E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জলবায়ু প্রতিবেদন বদলাতে ধনী দেশের লবিংয়ের তথ্য ফাঁস

২০২১ অক্টোবর ২১ ১৪:২৭:৪৯
জলবায়ু প্রতিবেদন বদলাতে ধনী দেশের লবিংয়ের তথ্য ফাঁস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সম্প্রতি জাতিসংঘ যে আলোচিত বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা বদলাতে জোর লবিং চালিয়েছিল বেশ কয়েকটি দেশ। এদের মধ্যে যেমন রয়েছে সৌদি আরব, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো ধনী দেশ, তেমনি রয়েছে ভারতের জ্বালানি গবেষণা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সংস্থার নামও। এরা সবাই নিজ নিজ স্বার্থরক্ষায় জাতিসংঘের জলবায়ু প্রতিবেদনটি বদলানোর সুপারিশ করেছিল। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত বিপুল নথিপত্র হাতে পেয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। তারাই এ তথ্য ফাঁস করেছে।

নথিতে দেখা যায়, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার দ্রুত বন্ধের প্রস্তাব বাদ দিতে জাতিসংঘের কাছে সুপারিশ করেছিল সৌদি আরব, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কিছু দেশ। এছাড়া, সবুজ প্রযুক্তি ব্যবহারে তুলনামূলক দরিদ্রদের অর্থ সাহায্য দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কয়েকটি ধনী রাষ্ট্র।

আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) প্রতিবেদনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ভিত্তিতেই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপের ঘোষণা আসার কথা ওই সম্মেলনে। তার আগেই প্রতিবেদন বদলাতে ধনী দেশগুলোর লবিংয়ের তথ্য ফাঁসের পর সম্মেলনের সফলতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, জাতিসংঘের কাছে বিভিন্ন দেশের সরকার, প্রতিষ্ঠান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা বিজ্ঞানীদের পাঠানো ৩২ হাজারের বেশি প্রস্তাবনার নথি তাদের হাতে পৌঁছেছে।

জীবাশ্ম জ্বালানি

ফাঁস হওয়া তথ্যে দেখা যায়, খসড়া প্রতিবেদনে যত দ্রুত বিশ্বজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে, তত দ্রুত এটি করার দরকার নেই বলে আপত্তি জানিয়েছে বেশ কিছু দেশ ও সংস্থা।

সৌদি তেল মন্ত্রণালয়ের এক উপদেষ্টা দাবি করেছেন, ‘তাৎক্ষণিক এবং ত্বরিৎ প্রশমন কার্যক্রম প্রয়োজন’-এর মতো বাক্যাংশগুলো প্রতিবেদন থেকে বাদ দেওয়া উচিত।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা আবশ্যক- প্রতিবেদনের এমন মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন অস্ট্রেলীয় সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। অথচ কয়লার ব্যবহার বন্ধ করা কপ২৬ সম্মেলনের বর্ণিত প্রধান উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম।

বর্তমানে সৌদি আরব বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী এবং অস্ট্রেলিয়া অন্যতম প্রধান কয়লা রপ্তানিকারক দেশ।

ভারত সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব মাইনিং অ্যান্ড ফুয়েল রিসার্চের এক জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী সতর্ক করে বলেছেন, কয়লা আরও কয়েক দশক জ্বালানি উৎপাদনের প্রধান উপাদান হিসেবে থাকতে পারে। কারণ হিসেবে তিনি সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের ‘মারাত্মক চ্যালেঞ্জ’-এর কথা উল্লেখ করেছেন। ভারত বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা ব্যবহারকারী দেশ।

বেশ কয়েকটি দেশ মাটির নিচে কার্বন ডাই অক্সাইড ধারণ এবং স্থায়ীভাবে সংরক্ষণে অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রযুক্তির পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছে। সৌদি আরব, চীন, অস্ট্রেলিয়া, জাপানের মতো বৃহত্তম জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী বা ব্যবহারকারী দেশগুলোর পাশাপাশি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক কার্বন ধারণ ও সংরক্ষণের (সিসিএস) পক্ষে মত দিয়েছে।

তাদের দাবি, এই সিসিএস প্রযুক্তি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ কিছু শিল্প খাত থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি সম্পর্কিত গ্যাস নির্গমন নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দিতে সক্ষম।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব জাতিসংঘের বিজ্ঞানীদের এই মতামত মুছে ফেলতে অনুরোধ করেছে যে, জ্বালানি ব্যবস্থাপনা খাতে ডিকার্বনাইজেশন প্রচেষ্টার মূলদৃষ্টি দ্রুত শূন্য-কার্বন উৎসে স্থানান্তরিত হওয়া এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার দ্রুত বন্ধ করা প্রয়োজন।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে সমস্যা দেখেছে আর্জেন্টিনা, নরওয়ের মতো দেশগুলোও। নরওয়ের মতে, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নির্গমন কমানোর সম্ভাব্য হাতিয়ার হিসেবে সিসিএস ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া উচিত।

জাতিসংঘের খসড়া প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছিল যে, সিসিএস হয়তো ভবিষ্যতে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু এর সম্ভাবনা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত ২ ডিগ্রি ও ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমানোর লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সিসিএস প্রযুক্তি সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে কিনা, তা নিয়ে বিশাল অস্পষ্টতা রয়েছে।

মাংস উৎপাদন কমানো

খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে মাংস ভক্ষণ কমানো প্রয়োজন- এর পক্ষে জোরালো প্রমাণ মিলেছে। তবে এর বিরোধিতা করেছে বিশ্বের বৃহত্তম দুই মাংস উৎপাদক দেশ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা।

খসড়ায় বলা হয়েছে, বর্তমান পশ্চিমা খাদ্যাভ্যাসের তুলনায় উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্যগ্রহণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে। ব্রাজিলের দাবি, এই তথ্য ভুল।

উভয় দেশই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ‘উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস’ ভূমিকা রাখে অথবা গরুর মাংসকে ‘উচ্চ কার্বনযুক্ত’ খাবার হিসেবে করা বর্ণনার কিছু লেখা মুছে ফেলা বা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test