E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ভারত, নিহত ৬

২০১৯ ডিসেম্বর ১৫ ১৭:০৩:৩৮
বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ভারত, নিহত ৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধীতায় পঞ্চম দিনের মতো টানা বিক্ষোভ করছেন দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ। শুধুমাত্র আসামেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, বিক্ষোভকারীদের আগুনে রবিবার পর্যন্ত অন্তত ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদের মধ্যে তিন বিক্ষোভকারীর প্রাণ গেছে পুলিশের গুলিতে। বিক্ষোভ সহিংসতায় বিধ্বস্ত আসাম, পশ্চিমবঙ্গের কিছু অঞ্চলে ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও আসামে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

রবিবার আসামের স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, পুলিশের গুলিতে চারজন ও দোকানে বিক্ষোভকারীদের আগুনে একজন এবং বিক্ষোভের সময় গণপিটুনিতে একজনের প্রাণহানির ঘটনার পর আসামের বৃহত্তম শহর গুয়াহাটিতে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। রবিবারও গুয়াহাটিতে ৫ হাজারের বেশি মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে।

এ সময় বিক্ষোভকারীদের সামনে শত শত পুলিশ সদস্যকে নীরব থাকতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা নাগরিকত্ব আইনের বিরোধীতা করে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। অনেকের হাতে ‘আসাম দীর্ঘজীবী হোক’, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন চাই না’ লেখা ব্যানার দেখা যায়।

আসামের কর্মকর্তারা বলেছেন, রোববার নিরাপত্তা বাহিনীর কড়াকড়ি কিছুটা রাজ্যের তেল এবং গ্যাস উৎপাদনে কারফিউয়ের ধাক্কা লেগেছে। তবে অনেকেই দোকানপাট খুলতে শুরু করেছেন। বুধবার ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়। পরদিন রাষ্ট্রপতি এই বিলে স্বাক্ষর করলে সেটি আইনে পরিণত হয়।

এই আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশি বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে যেসব অমুসলিম শরণার্থীরা ভারতে গেছেন তারা দেশটির নাগরিকত্ব পাবেন। তবে মুসলিম শরণার্থীদের ব্যাপারে আইনে কিছুই বলা হয়নি।

এদিকে, বিতর্কিত এই আইনেন বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গেও তৃতীয়দিনের মতো বিক্ষোভ করছেন রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ। এই আইনের বিরোধীতা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দেগে রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। বিক্ষোভ-সহিংসতা অব্যাহত থাকায় রোববার পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি জেলায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

তারপরও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভকারীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন। ট্রেন, বাস, ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভের আগুন জ্বলতে থাকা পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে ট্রেন সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

নতুন আইনে এই রাজ্যে প্রতিবেশি বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া অনেক শরণার্থী নাগরিকত্ব পাবেন এমন আশঙ্কায় সেখানে বিক্ষোভ করছেন হাজার হাজার মানুষ। রোববার আবারও বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়বে না।

রবিবার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খণ্ডে এক সমাবেশে অংশ নিয়ে অমিত শাহ বলেন, আমাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলের ভাই-বোনদের সংস্কৃতি, ভাষা, সামাজিক পরিচয় এবং রাজনৈতিক অধিকার আগের মতোই অক্ষুণ্ন থাকবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার দেশটিতে বসবাসরত ২০ কোটি মুসলিমকে এক ঘরে করতে নতুন এই আইনের বাস্তবায়ন করছে বলে মুসলিম মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা দাবি করেছেন। তবে নরেন্দ্র মোদি এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। দেশটির একাধিক মানবাধিকার সংস্থা এবং একটি মুসলিম রাজনৈতিক দল নতুন এই নাগরিক আইনের বিরোধীতা করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে। তাদের যুক্তি, নতুন নাগরিকত্ব আইন সংবিধান এবং ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যের বিপরীত।

রাজ্যসভায় এই আইন পাসে সমর্থন দিয়েছিল আসামে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাজনৈতিক জোটসঙ্গী আসাম গণপরিষদ। রোববার আসাম গণপরিষদের নেতারা বলেছেন, তারা সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একই সঙ্গে এই আইনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এএফপি, আলজাজিরা।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test