E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নির্ভয়া হত্যাকাণ্ডের চার অভিযুক্তের ফাঁসি শুক্রবার

২০২০ মার্চ ১৯ ১৮:১৪:২৯
নির্ভয়া হত্যাকাণ্ডের চার অভিযুক্তের ফাঁসি শুক্রবার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির বহুল আলোচিত মেডিকেল ছাত্রী নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত চার আসামির সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর হচ্ছে। নানা নাটকীয়তা শেষে আগামীকাল (শুক্রবার) সকালে এ চার ধর্ষকের ফাঁসি কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন দিল্লির পাটিয়ালা কোর্ট।

বৃহস্পতিবার দিল্লির এই আদালত অভিযুক্ত চার ধর্ষক অক্ষয় ঠাকুর (৩১), পবনগুপ্ত (২৫), বিনয় শর্মা (২৬) ও মুকেশ সিংহের (৩২) সব আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এই চার অভিযুক্তের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।

চূড়ান্ত সাজা থেকে রেহাই পেতে এখনও আইনি উপায় রয়েছে জানিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিতের আবেদন করেছিলেন দিল্লির বহুল আলোচিত এই মামলার অভিযুক্তরা। দেশটির সরকারি আইনজীবী ইরফান আহমদ আদালতকে বলেন, আইনি প্রতিকার পাওয়ার আর কোনও সুযোগ নেই। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ পবন এবং অক্ষয় ঠাকুরের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমার বন্ধুরা আরও ১০০টি আবেদন করতে পারেন। কিন্তু সেগুলো আইনি বিকল্প নয়। সরকারি এই কৌঁসুলির এমন যুক্তির পর দণ্ডিতদের আবেদন খারিজ করে দেন বিচারক।

এ নির্দেশ শোনার পর আদালত কক্ষে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মুকেশের স্ত্রী। কয়েক দিন আগে স্বামী অক্ষয়ের সঙ্গে সংসার করবেন না জানিয়ে ডিভোর্সের মামলা করেছিলেন তিনি।

ফাঁসির হাত থেকে বাঁচতে শেষ মুহূর্তে এসে সবধরনের চেষ্টা চালাচ্ছেন নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের চার অপরাধী। তারা আইনজীবীদের দিয়ে বারবার সুপ্রিম কোর্টে বিভিন্নভাবে আবেদন করছেন। এ আবেদন হয়তো টিকছে না, কিন্তু আইনি পদ্ধতিতে বিষয়টি দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছেন তারা।

দণ্ডিত আসামিরা বারবার ফাঁসি কার্যকর পেছাতে নানা কৌশল অবলম্বন করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরেই। এ নিয়ে দেশটিতে সমালোচনাও শুরু হয়। গত ১৭ জানুয়ারি নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত চার আসামির সর্বোচ্চ সাজা কার্যকরের নতুন সময় ঘোষণা করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। ওইদিন আসামি মুকেশ সিংয়ের প্রাণভিক্ষার আবেদন দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ নাকচ করে দেয়ার পর ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টায় অপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়।

ভারতের আইনে প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে অন্তত ১৪ দিনের নোটিশ দেয়ার বিধান রয়েছে। সেই হিসাবে জানানো হয়, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লির তিহার কারাগারে অভিযুক্তদের সাজা কার্যকর হবে। এর আগে দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছিলেন, নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত বিনয় শর্মা, মুকেশ কুমার, অক্ষয় কুমার সিংহ এবং পবন গুপ্তকে ২২ জানুয়ারি সকাল ৭টায় তিহার কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। কিন্তু আসামিরা একজন একজন করে প্রাণভিক্ষার আবেদন করায় সেটি কয়েক দফায় পিছিয়ে যায়।

২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর দিল্লির একটি হলে সিনেমা দেখে বন্ধুর সঙ্গে বাসে ফিরছিলেন প্যারামেডিকেলের ওই ছাত্রী। যাত্রী কম থাকায় বাসচালক-সহকারীসহ অন্তত ছয়জন মিলে নির্ভয়ার বন্ধুকে পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে বাসের পেছনের দিকে ফেলে রেখে মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে দুজনকে দিল্লির একটি সড়কের পাশে বাস থেকে ছুড়ে ফেলা হয়।

গুরুতর আহত প্যারামেডিকেলের ওই শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠায় দেশটির সরকার। সেখানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৬ ডিসেম্বর মারা যায়। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। নির্ভয়ার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে দেশটির লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে দিনের পর দিন বিক্ষোভ করতে থাকে।

নির্ভয়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি বাসচালক রাম সিং কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যান। এছাড়া দোষী সাব্যস্ত আরেক ধর্ষক অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাকে তিন বছরের জন্য কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। ২০১৫ সালে সাজার মেয়াদ শেষে এ তরুণ মুক্তি পাওয়ার পর আবারও ভারতে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে দেশটির ধর্ষণের সাজার আইন পরিবর্তন করে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদেরও ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হিসেবে বিবেচনা করার বিধান করা হয়।

২০১৩ সালে দেশটির দ্রুত বিচার আদালত বাকি চার ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণা করেন। পরে দেশটির হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগও ওই সাজা বহাল রাখেন। এনডিটিভি।

(ওএস/এসপি/মার্চ ১৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test