E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

“ঈশ্বর কোনো জাদুর কাঠিধারী যাদুকর নন”

বিবর্তন এবং বিগ ব্যাং তত্ত্বকে সত্য বলে ঘোষণা করলেন পোপ ফ্রান্সিস

২০১৬ ডিসেম্বর ২১ ১২:৪৩:৫৯
বিবর্তন এবং বিগ ব্যাং তত্ত্বকে সত্য বলে ঘোষণা করলেন পোপ ফ্রান্সিস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :নজিরবিহীনভাবে বিবর্তন এবং বিগ ব্যাং তত্ত্বকে সত্য বলে ঘোষণা করলেন খ্রিস্টান জগতের সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃত্ব পোপ ফ্রান্সিস। এছাড়া তিনি তার পূর্বসুরি পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের সৃষ্টিতত্ত্বের (বুদ্ধিমান নকশা) বিপরীতে ঘোষণা করেন, ঈশ্বর কোনো জাদুর কাঠিধারী যাদুকর নন।

সম্প্রতি পন্টিফিক্যাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস এ বক্তৃতা করার সময় তিনি এই ঘোষণা দেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, তার এই ঘোষণার ফলে সৃষ্টিবাদ এবং বুদ্ধিমান নকশার যে “ছদ্ম তত্ত্বগুলো” আছে সেগুলোর অবসান ঘটল। অনেকের দাবি তার পূর্বসুরি ষোড়শ বেনেডিক্ট ওই তত্ত্বগুলোর পেছনে উৎসাহ যুগিয়েছেন।

ফ্রান্সিস ব্যাখ্যা করে বলেন, দুটো তত্ত্বের কোনোটিই স্রষ্টার অস্তিত্বের সঙ্গে বেমানান নয়। বরং ওই তত্ত্বগুলোর জন্য স্রষ্টার অস্তিত্ব থাকাটা জরুরি।

ফ্রান্সিস বলেন, আমরা যখন জেনেসিসে সৃষ্টিতত্ব সম্পর্কে পড়ি তখন আমরা ঈশ্বরকে একজন যাদুকর ভাবার ঝুঁকিতে পড়ে যাই। যিনি একটি যাদুর কাঠি দিয়ে যে কোনো কিছু করতে সক্ষম। কিন্তু বিষয়টা আসলে এমন নয়।

বিগ ব্যাং তত্ত্ব, যেটিকে আজকে আমরা বিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কিত তত্ত্ব হিসেবে মেনে নিয়েছি তার সঙ্গে ইশ্বরের অস্তিত্ব থাকার কোনো বিরোধ নেই। বরং এই তত্ত্ব সত্য হওয়ার জন্য ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকাটা জরুরি।

প্রকৃতিতে ঘটে চলা বিবর্তনের ধারণা সৃষ্টিবাদের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ বিবর্তনের জন্য দরকার এমন সব সত্ত্বার সৃষ্টি যেগুলো বিবর্তিত হয়।

এতোদিন খ্রিস্টান ক্যাথলিক গির্জা বিজ্ঞানবিরোধী হিসেবেই খ্যাত ছিল। ক্যাথলিক গির্জার বিজ্ঞানবিরোধীতার সবচেয়ে বিখ্যাত ঘটনাটি হলো, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে এই তত্ত্বটি দেওয়ার গ্যালিলিওকে ধর্মবিরোধী হিসেবে আখ্যা দিয়ে তার এই তত্ত্ব প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য করা হয়।

কিন্তু পোপ ফ্রান্সিসের এই বক্তব্য পোপ পিউস দ্বাদশ এর প্রগতিশীল কাজের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। যিনি বিবর্তনের ধারণাকে গ্রহণ করে নেওয়ার জন্য দ্বার উম্মুক্ত করেছিলেন। এবং সক্রিয়ভাবেই বিগ ব্যাং তত্ত্বকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।

১৯৯৬ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলেন, বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুমানের চেয়েও বেশি কিছু। এবং এটি কার্যকরভাবে প্রমাণিত একটি সত্য।

পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট এবং তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারাও প্রকাশ্যেই এই ধারণার অনুমোদন করতেন যে, তাদের সৃষ্টিবাদ সম্পর্কিত ধারণা “বুদ্ধিমান নকশা” (Intelligent Design) বিবর্তনের ধারণার বিরোধী নয়। বরং “বুদ্ধিমান নকশা” বিবর্তনের ধারণার সত্যতা প্রতিপাদন করে। আর প্রাকৃতিক নির্বাচনের ধারণা নিজে নিজেই বিশ্বজগতের জটিলতা ব্যাখ্যা করার জন্য পর্যাপ্ত নয়।

২০০৫ সালে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী কার্ডিনাল সোয়েনবর্ন এক নিবন্ধে লিখেছেন, “সাধারণ পূর্বপুরুষগণ থাকার অর্থে হয়তো বিবর্তন সত্য হতে পারে। কিন্তু নব্য-ডারউইনবাদি অর্থে বিবর্তনবাদ সত্য নয়; যা একটি অনির্দেশিত এবং অপরিকল্পিত প্রক্রিয়া। ”

ইতালির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স এর সভাপতি অধ্যাপক জিওভান্নি বিগনামি ইতালিয়ান সংবাদ সংস্থা এডনক্রোনোসকে বলেন, “পোপ ফ্রান্সিসের এই বিবৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিগ ব্যাং এর সরাসরি বংশধর যা এই বিশ্বজগতকে সৃষ্টি করেছে। বিবর্তন এসেছে সৃষ্টি থেকে। ”
মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক গিউলিও গিওরেল্লো বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন পোপ ফ্রান্সিস বিজ্ঞানের সঙ্গে ক্যাথলিক ধর্মতত্ত্বের বিরোধ বা অনুমিত বিরোধ সংক্রান্ত আবেগ কমানোর চেষ্টা করছেন।

পোপ ফ্রান্সিস এবং তার পূর্বসুরি ষোড়শ বেনেডিক্টের মধ্যে যে বিশাল ধর্মতাত্ত্বিক ব্যবধান আছে তা সত্ত্বেও ফ্রান্সিস তার পূর্বসুরির প্রশংসা করেন। ভ্যাটিকান গার্ডেনের পন্টিফিক্যাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের সদরদপ্তরে বেনেডিক্টের একটি আবক্ষ মুর্তি উম্মোচনের সময় ফ্রান্সিস এই প্রশংসা করেন।
ক্যাথলিক নিউজ সার্ভিস এর একটি অনুবাদ মতে, ফ্রান্সিস বলেন, “কেউই কখনো বলতে পারেনি যে জ্ঞানচর্চা এবং বিজ্ঞান তাকে এবং ঈশ্বর ও প্রতিবেশিদের জন্য তার ভালোবাসাকে টলাতে পেরেছে। ”
“বরং বিপরীতক্রমে, জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং প্রার্থনা তার হৃদয় এবং চেতনাকে আরো সম্প্রসারিত করেছে। আসুন ঈশ্বর পোপ বেনেডিক্টকে সৃষ্টি করে চার্চ এবং বিশ্বকে যে উপহার দিয়েছেন তার জন্য আমরা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই। ”

সূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট




(ওএস/এস/ডিসেম্বর ২১, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test