E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভূমধ্যসাগরে ১৩শ অভিবাসনপ্রত্যাশী উদ্ধার

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ০৫ ১০:২৮:৪৩
ভূমধ্যসাগরে ১৩শ অভিবাসনপ্রত্যাশী উদ্ধার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :ভূমধ্যসাগর থেকে একদিনে ১৩শ-এরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার ইতালির কোস্টগার্ডের পৃথক ১৩টি মিশনে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়।
এ নিয়ে তিনদিনে সাগরে ভাসমান মোট ২৬শ জন ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এলেন ইতালির উপকূলরক্ষীরা।

ইতালির কোস্টগার্ডের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার উদ্ধারকৃতরা আলাদা ১৩টি নৌযানে ছিলেন। ইতালির কোস্টগার্ড এবং ইতালি ও যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনীর জাহাজ, বাণিজ্যিক জাহাজ, বেসরকারি সংস্থার নৌকাযোগে তাদের উদ্ধার করা হয়।

এর আগে গত বুধবার আরও প্রায় ১৩শ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়।
প্রতিনিয়ত লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইতালির পথে যাত্রা করছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। ইউরোপমুখী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটা প্রধান রুটে পরিণত হয়েছে ভূমধ্যসাগরের এই এলাকা। ২০১৬ সালে এ পথ পাড়ি দিয়েছেন রেকর্ড সংখ্যক এক লাখ ৮১ হাজার শরণার্থী। এদের অধিকাংশই সমুদ্রযাত্রা করেছেন পাচারকারীদের ডিঙি নৌকায়। আর সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ।

জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রতিনিয়ত এভাবেই স্বপ্নভূমির উদ্দেশে দেশ ছাড়ছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাহাজ বা নৌকায় চড়ে বসছেন অসংখ্য শরণার্থী। আর উত্তাল সাগরের বুকে একের পর নৌকাডুবিতে প্রাণ যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষের।

জাতিসংঘের হিসাবে, ২০১৫ সালে অধিকতর ভালো জীবনের সন্ধানে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচ হাজারের অধিক নারী, পুরুষ ও শিশু। মানব পাচারকারীদের শিকারে পরিণত হয়েছেন ১০ সহস্রাধিক মানুষ। আর বিদেশি বিদ্বেষী নীতি এবং বিদ্যমান ভয়-আতঙ্কে বলির পাঁঠায় পরিণত হয়েছে ১০ লক্ষাধিক মানুষ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুনিয়াজুড়ে জীবন বাঁচাতে আর মাথা গোঁজার জন্য নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর নানা দিকে ছোটাছুটির ঘটনা এর আগে আর ঘটেনি। ২০১৪ সালে যুদ্ধ-দাঙ্গাপীড়িত বা অভাবের তাড়নায় প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ নিজের জন্মভূমি আর ঘরবসত ছেড়ে নানা দেশে পাড়ি দিয়েছিল। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের একটা বড় অংশই যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার নাগরিক। যুদ্ধাবস্থা থেকে বাঁচতে দলে দলে ভিনদেশের পথে ছুটছেন দেশটির বাসিন্দারা।

ইউরোপের অভিবাসী এবং শরণার্থী–বিষয়ক সংগঠনগুলো মূল সমস্যার পাঁচটি উপাদান চিহ্নিত করেছে। এগুলো হচ্ছে- ১. সিরিয়া, ইরাক ও লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধের তীব্রতা আরও বেড়ে যাওয়া, ২. যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে শিগগিরই সমস্যা সমাধানের আশা না থাকা, ৩. প্রতিবেশী দেশগুলোর শরণার্থীদের সমস্যা ও পুনর্বাসনের ব্যাপারে অনীহা, ৪. তুরস্কে বসবাসরত সিরিয়ার শরণার্থীদের যেকোনো সময় ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা, ৫. সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বিভক্ত বলকান রাষ্ট্র সার্বিয়া, কসোভো মন্টেনেগ্রো ও মেসিডোনিয়ার মতো দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়।

২০১৫ সালে সমুদ্রে তুরস্ক ও গ্রিসের মাঝামাঝি এলাকায় নিহত হয়েছেন ৭০০-এর বেশি শরণার্থী। এদের মধ্যে অন্তত ১৮৫ জন শিশু। এই শিশুদের অন্তত পাঁচ শতাংশের বয়স দুই বছরের কম। ভাগ্যবিড়ম্বিত এসব শিশুদের অধিকাংশই সিরিয়া, আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে পরিবারের সঙ্গে যাত্রা করেছিল। এদের অধিকাংশের বয়স ১২ বছরের নিচে।

২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে তুরস্কের উপকূলে সন্ধান মেলে আয়লান নামের এক সিরীয় শিশুর মৃতদেহ। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে নিথর পড়ে থাকা শিশু আয়লান কুর্দির নাম শুনলে এখনও স্তব্ধ হয়ে যান অনেকে। ছোট নৌকায় থাকা আয়লান ও তার ভাই ভেসে যায় তুরস্কের সৈকতে। তাদের মা ভেসে যান দূরের অন্য এক সৈকতে। এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সপরিবারে সাগরে ভাসছেন হাজার হাজার আয়লান কুর্দি। এই শরণার্থীদের সলিল সমাধি যেন থামছেই না।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, আল জাজিরা


(ওএস/এস/ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test