E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মোদি আওয়ামী লীগকেই বেছে নিতে পারেন

২০১৪ জুন ০২ ১৩:৪১:২৮
মোদি আওয়ামী লীগকেই বেছে নিতে পারেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্ববিখ্যাত প্রতিরক্ষা সাময়িকী জেন্স ডিফেন্স উইকলি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে বিজেপি সরকারের সম্পর্ক কেমন যাবে সে বিষয়ে পূর্বাভাস দিতে গিয়ে বলেছে, মোদি সরকার শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকেই বেছে নিতে পারে। তবে তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন অনিশ্চিত থাকতে পারে।

এতে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে বিজেপি সরকারের সম্পর্ক কেমন যাবে সে বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের জন্য বিজেপির সহযোগিতার দিক থেকে কিছুটা স্বস্তির খবর মিলেছে।

বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র করতে পারে। যে স্থিতি বর্তমানে দেখা যাচ্ছে এর আয়ু বেশি দিন নেই। আরো নির্দিষ্ট মন্তব্য করা হয় যে, আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও কেবল ভারতের কূটনৈতিক সমর্থন নিয়েই তারা গত নির্বাচনটা করতে পেরেছিল।

মোদি সরকার শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকেই বেছে নিতে পারে। তবে তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন অনিশ্চিত থাকতে পারে। আর আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করবে।

গত ২৫ মে প্রভাবশালী বৃটিশ সাময়িকী এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জেন’স অবশ্য বলেছে, বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই কংগ্রেস-আওয়ামী লীগ সম্পর্ককে ‘বিদেশনীতির ব্যক্তিগতকরণ’ মনে করেন। তাই কংগ্রেস আমলে সম্পর্ক যেমনটা ছিল, সেটা আগের মতো থাকবে না।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার গত জানুয়ারির নির্বাচনে জয়লাভ করতে দেশব্যাপী সরকার বিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ওই নির্বাচন বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি বয়কট করে।

এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ প্রচণ্ড আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েছিল। আর নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে তখন তাকে তা মোকাবিলা করতে হয় এবং বহুলাংশে এটাই সত্য যে, এর অনেকটাই ভারতের দেয়া কূটনৈতিক সমর্থনের কারণে তারা তা করতে সক্ষম হয়েছিল। ভারতের এই সমর্থন প্রদানের পেছনে ছিল ভারতের বিদায়ী ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ব্যক্তিগত সম্পর্ক।

আইএইচএস জেন’স উইকলির মূল্যায়ন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ভারতের কাছ থেকে অব্যাহত সমর্থন পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ হবে। কারণ, আরেকটি অংশগ্রহণমূলক অনুষ্ঠানে বিএনপির দ্বারা সরকার বিরোধী আন্দোলনকে চাঙ্গা করার বিরাট ঝুঁকি রয়েছে।

এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি জেন’স-এর দেয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, বর্তমানের বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং বেসামরিক অস্থিরতা অপেক্ষাকৃত দুর্বল থাকার মেয়াদ সংক্ষিপ্ত হতে পারে।

নির্বাচনী প্রচারণায় বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদির যুদ্ধংদেহি মনোভাব বিশেষ করে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী ইস্যুতে এবং বিজেপির অন্যান্য সিনিয়র নেতার বক্ততা বিবৃতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে ভারতের নতুন সরকারের সম্পর্ক কম সহযোগিতামূলক হবে।

উপরন্ত ঢাকায় জেন’স-এর একটি সূত্রমতে, বিজেপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ককে ‘পারসোনালাইজেশন অব ফরেন পলিসি’ বা পররাষ্ট্রনীতির ব্যক্তিগতকরণ বলে বর্ণনা করেছেন। সম্ভবত, এই কারণে ঢাকা-দিল্লি কূটনীতি কম জোরালো হবে।

