E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ঝড় করোনা বন্যা পঙ্গপালের পর দাবদাহের কবলে ভারত

২০২০ মে ২৭ ১৬:৫৮:১৫
ঝড় করোনা বন্যা পঙ্গপালের পর দাবদাহের কবলে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের হানা যেন কিছুতেই কমছে না। একটি গিয়ে পারেনি, হাজির হচ্ছে আরেকটা। দিন দুয়েক আগেই করোনা সংক্রমিত দেশের তালিকায় শীর্ষ দশে উঠে এসেছে ভারত, সেখানে প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এর মধ্যেই গত সপ্তাহে তাণ্ডব চালিয়ে গেল প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। এর ক্ষয়ক্ষতি মেটানো তো দূরের কথা, এখনও ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্নও মেটেনি, এর মধ্যেই খবর এলো দেশটির পাঁচটি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে মরু পঙ্গপালের ঝাঁক। তার ওপর সপ্তাহখানেক ধরে প্রবলবৃষ্টিপাতে আসামে শুরু হয়েছে বন্যা।


এত কিছুর মধ্যেই আবার নতুন বিপদ ডেকে এনেছে তীব্র দাবদাহ। দু’দিন ধরে গনগনে রোদ আর ভয়ঙ্কর তাপে পুড়ছে গোটা উত্তর ভারত। মঙ্গলবার ১৮ বছরের রেকর্ড ভেঙে দেশটির রাজধানী দিল্লিতে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পালাম অঞ্চলে তাপমাত্রা ছিল আরও বেশি৷ এদিন সেখানে তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ৬ ডিগ্রি বেশি৷

রাজস্থানেও তাপমাত্রার পারদ ছিল ঊর্ধ্বমুখী৷ মঙ্গলবার রাজ্যের চুরু জেলায় তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। গত ১০ বছরে এটাই ওই এলাকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা৷ ২০১৬ সালের ১৯ মে চুরুতে তাপমাত্রা উঠেছিল ৫০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷

গত এক দশকের মধ্যে এবছরই সবচেয়ে বেশি দাবদাহে পুড়ছে ভারত। বৈশ্বিক তাপমাত্রা পর্যবেক্ষক ওয়েবসাইট এল ডোরাডো জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে উত্তপ্ত স্থান ছিল রাজস্থান।

তীব্র গরমের কারণে লোকজনকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এদিকে, গত ১৬ মে থেকে প্রবল বৃষ্টিপাতের জেরে বন্যার মুখে পড়েছে আসাম৷ ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ায় তলিয়ে গেছে রাজ্যের অন্তত পাঁচটি জেলা।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতি ২-৩ ঘণ্টায় ১ থেকে ২ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে ব্রহ্মপুত্রে। এতে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ডিব্রুগড় জেলায়৷ এছাড়া ধেমাজি, ডিব্রুগড়, দারাঙ্গ, লখিমপুর ও গোয়ালপাড়ার ৩০ হাজার ৭০০-র বেশি মানুষ বন্যা কবলিত৷ গোয়ালপাড়ায় প্রায় নয় হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

রাজ্যটির ১২৭টি গ্রামের ৫৭৯ একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে বন্যায়৷ গোয়ালপাড়া জেলায় ৩৩টি রিলিফ ক্যাম্পে ৮ হাজারের বেশি বন্যাকবলিত মানুষকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে৷

জানা গেছে, ভারতে পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের অন্তত পাঁচটি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে পঙ্গপালের ঝাঁক। রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশের একাধিক গ্রামে ও শহরে ঢুকে পড়েছে এসব পঙ্গপালের দল। লকডাউনের মাঝে ফসলের জমিতে পঙ্গপালের এই হানায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সেখানকার কৃষকরা।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পঙ্গপাল যে হানা দিয়েছে তা নিয়ে গত সপ্তাহে সতর্কবার্তা জারি করেছিল দেশটির কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়। দেশটির রাজধানী দিল্লিতেও এই পঙ্গপাল হানা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পতঙ্গবিদরা।

এর আগে, গত বছর গুজরাটি পঙ্গপালের ঝাঁক হানা দিয়ে ২৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ধ্বংস করেছিল। কিন্তু ফসল ধ্বংসের সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে এবার। পঙ্গপাল সাধারণত গড়ে ৯০ দিন জীবিত থাকে। মরু পঙ্গপালের ঝাঁক দিনে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে।

তবে এরচেয়েও বড় যে বিপদ চলছে ভারতে, তা হলো করোনাভাইরাস মহামারি। সেখানে ইতোমধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৩৮৭ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৬৭ জন।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত রোববার দেশটিতে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ৯০ হাজার ৯২৭ জন। অর্থাৎ গত ১০ দিনে সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে গত শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত টানা চারদিন সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড গড়েছে দেশটি।

বুধবার সকালে ভারতের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ১৭০ জন করোনা পজিটিভ ব্যক্তি মারা গেছেন। ফলে সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৩৭ জন। বিবিসি, নিউজ ১৮, এনডিটিভি।

(ওএস/এসপি/মে ২৭, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test