E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

রক্তের দাগ লেগে থাকা পোশাক পশ্চিমা ক্রেতারা কিনবে না : সিনেটর মেনেন্দেজ

২০১৪ এপ্রিল ২৫ ১৫:৩৭:৫৮
রক্তের দাগ লেগে থাকা পোশাক পশ্চিমা ক্রেতারা কিনবে না : সিনেটর মেনেন্দেজ

আন্তজার্তিক ডেস্ক : বাংলাদেশি শ্রমিকদের রক্তের দাগ লেগে থাকা পোশাক কাপড় পশ্চিমা ক্রেতারা আর কিনবে না বলে বাংলাদেশের সরকার ও বিজিএমইকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

রানা প্লাজার মর্মান্তিক ধসের বছরপূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রভাবশালী সিনেটর রবার্ট মেনেন্দেজ।

সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির চেয়ারম্যান মেনেন্দেজ আরো বলেছেন, ভবন ধসে সহস্ত্রাধিক পোশাক শ্রমিকের প্রাণহানির পরও কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অধিকার বাস্তবায়নে বিজিএমইএ ও সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে আরেকটি ভয়াবহ আঘাত হানতে পারে। আর সেটা হলে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ ব্র্র্যান্ড’ শেষ হয়ে যাবে।

বিবৃতিতে মেনেন্দেজ বলেন, এক বছর আগে এই সপ্তাহে রানা প্লাজা ধসে ১,১৩০ জন বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু বিশ্ব বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে।

পরের এক বছরে যুক্তরাষ্ট্র, আইএলও ও বিদেশি ক্রেতারা কারাখানার নিরাপত্তায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও দেশের ভেতরে পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টদের অনেকেই বছরটি গতানুগতিকভাবেই কাটিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ডেমক্র্যাট দলীয় এই সিনেটর বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের অনেক কারখানার মালিক তাদের কারখানায় শ্রমিকদের ইউনিয়ন গঠনে বাধা দিচ্ছেন। তারা ইউনিয়ন নেতাদেরকে ছাঁটাই করছেন, এমনকি কারখানার ব্যবস্থাপকদের কেউ কেউ ইউনিয়ন সংগঠকদের ওপর ভয়াবহ হামলার সাথে যুক্ত।’

মেনেন্দেজ বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ আগের মতোই কারখানা মালিকদের রক্ষাকর্তা হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছে।
সংগঠনটি শ্রমিক ইউনিয়নবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতেও আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, নতুন ইউনিয়নের নিবন্ধনে বাংলাদেশ সরকার অগ্রগতি করলেও এখনো প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি ও তাদের (শ্রমিকদের) রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।

এর ফলে দেশে শ্রমিক সংগঠনের ক্ষেত্রে ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে এই সিনেটর বলেন, অনেক শ্রমিক চাকরি যাওয়ার ভয়ে ইউনিয়নে যোগ দিচ্ছে না এবং সঙ্গতকারণেই ইউনিয়ন সংগঠকরাও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ে আছে।

দেশের ভেতরে উদ্যোগের ঘাটতির কথা বলার আগে বাইরের ভূমিকার তুলে ধরে তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়ার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থার (আইএলও) বাংলাদেশের কারখানাগুলোর জন্য এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, কারখানা পরিদর্শন সমন্বয় করছে এবং ভবন ধসে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। এছাড়া ভবন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।
কারখানায় স্বাধীন ইউনিয়নের শক্তিশালী কণ্ঠ ছাড়া নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার শ্রমিকদের অন্য কোনো উপায় নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিজিএমইএ ও সরকার যদি ইউনিয়ন গঠনে দমন-পীড়ন অবিলম্বে বন্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ না নেয় তাহলে দেশের পোশাক খাতে রানা প্লাজার মতো আরেকটি দুর্ঘটনা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
তিনি বলেন, তখন মেইড ইন বাংলাদেশ ইমেজ নষ্ট হলে তা পুনরুদ্ধারের বাইরে চলে যাবে।

সবশেষে তিনি সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বলেন, বিজিএমইএ ও সরকারকে বুঝতে হবে, বাংলাদেশি শ্রমিকদের রক্তের দাগ লেগে থাকা পোশাক কাপড় পশ্চিমা ক্রেতারা আর কিনবে না।

(ওএস/এটি/এপ্রিল ২৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test