E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চীনের বিষয়ে যে কৌশল দরকার যুক্তরাষ্ট্রের

২০২০ নভেম্বর ২০ ১৫:১৭:৫১
চীনের বিষয়ে যে কৌশল দরকার যুক্তরাষ্ট্রের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনের কর্তৃত্ববাদী হুমকি বুঝতে পারা ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম অর্জন। এখন সেটি নিয়ে কী করা যায়, তা বুঝতে পারা হবে বাইডেন প্রশাসনের দায়িত্ব।

যুক্তরাষ্ট্র তার লড়াই একাই লড়বে- এটা ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা। তার দৃষ্টিতে পুরনো মিত্ররা কোনও অংশীদার নয়, অনেকটা দাসের মতো ছিল। তবে জো বাইডেন যখন চীনকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজাবেন, তখন ভিন্ন কোনও পথই বেছে নেয়া উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের এখন সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে জোর দর কষাকষি শুরু করা দরকার। এ অবস্থায় নতুন জোট গড়া কঠিন, তবে গড়তে পারলে লাভ হবে দুর্দান্ত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম স্নায়ুযুদ্ধের সঙ্গে দ্বিতীয়টির তেমন মিল নেই। প্রথমটিতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্বের মূলে ছিল আদর্শগত বিভেদ ও পারমাণবিক অস্ত্র। কিন্তু, এবার চীনের সঙ্গে স্নায়ুয়ুদ্ধে রণক্ষেত্র বদলে গেছে। এখনকার লড়াই প্রযুক্তিগত: সেমিকন্ডাক্টর, ডেটা, ৫জি মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আর কোয়ান্টান কম্পিউটিং নিয়ে। এসব বিষয়ই নির্ধারণ করে দেবে লড়াইয়ে কারা এগিয়ে, চীন নাকি যুক্তরাষ্ট্র?

এবারের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা অনেক বেশি আন্তঃসম্পর্কিত। এর বড় কারণ হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের প্রভাব। অনেক প্রযুক্তি ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুও তারা।

যদিও বর্তমান বিশ্বে কেউই প্রযুক্তিগত অর্থনীতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। চিপের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, সেটি নকশা করছে যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য, তৈরি হচ্ছে তাইওয়ানের প্ল্যান্টে, যন্ত্রাংশ যাচ্ছে জাপান বা ডেনমার্ক থেকে, সেগুলো চীনের কারখানায় সংযুক্ত করার আগে পরীক্ষা করা হচ্ছে জার্মানিতে। সুতরাং উত্তর কোরিয়া নিজেরাই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে ফেললেও অত্যাধুনিক কম্পিউটার তৈরি করতে পারছে না, এটা কোনও দুর্ঘটনা নয়।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এই বিষয়টি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে যে, প্রযুক্তিই হচ্ছে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ। নিজস্ব বিশাল বাজার, উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর প্রচুর পরিশ্রমী প্রতিভা তাদের জন্য আশীর্বাদ। দলটি ভর্তুকি ও শিল্প গুপ্তচর সহায়তার মাধ্যমে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। চীন রপ্তানিচুক্তি সুরক্ষিত করার মাধ্যমে তাদের প্রযুক্তির বিস্তার ঘটাচ্ছে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ব্যবহার করে নিজেদের ডিজিটাল শক্তি হিসেবে প্রচার করছে, বৈশ্বিক সংস্থাগুলোতে চীনপন্থী মান-নির্ধারণের প্রচারণা চালাচ্ছে।

ট্রাম্প্রের আগ্রাসী একক চেষ্টায় কিছুটা সাফল্য হয়তো এসেছে। তিনি হুমকির মাধ্যমে কিছু মিত্রকে চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের কাছ থেকে ৫জি পণ্য কেনা বন্ধ করিয়েছেন। যেসব চিপ নির্মাতা হুয়াওয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে চীনাদের কিছুটা ক্ষতি করেছেন ট্রাম্প।

তবে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করলে এতে লাভই হয়েছে চীনের। তারা ইতোমধ্যেই নিজস্ব আন্তর্জাতিক মানের চিপ শিল্প গড়ার কাজ শুরু করে দিয়েছে। যদিও এটি শেষ হতে এক দশক বা আরও বেশি সময় লেগে যেতে পারে।

সবচেয়ে বড় কথা, আগ্রাসী যুক্তরাষ্ট্র যদি শুধু নিজেদের কথা চিন্তা করে, তাহলে প্রযুক্তি খাতে সাহায্য করতে পারে এমন মিত্ররাও তাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। ইউরোপ ক্রমাগত যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে কাছে নতি স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ আদালত দু’বার যুক্তরাষ্ট্রকে ডেটা সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ইউরোপীয় নীতিনির্ধারকরাও মার্কিন টেক জায়ান্টদের ওপর ডিজিটাল ট্যাক্স, ক্লাউডে বিধিনিষেধ আরোপ, প্রতিষ্ঠানে বিদেশি ক্ষমতায়ন সীমিতকরণের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তবে আলোচনার মাধ্যমে এই মতবিরোধকে সহযোগিতায় রূপান্তরিত করা সম্ভব। মিত্র দেশগুলো ট্যাক্স ছাড়, ক্ষমতায়ন নীতি ও সরবরাহ ব্যবস্থার মতো বিষয়গুলোতে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্র একা এগোনোর চেয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমমনা দেশগুলোর সাহায্য নিয়ে প্রযুক্তি লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে পারে।

এ আলোচনা যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তঃসীমান্ত বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা এবং অভিবাসনের ক্ষেত্রে আরও বেশি উন্মুক্ত করে তুলতে পারে, যে সুযোগ চীনের জন্য কমই রয়েছে।

অনেকেই বলতে পারেন, এ ধরনের সহযোগিতার জন্য ন্যাটো বা ডব্লিউটিও’র মতো জোট বা সংস্থা আবশ্যক। কিন্তু এমন কিছু গড়তে অনেক বেশি সময় দরকার। তাছাড়া, এভাবে কাজের ক্ষেত্রে নমনীয়তায়ও ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এরচেয়ে জি৭-এর মতো অনুকূল এবং সহজ-সরল জোট গড়ে কাজ করাই সবচেয়ে উপযোগী হতে পারে।

তবে একটা বিষয় নিশ্চিত, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রকে মিত্রদের বোঝাতে হবে, তারা আর আগের মতো আধিপত্যবাদী আচরণ করবে না; তারা এখন গোপনীয়তা, ট্যাক্স, শিল্পনীতির মতো বিষয়গুলোতে ছাড় দিতে প্রস্তুত। বহির্বিশ্বে বিশ্বস্ত বন্ধু হতে ওয়াশিংটনেও দ্বিপাক্ষিক ঐকমত্য থাকা জরুরি।

এধরনের বড় পরিসরে আলোচনাই বিশ্বকে নিরাপদ করে তুলতে পারে। দুই মহাশক্তি যখন একে অপরের সঙ্গে বিরোধে জড়ায়, তখন এধরনের পদক্ষেপই সবার প্রত্যাশিত! দ্য ইকোনমিস্ট।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২০, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test