E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দুর্দশাগ্রস্ত হাইতিয়ানদের ধরে-বেঁধে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

২০২১ সেপ্টেম্বর ২০ ১১:৪১:৩৬
দুর্দশাগ্রস্ত হাইতিয়ানদের ধরে-বেঁধে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রেসিডেন্ট হত্যার জেরে হাইতির রাজনৈতিক সংকট চরমে, তার মধ্যেই দেশব্যাপী শক্তিশালী ভূমিকম্প লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে সব কিছু, এসেছে ঝড়ও। ফলে বেঁচে থাকার তাগিদে বাধ্য হয়েই দেশটির চরম দরিদ্র মানুষেরা একটু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পাড়ি জমাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। তবে তাদের গ্রহণ করতে নারাজ বাইডেন প্রশাসন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আশ্রয়প্রার্থী হাইতিয়ানদের ধরে-বেঁধে স্বদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, হাইতিয়ান অভিবাসনপ্রত্যাশীরা দলবেঁধে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ঢোকার চেষ্টা করছেন। এ পর্যন্ত ১৩ হাজারের মতো আশ্রয়প্রার্থী সীমান্তের যুক্তরাষ্ট্র অংশে পৌঁছাতে পেরেছেন। এখনো হাজার হাজার হাইতিয়ান রয়ে গেছেন সীমান্তসংলগ্ন মেক্সিকান শহর টাপাচুলায়। অপেক্ষা করছেন, কবে তাদের আশ্রয় দেবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি। যারা সীমান্ত পার হয়ে গিয়েছিলেন, তাদের জোরপূর্বক স্বদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, নাহয় ঠাঁই হচ্ছে বন্দিশিবিরে।

হাজার হাজার হাইতিয়ান অভিবাসনপ্রত্যাশী মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের দেল রিও আন্তর্জাতিক সেতুর নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সেখানে আচমকা হাজির হয় টেক্সাস জননিরাপত্তা বিভাগের একঝাঁক গাড়ি। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ আটকাতে সীমন্তে বেঁধে দেওয়া হয় হলুদরঙা পুলিশ টেপ।

মার্কিন বর্ডার প্যাট্রল প্রধান রাউল এল অর্টিজ জানিয়েছেন, দেল রিও ক্যাম্প থেকে এরই মধ্যে অন্তত ৩ হাজার ৩০০ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের হয় প্লেনে করে স্বদেশে নাহয় বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়েছে। তিনি আশা করছেন, বাকি সাড়ে ১২ হাজারের মতো অভিবাসনপ্রত্যাশীর মধ্য থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আরও তিন হাজার জনকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। আর অবশিষ্টদেরও সপ্তাহখানেকের মধ্যে সরানো হবে।

রাউল জানান, গত রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের সান আন্তোনিও থেকে হাইতির রাজধানী পোর্ট-অ্য-প্রিন্সের উদ্দেশে তিনটি প্লেন ছেড়ে গেছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্রুত অপসারণের জন্য আমরা (অভিবাসনপ্রত্যাশী) ব্যক্তিদের সেতুর নিচ থেকে সুবিধাজনক স্থানে সরিয়ে নিচ্ছি। দেশের আইন ও নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এই কাজ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন এ মার্কিন কর্মকর্তা।

হাইতিতে ফেরত পাঠানো উচিত নয়

কয়েক বছর ধরেই হাইতিয়ানরা যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয়ের খোঁজে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। ২০১০ সালের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের পর যুক্তরাষ্ট্রমুখী হতে শুরু করেন অনেকে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ফের প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে এর স্রোত আরও বেগবান হয়েছে। আর তার জন্য হাইতিয়ানরা কখনো হেঁটে, কখনো বাসে চড়ে বিপজ্জনক রুট নিচ্ছেন, যেখানে সশস্ত্র গোষ্ঠী ও মাদক পাচারকারী চক্রের হাতে পড়ার চরম ঝুঁকি রয়েছে।

সমালোচকদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট মইসি হত্যাকাণ্ডের পর হাইতিয়ানদের বিনাভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাইডেন, তার কারণেও অভিবাসনে উৎসাহী হয়েছেন অনেকে।

জো বাইডেন চলতি বছরের শুরুর দিকে ক্ষমতাগ্রহণের পরপরই মানবিকতার খাতিরে অভিবাসনপ্রত্যাশী শিশুদের ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে ট্রাম্প আমলে সৃষ্টি ‘টাইটেল ৪২’ নামে বিশেষ এক নীতি অক্ষুণ্ন রেখে ব্যাপকহারে অভিবাসনপ্রত্যাশী বহিষ্কার শুরু করেন। মানবাধিকার কর্মীরা বাইডেনকে ওই নীতি বাতিল করতে অনুরোধ জানিয়েছেন, বিশেষ করে সংকটাপন্ন হাইতির আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য।

হাইতিয়ান ব্রিজ অ্যালায়েন্সের আইনি পরিচালক নিকোল ফিলিপস বলেন, এমন মানবিক পরিস্থিতিতে ‘ভুল পদ্ধতি’ গ্রহণ করেছে বাইডেন প্রশাসন। এটি অনেকটা জ্বলন্ত বাড়ির লোকদের ঘরের ভেতর থাকতে বলার মতো। এটি পুড়ছে, তাদের অবশ্যই ঘর ছাড়তে হবে। তারা হাইতি ফেরত যেতে পারেন না।

নিকোল আরও বলেন, ফেরত পাঠানোর ভয়ে তারা (হাইতিয়ান) যদি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ না করে, তাহলে মেক্সিকোতেই থাকতে শুরু করবেন। মূলত এর মাধ্যমে মেক্সিকোর ঘাড়ে বোঝা তুলে দেওয়া হচ্ছে। এটি ঠিক নয়। আল জাজিরা।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test