E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাহাথিরের পদত্যাগে টালমাটাল মালয়েশিয়া

২০২০ ফেব্রুয়ারি ২৪ ১৮:০৩:২৫
মাহাথিরের পদত্যাগে টালমাটাল মালয়েশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সোমবার দুপুরে আচমকা পদত্যাগ করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদ। তার দফতর থেকে দুই বাক্যের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, রাজার কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি। আনোয়ার ইব্রাহিম যেন ক্ষমতায় আসতে না পারেন তার জন্য নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়লেন তিনি।

দেশটির রাজনীতিতে সপ্তাহব্যাপী নানা নাটকীয়তার পর পদত্যাগ করলেন মাহাথির। ‘প্যাক্ট অব হোপ’ নামে আনোয়ার ইব্রাহিম যে জোট গঠন করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছিলেন, সেই জোটের ভেতরেই আনোয়ার বিরোধীরা এই নাটক মঞ্চস্থ করেছে। বিরোধী নেতারা এখন নতুন একটি জোট গঠন করতে যাচ্ছেন।

বিরোধী এই জোট থেকে বাদ পড়বেন আনোয়ার ইব্রাহিম—অথচ মাহাথির মোহাম্মদ পদত্যাগ করলে তারই হওয়ার কথা ছিল মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। আনোয়ার ইব্রাহিম হলেন দেশটির জনপ্রিয় সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা। তবে সমকামিতার অভিযোগে বেশ কয়েক বছর কারাবন্দী থাকায় তার জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথটি রুদ্ধ।

আনোয়ার ইব্রাহীম এবং ৯৪ বছর বয়সী বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির ছিলেন দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাদের মধ্যে সম্পর্ক দাঁ-কুড়াল হলেও ২০১৮ সালে দুর্নীতিগ্রস্ত নাজিব রাজাকের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেন তারা। বিরোধী জোটের জয় হয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মাহাথির মোহাম্মদ।

মাহাথির ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত টানা ২২ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার শাসনামলে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও স্বজনপ্রীতিসহ দূর্নীতির অভিযোগও ওঠে তার সরকারের বিরুদ্ধে। কিছুদিন থাকার পর ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতিতে তাকে প্রধানমন্ত্রী করা হলেও, ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি এ নিয়ে নির্দিষ্ট কোন দিনক্ষণ জানাচ্ছিলেন না।

সোমবার সকাল পর্যন্ত দেশটির ক্ষমতাসীন জোটের ভাগ্য ছিল অনিশ্চিত। আচমকা মাহাথিরের কার্যালয় থেকে ঘোষণা আসে, তিনি দুপুর ১টায় রাজা ইয়াং দি-পেরতুয়ান আগংগের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। বিবৃতিটি ছিল মাত্র দুই লাইনের—যেখানে পদত্যাগের কোনো কারণ উল্লেখ করেননি মাহাথির মোহাম্মদ।

এর কিছুক্ষণ আগে মাহাথিরের দল বারসাতু পার্টি ঘোষণা দেয় যে, ক্ষমতাসীন জোট পাকাতান হারাপান থেকে বের হয়ে যাচ্ছে তারা এবং তাদের ১১ জন আইনপ্রণেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। ফলে ‘প্যাক্ট অব হোপ’ নামের ওই জোটে ভাঙন ধরে এবং নতুন একটি জোট গঠনের খবর শোনা যেতে থাকে।

চারপাশ থেকে শোনা যেতে থাকে যে নতুন এই জোট গঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাহাথির মোহাম্মদ। তবে দেশটির রাজনৈতিক মহলে এমন খবর চাউর হলেও খোদ আনোয়ার ইব্রাহিমের দাবি, এমন কথা সত্য নয়। তিনি বলেন, সোমবার মাহাথির তাকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, তিনি এর (নতুন জোট গঠন) মধ্যে নেই।

আনোয়ার ইব্রাহিম আরও বলেন, তিনি এটা নিশ্চিত যে, আগের সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি (মাহাথির মোহাম্মদ) আবারও কাজ করবেন না। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, নতুন এই জোটে থাকবে ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (উমনো)—যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের দল। দলটি গত নির্বাচনে ক্ষমতাচ্যুত হয়।

‘প্যাক্ট অব হোপ’ নামের ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দল ডেমোক্র্যাটিক অ্যাকশন পার্টির (ডিএপি) মহাসচিব লিম গুয়ান ইয়ং বলেছেন, মাহাথির মোহাম্মদ তাকে বলেছেন যে, সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যে কূটচাল শুরু হয়েছিল তা ঠেকাতেই তিনি পদত্যাগ করছেন। তার এই কথা বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তার জল আরও ঘোলা করেছে।

মালয়েশিয়ার বামপন্থী দল হিসেবে পরিচিত ডিএপির এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, ‘২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে যে দলকে (ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন-উমনো) ক্ষমতা থেকে সরাতে আমরা কাজ করেছি, সেই দলের সঙ্গে কাজ করবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মাহাথির মোহাম্মদ।’

তিনি আরও বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় জরুরি এক বৈঠক শেষে মাহাথির মোহাম্মদকে আবারও প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার দল ডিএপি। মালয়েশিয়ার রাজনীতির ময়দানে এই নাটকের শেষ কোথায় হবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, তবে কিছু বিশ্লেষক বলছেন, আগাম নির্বাচনও আহ্বান করা হতে পারে।

আজ সোমবার আনোয়ার ইব্রাহিম এবং মাহাথির মোহাম্মদ উভয়ই রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, তবে তাদের মতিগতি কি, তা এখনো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তবে দেশটিতে রাজার পদটি একটি আনুষ্ঠানিক পদ। যিনি দেশের বেশিরভাগ আইনপ্রণেতার সমর্থন নিয়ে রাজার কাছে হাজির হবেন রাজা তাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন।

তবে নির্বাচন ছাড়াই গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকারের স্থলে নতুন আরেকটি সরকার আসার ব্যাপারটি উন্মোচিত হওয়ার পর মালয়েশিয়ার অনেক নাগরিক তাদের ক্ষোভ জানিয়েছেন। দেশটির একদল শিক্ষাবিদ ও অ্যাক্টিভিস্ট বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ব্যক্তিস্বার্থে পেছন দরজা দিয়ে গঠিত সরকারকে মেনে নেবে না দেশের মানুষ। এএফপি।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test