তবে আইএইচএস জেন’স মূল্যায়ন, আরো কতিপয় ফ্যাক্টর রয়েছে যা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিতে বিজেপিকে তাড়া করবে। বিজেপি সচেতন হবে যে, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির একটি ভারত বিরোধী অবস্থান রয়েছে। পূর্ববর্তী বিএনপি সরকারের আমলগুলোতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তাদের শীতল ছিল। সুতরাং কংগ্রেস কিংবা বিজেপির অধীনে যা-ই হোক না কেন, আওয়ামী লীগের জন্য কূটনৈতিক সমর্থন বজায় রাখাটা চূড়ান্ত অর্থে ভারতের স্বার্থের অনুকূল হবে।

জেন’স ডিফেন্স উইকলি আরো পূর্বাভাস দিয়েছে যে, বহু বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের মধ্যে ভারতে বাংলাদেশের অবৈধ চলাচলের বিষয়টি একটি মুখ্য উত্তেজনার বিষয় হয়ে আছে। নির্বাচনী প্রচারণাকালে মোদি এবং অন্যান্য সিনিয়র বিজেপি নেতাদের বক্তৃতার বিষয়টি প্রাধান্য লাভ করে। তাদের মতে, এটা হলো ভারতের বিরুদ্ধে ‘একটি নিঃশব্দ আগ্রাসন’।

গত ২০ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে বৈঠকে মোদি বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের ইস্যু মোকাবিলা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি নতুন সেল গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন। তারচেয়েও বড় কথা দক্ষিণপন্থি জাতীয়তাবাদী আরএসএস বিজেপির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। তারা নির্দিষ্টভাবে মোদিকে বিষয়টি দেখতে বলেছেন।

জেন’স পূর্বাভাস দিয়েছে, অবৈধ অভিবাসনের সঙ্গে জড়িতদের পাইকারী হারে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব। যদিও সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না- তবে ২০০৪ সালে ভারতীয় সরকারের অনুমান অনুযায়ী আসাম, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে ১২ লাখের বেশি বাংলাদেশি বসবাস করছে।

আরএসএস-এর সাবেক নেতা রাজনাথ সিং যেহেতু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন, তাই অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা হ্রাস করতে তিনি উদ্যোগী হতে পারেন। এর ফলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সীমান্তে তাদের নিরাপত্তা আরো জোরালো করতে পারে। ইতিপূর্বে সে ধরনের ব্যবস্থা বাংলাদেশ তীব্র আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। বিএসএফ সীমান্তে যদি শক্তি প্রয়োগ বৃদ্ধি করে তাহলে এই অসন্তোষ আরও বৃদ্ধি পাবে।

অন্যদিকে, তিস্তার পানি ভাগাভাগি এবং সীমান্ত বিরোধ অমীমাংসিত থেকে যেতে পারে। পূর্ববর্তী ভারত সরকার পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের বাধার মুখে এতে সফল হতে পারেনি। দুই দেশের মধ্যে সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা অব্যাহত থাকতে পারে।

বাংলাদেশের ‘ইসলামী জঙ্গিবাদ’ ভারতের জন্য আশু উদ্বেগের বিষয় হবে না। কিন্তু যদি এটা ক্রমশ একটি ইস্যুতে পরিণত হয়, তাহলে এই হুমকি মোকাবিলা করতে ভারত বাংলাদেশে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকারের ওপরই নির্ভরশীল হবে।

আঞ্চলিক নেতাদের মধ্যে নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম। তখন তিনি জাপান সফরে ছিলেন।

ভারতের নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজয়ের অর্থ হচ্ছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভারতে একটি শক্তিশালী মিত্র সরকার হারিয়েছে। অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে প্রাক নির্বাচনী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি থাকলেও এবং কংগ্রেস ও আওয়ামী লীগের ‘বিশেষ সম্পর্কে’র বিষয়ে সমালোচনা থাকলেও বিজেপি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।

বাংলাদেশ সরকার অভ্যন্তরীণভাবে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আনুকূল্য দিতে পারে। বিশেষ করে অবকাঠামো এবং জ্বালানি ক্ষেত্রে। তবে যদি বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিজেপি কঠোর ব্যবস্থা নেয় তাহলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সম্পদের ওপর আক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

(ওএস/এটিআর/জুন ০২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test