E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রধান গন্তব্য হওয়ার পথে চীনের বাধা করোনা

২০২১ ফেব্রুয়ারি ২৬ ১৬:১১:৫৬
বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রধান গন্তব্য হওয়ার পথে চীনের বাধা করোনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ে পড়তে চীন সরকারের কাছ থেকে শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিলেন হিবা বরোকিয়া। তার জন্য সেটা ছিল নতুন আশা, নতুন উপজীব্য। কিন্তু এখন বসে বসে শুধু কাঁদেন ১৯ বছর বয়সী এ মরোক্কান কিশোরী। চীনের কঠোর বিধিনিষেধের কারণে কাসাব্ল্যাঙ্কায় নিজেদের বাড়িতে বসে পড়াশোনা করতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি।

অবস্থা এমন হয়েছিল, একসময় চীনের আশা ছেড়ে দিয়ে স্থানীয় কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাওয়ার চিন্তা করেছিলেন হিবা। তবে বুঝতে পারছিলেন, মরক্কোর শিক্ষার মান কোনওভাবেই চীনের সমান নয়। একারণেই শেষপর্যন্ত হাল ছাড়েননি। এখনও ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন, কবে ফিরতে পারবেন চীনে।

হিবার মতো বিশ্বজুড়ে অগণিত বিদেশি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভাঙতে বসেছে বা ভেঙেই গেছে শুধু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে। এটি বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রধান গন্তব্য হওয়ার পথে চীনের আশাও অনেকটা ম্লান করে দিয়েছে।

২০১৯ সালে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যায় বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় ছিল চীন। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী পেয়েছিল তারা। এক্ষেত্রে চীনের ওপরে কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। অবশ্য বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যায় চীনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে। মহামারির কারণে চীনা প্রশাসন কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়ার পর থেকে দেশটিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রবেশ একপ্রকার অসম্ভবই হয়ে উঠেছে।

বিশ্বের প্রধান ‘শিক্ষাকেন্দ্র’ হয়ে ওঠার পথে চীনাদের সবচেয়ে বড় ভরসা আফ্রিকার শিক্ষার্থীরা। মহামারি আঘাত হানার আগে দেশটিতে ৮০ হাজারেরও বেশি আফ্রিকান শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছিলেন। আফ্রিকা থেকে শিক্ষার্থী টানায় ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র (৪৭ হাজার জন) ও যুক্তরাজ্যকে (২৯ হাজার জন) ছাপিয়ে গেছে চীনারা। এখন এগোচ্ছে সবার ওপরে থাকা ফ্রান্সের দিকে (১ লাখ ১২ হাজার জন)।

আফ্রিকায় শিক্ষাবৃত্তির মতো বিশেষ সুবিধাগুলোর রীতিমতো বন্যা বইয়ে দিয়েছে চীন। এডুকেশন সাব সাহারান আফ্রিকা নামে একটি ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থার হিসাব অনুসারে, আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলে পাওয়া ৪৩ শতাংশ শিক্ষাবৃত্তিই গেছে চীন সরকারের কাছ থেকে।

এখন বহু আফ্রিকান শিক্ষার্থীই আন্তর্জাতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘টেক আস ব্যাক টু চায়না’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চীনে ফেরার আকুতি জানাচ্ছেন। অনেকেরই অভিযোগ, প্রয়োজনীয় কোভিড-১৯ টেস্ট এবং কোয়ারেন্টাইনে রাজি থাকা সত্ত্বেও চীন সরকার তাদের আবেদনে সাড়া দিচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা একটি লিখিত আবেদনে বলেছেন, তাদের অনেক সময় মাঝরাতে অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে হয়। এধরনের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য তারা আর ফি দিতে চান না।

আফ্রিকান শিক্ষার্থীদের এই হতাশা আরও বাড়িয়েছে চীনে গত বছরের এক বর্ণবাদী ঘটনা। সেসময় দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংঝু শহরে কয়েকজন নাইজেরীয় নাগরিক করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর কয়েক ডজন আফ্রিকান শিক্ষার্থীকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।

তবে এত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনও আফ্রিকান শিক্ষার্থীদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। সেখানকার শীর্ষস্থানীয় একটি কলেজে এক বছর পড়তে চার হাজার ডলারের বেশি খরচ হয় না, যা ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় ১০ ভাগের এক ভাগ মাত্র। তাছাড়া চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়া এবং স্বাভাবিক সময়ে ভিসা পাওয়াও তুলনামূলক সহজ। একারণে হিবা বরোকিয়ার মতো বেশিরভাগ বিদেশি শিক্ষার্থীর কাছে এখনও চীনই ‘সেরা গন্তব্য’। দ্য ইকোনমিস্ট।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test