, বৈধ করে নেয়া হয় ক্ষতিগ্রস্তদের। প্রশাসন কর্তৃক ‘নেয়া মানোলাদা’য় গত বছরের ১২ অক্টোবর রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয় ৩৫ জন বাংলাদেশির বৈধতার কাগজপত্র। প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশি অধ্যুষিত ‘নেয়া মানোলাদা’ এলাকাতে তখন উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
সেদিন সরেজমিনে উপস্থিত থেকে প্রত্যক্ষ করা হয়েছিল রক্তের বিনিময়ে বৈধতা প্রাপ্তির উচ্ছাস।
এদিকে স্ট্রবেরির রক্তাক্ত স্মৃতি বিজড়িত ‘নেয়া মনোলাদা দিবস’ উপলক্ষ্যে ‘নেয়া মানোলাদা’ এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ।
১৬ এপ্রিল বুধবার রাতে এই ফাস্টনিউজের সাথে আলাপকালে দিবসটিকে অত্যন্ত তাৎপর্যবহ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশিদের বৈধতা প্রাপ্তি অভিবাসীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে শুধু এক ঐতিহাসিক মাইলফলকই নয়, একইসাথে তা কৃষিপ্রধাণ অঞ্চল ‘নেয়া মানোলাদা’র প্রশাসনেরও চোখ খুলে দিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ জানান, বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকল্পে প্রশাসনিক কাজে এথেন্স থেকে আমাকে এখন ‘নেয়া মানোলাদা’তে প্রায়ই আসতে হয়। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি এখানকার খামার মালিকরাও বর্তমানে বাংলাদেশিদের প্রতি অনেক বেশি আন্তরিক।
গত মাসে গ্রীক পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার ইয়োয়ানিস ত্রাগাকিসের সাথে একান্ত বৈঠকের সময় অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয়াদির সাথে ‘নেয়া মানোলাদা’ ইস্যুতেও তাঁর ফলপ্রসু আলোচনা হয় বলে জানান রাষ্ট্রদূত। এসময় গ্রীক ডেপুটি স্পিকার গ্রীসে বসবাসরত প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশির বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সম্ভব সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
(এটি/ এপ্রিল ১৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test