E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রাচীন মিশরের "হৃদয়হীন" এক নারীর মমি

২০১৪ এপ্রিল ১০ ১৭:০৯:৪৬
প্রাচীন মিশরের

আন্তজার্তিক ডেস্ক : প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মানুষের মমি করার প্রচলনটি এমনিতেই যথেষ্ট রহস্যময়। এর ওপরে যদি সেই মমির মাঝে থাকে বিভিন্ন রকমের অস্বাভাবিকতা, তবে তা নিয়ে ধাঁধাঁয় পড়তে হয় বই কি। এমনই এক ধাঁধাঁময় মমি খুঁজে পাওয়া গেছে যার মস্তিষ্ক রয়েছে অটুট, অথচ হৃদয় নেই। তার ওপরে সেই নারী মমির শরীরের ওপর পাওয়া গেছে দুইটি কাঠের তক্তা, যা দিয়ে সম্ভবত কোনো উপাচার কারে তার ক্ষত পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছিলো।

আজ থেকে প্রায় ১,৭০০ বছর আগে এই নারী জীবিত ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সময়ে মিশর ছিলো রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে এবং সে সময়ে খ্রিস্টধর্ম ছড়িয়ে পড়ছিল। ৩০ থেকে ৫০ বছরের মাঝে ছিলো তার বয়স। এই নারীর নাম জানা সম্ভব হয়নি। অন্যান্য মিশরীয়দের মতো তারও দাঁতে অনেক সমস্যা ছিলো এবং অনেকগুলো দাঁত ছিলো না।

রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ধীরে ধীরে মমি করার প্রচলন কমে আসছিলো এবং মানুষ খ্রিস্টধর্মের রীতিনীতি মানা শুরু করছিলো। কিন্তু এই নারী এবং তার পরিবার তখনও ছিলো সনাতন মিশরীয় প্রথার অনুসারী। এ কারণে তাকে মমি করা হয়। মমি করার জন্য তার পেটের নাড়িভুঁড়ি, পাকস্থলী, যকৃৎ এমনকি হৃৎপিণ্ডও বের করে নেওয়া হয়। কিন্তু মস্তিষ্ক রেখে দেওয়া হয়। বিভিন্ন মশলা এবং শ্যাওলা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় তার মাথা ও পেট, এরপর সম্ভবত তাকে কাপড়ে পেঁচিয়ে কফিনে রাখা হয়। তার শরীর ফুটো করার পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয় লিনেন এবং রজন দিয়ে, তারপর একে সারিয়ে তোলার জন্য দুইটি কাঠের তক্তা রাখা হয় তার পেট এবং কাঁধের ওপর। শুধু সারিয়ে তোলাই নয়, বরং তার অপসারিত হৃৎপিণ্ডের অভাব পূরণ করার জন্যেও এগুলো রাখা হতে পারে।

এই মমি এবং তার কফিন এখন রাখা আছে মন্ট্রিলের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির রেডপাথ মিউজিয়ামে। এটা ১৯ শতকে লুক্সর থেকে কেনা হয়েছিলো। তবে সেটাই কি তার আসল কফিন নাকি তাকে খুঁজে পাওয়ার পরে এই কফিনে পুরে ফেলা হয়, তা জানা যায় নি।
হৃৎপিণ্ডের কি হলো?

মিশরীয়দের মাঝে হৃৎপিণ্ডের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। কারণ তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত্যুর পরে তাদের হৃদয় দাঁড়িপাল্লায় মেপে দেখা হবে সে পরকালে প্রবেশের যোগ্য কি না। এ কারণে মমি বিশারদেরা ভাবতেন মমি তৈরির সময়ে হৃৎপিণ্ড অপসারণ করা হয় না। কিন্তু এই হৃদয়হীন মমি এবং সাম্প্রতিক সময়ে পাওয়া আরও কিছু মমি দেখে এই তত্ব ভুল মনে হয়। এই হৃৎপিণ্ডও অপ্সারনের পর তা দিয়ে কি করা হতো? ধারণা করা হয় অভ্যন্তরীণ অঙ্গ সংরক্ষণের বিশেষ পাত্রে একে সংরক্ষন করে রাখা হতে পারে কিন্তু এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় না।
তক্তা ব্যবহার করে ক্ষত সারিয়ে তোলা?

মমির কাঁধের ওপর রাখা তক্তাটি তার হৃৎপিণ্ডের বদলি হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে। কিন্তু তার পেটের ওপর রাখা তক্তার কাজ কি তা ভেবে বের করা যাচ্ছে না। সম্ভবত অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বের করে ফেলার জন্য যে ফুটো তৈরি করা হয়েছিলো তাকে সারিয়ে তুলে সেই নারীর পরকালের জীবন সহজ করে ফেলাই ছিলো এর উদ্দেশ্য।


(ওএস/এটি/ এপ্রিল ১০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test