E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এত সোনা কেন কিনছে চীন?

২০২৪ এপ্রিল ০৯ ১৪:৫২:৪১
এত সোনা কেন কিনছে চীন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রচুর পরিমাণে সোনা কিনছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের পাশাপাশি চীনের এ পদক্ষেপের কারণে বিশ্বব্যাপী সোনার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এ সপ্তাহে প্রথমবারের মতো মূল্যবান এ ধাতুটির দাম ২ হাজার ২১২ ইউরো ছাড়িয়েছে।

বিনিয়োগকারীরা বৈশ্বিক অস্থিরতা ও মূল্যস্ফীতির সময় সোনাকে একটি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করেন। তাই করোনা পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতি, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনে চলমান সংঘাত সোনার সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়নার (পিবিসি) এই পদক্ষেপে উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও প্রভাবিত হয়েছে। তারাও সোনার রিজার্ভ বাড়াতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

কী করছে চীন?

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের মতে, পিবিসি সবশেষ ১৬ মাস ধরে তার সোনার রিজার্ভ বাড়িয়েছে। ২০২৩ সালে অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর তুলনায় পিবিসি অনেক বেশি সোনা কিনেছে।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে চীন ২২৫ মেট্রিক টন সোনা কিনেছে, যা বিশ্বের অন্য সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কেনা ১ হাজার ৩৭ টনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।

এই মুহূর্তে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে প্রায় ২ হাজার ২৫৭ টন সোনা মজুত রয়েছে। পিবিসির পাশাপাশি, চীনের সাধারণ নাগরিকরাও সোনার মুদ্রা, বার ও গহনা কিনছেন।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের প্রধান মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিস্ট জন রিড ব্লুমবার্গ টিভিকে বলেন, বছরের শুরু থেকেই আমরা চীনকে বিপুল পরিমাণ সোনা কিনতে দেখেছি। চীনের অভ্যন্তরীণ সাংহাই গোল্ড এক্সচেঞ্জে রেকর্ড পরিমাণ বেচাকেনা দেখেছি।

এত সোনা কেনার কারণ কী?

চীন বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য মার্কিন ডলারের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। বিশ্বের সংরক্ষিত মুদ্রা হিসেবে বেশিরভাগ পণ্যের দাম ডলারে নির্ধারিত হয় এবং বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি বাণিজ্যে ব্যবহৃত হয় এই মুদ্রাটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য গত ৩০ বছরে চীন বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করেছে, যার বেশিরভাগই ডলার।

একই পরিস্থিতি ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) গোষ্ঠীর অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ দেশগুলোর অর্থনীতি ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করতে প্রস্তুত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ব্রিকস ভবিষ্যতে একটি অভিন্ন মুদ্রা চালু করার কথাও ভাবছে, যা বিশ্বের সবেচেয়ে নিরাপদ মুদ্রা হিসেবে পরিচিত মার্কিন ডলারকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।

চীন কেন ডলার থেকে বৈচিত্র্য আনতে চায়?

ওয়াশিংটন তার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বজায় রাখতে ডলারকে কীভাবে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, তা নিয়ে চীনসহ ব্রিকসের সদস্য দেশগুলো উদ্বিগ্ন।

ডলারে বিনিময়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্র অনেক কম খরচে ঋণ নিতে পারে। রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সময় ওয়াশিংটন এই মুদ্রাকে কূটনীতির হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক রিজার্ভ জব্দ করাসহ মস্কোর ওপর কয়েক দফায় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

মার্কিন চাপের মুখে বেশিরভাগ রুশ ব্যাংককে সুইফট পেমেন্ট সিস্টেম থেকে বের করে দেওয়া হয়। সুইফট পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সহজেই লেনদেন করা যায়।

এছাড়াও, ভবিষ্যতে চীন যদি তার সামরিক শক্তি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বা ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়ায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে বেইজিংয়ের।

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, তার দেশ প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে তাইওয়ানকে আবারও দখল করতে পারে। গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত এই দ্বীপকে চীন নিজের অংশ বলে মনে করে।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোনা কেনার এই ধারা আরও কয়েক বছর অব্যাহত থাকবে। এটিকে ডলারের বিকল্প তৈরির একটি সংকেত হিসেবে দেখছেন তিনি।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ০৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test