E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ট্যাক্সের অর্থ আমেরিকানদের পেছনেই খরচ করতে চান বাইডেন

২০২১ জানুয়ারি ২৮ ১৫:৩৬:২৯
ট্যাক্সের অর্থ আমেরিকানদের পেছনেই খরচ করতে চান বাইডেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আমেরিকানদের ট্যাক্সের টাকা আমিরেকানদের পেছনেই খরচ করা উচিত। নিজেদের কাঁচামাল দিয়ে নিজেদের শ্রমিকদের তৈরি জিনিসপত্র কেনার পেছনেই ট্যাক্সের টাকা খরচ করা উচিত বলে মনে করেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত ২৫ জানুয়ারি ফেডারেল সরকারের ক্রয়নীতি সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি।

ওই ক্রয়নীতিতে বলা হয়েছে, আমেরিকানদের আদায় করা বার্ষিক ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ট্যাক্স আমেরিকানদের হাতেই ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এটি একটি জাতীয়তাবাদী রক্ষণশীল নীতি; কারণ অধিক দেশীয় পণ্য ক্রয় করা মানে বিদেশী পণ্যের বাজার সংকুচিত হওয়া। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে জো বাইডেনের এই উদ্যোগ সম্ভবত খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না।

দেশের মানুষের দেয়া ট্যাক্সের অর্থ আমেরিকায় রাখার এই প্রচেষ্টা প্রায় শত বছর আগের বিএএ এক্টের কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৩৩ সালে প্রেসিডেন্ট হারবার্ট হোভার ‘বাই আমেরিকান অ্যাক্ট’ (বিএএ) সাক্ষর করেন। ওই আইনের মাধ্যমে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রয়নীতি নিয়ন্ত্রণ করে আমেরিকানদের চাকরির সুযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়।

এতে বলা হয়েছিল, সরকারি এজেন্সিগুলোকে অবশ্যই ১০ হাজার ডলারের বেশি মূল্যের ক্রয়চুক্তির জন্য আমেরিকান দরদাতাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। শর্ত হলো তাদের পণ্যের ৫০ ভাগ আমেরিকায় উৎপাদিত হতে হবে এবং এর মূল্য বিদেশি বিকল্পগুলোর চেয়ে ৬ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার আগে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বাজার থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রয়াসে দশটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন।

ওই আদেশগুলোর ফলে আগামী ২২ শে ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে হলে লোহা ও ইস্পাতের পণ্যগুলোর ৯৫ শতাংশ আমেরিকায় উৎপাদিত হতে হবে। অন্যান্য পণ্যগুলোর কমপক্ষে ৫৫ শতাংশ আমেরিকায় উৎপাদিত হতে হবে। আর সেগুলোর মূল্য বিদেশি বিকল্পগুলোর চেয়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হতে পারবে।

জো বাইডেন সম্ভবত এই নতুন প্রান্তিক নীতিগুলো গ্রহণ করার পাশাপাশি এগুলোতে আরও বৃদ্ধি ঘটাবেন। তিনি নিশ্চিত করতে চান, উৎপাদন বাড়ার সাথে সাথে আমেরিকানদের চাকরি ও কাজের সুযোগও বাড়বে; যদিও তিনি কিভাবে এটি করবেন তা অস্পষ্ট। এই নীতির কারণে কোম্পানিগুলো কাজের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে।

অ্যাসোসিয়েটেড জেনারেল কন্ট্রাক্টরস অব আমেরিকা (এজিসি) এর জিমি ক্রিশ্চানসন বলেন, সমস্যার মুখোমুখী হওয়ার আগ পর্যন্ত এর যথাযথ গুরুত্ব বোঝা যায় না।’উত্তর আমেরিকার কোম্পানি নেটজচ পাম্পের একজন প্রতিনিধি অভিযোগ করেছেন যে, নতুন নীতির ফলে দেশে উৎপাদনের খরচ আরও বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদিত পণ্যের মাত্র ৩০ শতাংশ সরকারি বাজারে বিক্রি হয়। এই নতুন নিয়ম যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা শেষ করে দেবে। সরকারী-ক্রয় বিশেষজ্ঞ জিন গিয়ার মনে করেন, জো বাইডেনের সাক্ষরিত এই নতুন নীতিতে পরিবর্তনগুলো বেশ জটিল।

যুক্তরাষ্ট্রের এসব নতুন ক্রয়নীতি ব্যবসায়িক অংশীদার দেশগুলোর প্রতি অবজ্ঞাসূচক মনে হতে পারে। বাস্তবে এই পরিবর্তন বড় চুক্তিগুলোতে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ১ লাখ ৮২ হাজার ডলারের বেশি মূল্যের যে কোনও ক্রয়চুক্তি গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট এগ্রিমেন্টের (জিপিএ)-এর ১৯ সদস্য দেশের জন্য উন্মুক্ত, যার মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গভর্নমেন্ট একাউন্টেবিলিটি অফিসের হিসেব অনুযায়ী ২০১৪-১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের ক্রয় বাবদ ব্যয় হয়েছিল ২৯১ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বিদেশি কোম্পানিগুলোতে গিয়েছিল ৫ বিলিয়ন ডলার। আইনি পরিবর্তন এবং জিপিএ চুক্তিতে পরিবর্তন আনা ছাড়া বিদেশি কোম্পানিগুলোকে ফেডারেল সরকারের ক্রয় থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত করা কঠিন।

জো বাইডেন বলেছিলেন, তিনি সরকারি ক্রয়ের সাথে জড়িত আইনসমূহসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিধিমালার আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে চান। তবে এটাও খুব সহজ হবে না। গত নভেম্বর মাসে যখন ট্রাম্প প্রশাসন জিপিএ থেকে কিছু মেডিকেল পণ্য অপসারণের চেষ্টা করেছিল তখন ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড এবং ইইউর প্রতিবাদের মুখে এই চেষ্টা থেকে সরে আসতে হয়েছে। জিপিএ চুক্তি থেকে সরে এলে তাও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সমস্যাজনক হবে।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ২৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test