E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগদাদিকে হত্যায় যেভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান চালায় এলিট ফোর্স

২০১৯ অক্টোবর ২৮ ১৫:০৯:০৪
বাগদাদিকে হত্যায় যেভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান চালায় এলিট ফোর্স

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টারা শনিবার রাতে যখন হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন কক্ষে বসে; ঠিক সেই সময় ওয়াশিংটন থেকে ৬ হাজার মাইল দূরে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে মার্কিন বিশেষ বাহিনী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালাচ্ছিল।

ইরাকের উত্তরাঞ্চল থেকে আটটি হেলিকপ্টারে করে মার্কিন সৈন্যরা শত মাইল পাড়ি দিয়ে গভীর রাতে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে অভিযান শুরু করে। তাদের টার্গেট ছিল আইএসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি। মার্কিন সৈন্যরা সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমের একটি ভবনে পরিবারের সদস্যদেরসহ বাগদাদির অবস্থান শনাক্ত করে; গত কয়েকদিন ধরেই ওই ভবন নজরদারিতে রাখা হয়েছিল।

ট্রাম্প মার্কিন বিশেষ বাহিনীর রাতের এই অভিযানকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং দুঃসাহসী’ বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্পের কথায়, এই অভিযানের অবসান ঘটেছে রাজকীয় ধাঁচে। মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বিশেষ বাহিনীর অভিযানের সময় একটি মৃতপ্রায় সুরঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বাগদাদি।

কিন্তু সেনাদের ক্রমাগত হামলার মুখে আত্মঘাতী ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দেন আইএসের এই নেতা। নিজের পাশাপাশি তার তিন সন্তানও মারা যায় এই বিস্ফোরণে। ট্রাম্প বলেন, বাগদাদি নায়কের মতো মরতে পারেনি। তিনি মারা গেছেন কুকুরের মতো, কাপুরুষের মতো। কান্না করেছে, চিৎকার করেছে, সন্তানদের কাছে এনেছে মরার জন্য। অবশেষে মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে।

তবে বাগদাদি একেবারে শেষ সময়ে এসে কী ধরনের আচরণ করেছিলেন সে ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন মার্কিন অন্যান্য কর্মকর্তারা। মার্কিন দাতব্য কর্মী কায়লা মুয়েলারের নামে এই অভিযানের নামকরণ করা হয়েছিল। মার্কিন এই দাতব্য কর্মীকে অপহরণের পর ধর্ষণ করে হত্যা করেছিলেন বাগদাদি। কায়লা মুয়েলারের সেই অপহরণ ও হত্যা এখনও রহস্যময় হয়ে আছে।

বাগদাদিকে হত্যার এই মিশন সম্পন্ন করতে গিয়ে মার্কিন সৈন্যরা ওয়াশিংটনে দেশটির জ্যেষ্ঠ কমান্ডারদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করেছিলেন; সেটি এখনও প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু রোববার সকালের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যাঙ্গাত্মক ও কটূক্তিপূর্ণ ভাষায় অভিযানের বিবরণ প্রকাশ করেছিলেন। এই অভিযানকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনীর পাঁচ বছরের লড়াইয়ের অন্যতম সাফল্য বলে দাবি করেছেন তিনি।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটনে বসে অভিযান শুরুর প্রস্তুতির সময় (বিকেল পাঁচটা) থেকে তিনি খোঁজ রাখছিলেন। তিনি অজ্ঞাত এক প্রযুক্তির মাধ্যমে অভিযানের চিত্র দেখেন বলে দাবি করেছেন। ট্রাম্প বলেন, এটা ছিল সিনেমা দেখার মতো। তবে ওই প্রযুক্তির ব্যাপারে কোনো তথ্য জানাননি তিনি।

গলফ খেলার পর রোববার বিকেল চারটার দিকে হোয়াইট হাউসে ফেরেন ট্রাম্প। এর প্রায় এক ঘণ্টা পরে হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন কক্ষে প্রবেশ করেন তিনি। স্যুট-টাই পরে একটি টেবিলের সামনে বসেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্ক এসপার, হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও ব্রায়েন, সেনাপ্রধান জেনারেল মার্ক মিলে ও বিমান বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্কট হোওয়েল।

মধ্যপ্রাচ্যে মাঝরাত অতিক্রম করার পর মার্কিন সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার ইরাক, তুরস্ক এবং রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত আকাশসীমা ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ সময় মার্কিন কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে জানান, তারা একটি অভিযানের পরিকল্পনা করেছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। সিরিয়ায় রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই যোগাযোগকে ‘কমিউনিকেশন ডিকনফ্লিকশন’ বলছে পেন্টাগন। এ ধরনের যোগাযোগ রক্ষা করায় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা কিংবা প্রতিপক্ষের সামরিক বাহিনী ভুল হামলা থেকে বিরত থাকে।

সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের টার্গেট এলাকায় ভোরে পৌঁছানোর পর মার্কিন বাহিনী প্রথমে বাগদাদি অবস্থানরত ভবনের আশপাশের বিভ্ন্নি গর্ত উড়িয়ে দেয়; যাতে পেছনের কোনো দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারেন। বাগদাদি বুঝতে পেরে ভবন থেকে বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে একটি সুরঙ্গের ভেতরে প্রবেশ করেন। মার্কিন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর সুরঙ্গে বোমা মারতে শুরু করে। কিন্তু এর এক পর্যায়ে আইএসের এই নেতা বিস্ফোরক ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটান।

সুরঙ্গে বাগদাদি প্রবেশ করায় সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর একদল প্রশিক্ষিত কুকুর ঢুকে পড়ে। বাগদাদিকে তাড়া করতে গিয়ে একটি কুকুর সামান্য আহত হয়; ট্রাম্প এই কুকুরকে ‘সুন্দর’ এবং ‘মেধাবী’ বলে মন্তব্য করেছেন। অভিযানে একজন সৈন্যও আহত হননি বলে ট্রাম্প দাবি করলেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্ক এসপার বলেছেন, দু’জন সদস্য সামান্য আহত হয়েছেন। তারা ইতোমধ্যে কর্মে ফিরেছেন।

হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভবনের ভেতরে অভিযানের সময় শত্রুপক্ষের পাঁচ যোদ্ধা নিহত হয়েছে এবং বাকিরা ভবনের বাইরে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও ব্রায়েন এনবিসির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বলেছেন, ওয়াশিংটনে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে বাগদাদিকে হত্যার তথ্য নিশ্চিত করেন মার্কিন সৈন্যরা। ওয়াশিংটন পোস্ট, এনবিসি।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২৮, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test