E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শাশুড়ি নয় বন্ধু ছিলেন তিনি

২০১৭ মে ১৪ ১৩:৫৫:৫৯
শাশুড়ি নয় বন্ধু ছিলেন তিনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শাশুড়ি নয় তিনি আমার বন্ধু ছিলেন। বিপদে পড়লে সব সময় সঠিক রাস্তা দেখিয়ে দিতেন। কিন্তু কখনও জোর করে নিজের মতামত চাপিয়ে দেননি। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নিয়ে এভাবেই মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী।

শনিবার দিল্লির তিন মূর্তি ভবনে ইন্দিরা গান্ধীর জীবনী ‘ইন্ডিয়াজ ইন্দিরা’র প্রকাশনী অনুষ্ঠান ছিল। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সেখানে হাজির হয়েছিলেন সোনিয়াও।

গান্ধী পরিবার বিশেষত ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তার রসায়ন নিয়ে প্রশ্ন করলে সোনিয়ার বক্তব্য পড়ে শোনান রাহুল। তাতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সোনিয়া লিখেছেন, ‘এমনি এমনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হননি। চালিয়াতি, ভণ্ডামি দু’চোখে দেখতে পারতেন না তিনি। অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ছিলেন। সহজেই ছলচাতুরি, ভণ্ডামি ধরে ফেলতেন।

তার মধ্যে অত্যন্ত উদার দেশপ্রেম দেখেছি আমি। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় মহান ব্যক্তিদের খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। সে নিজের বাবা জওহরলাল নেহরু হোক বা গান্ধীজি। তাদের আদর্শই মনে জায়গা করে নিয়েছিল। তার মনে সকলের জন্য জায়গা ছিল। সে জন্যই মানুষের এত কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। চিন্তা-ভাবনা এত উন্নত ধরনের ছিল যে শুধুমাত্র ভারতীয় হিসেবে নয়, বিশ্ব নাগরিক হিসেবে নিজের পরিচয় গড়ে তুলতে পেরেছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সালে আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে যান। কিন্তু আজও মানুষ তাকে দেশের সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্মরণ করেন। এর চেয়ে বড় পাওনা কিছু হতে পারে না।’

জন্মসূত্রে ইতালীয় হলেও, রাজীব গান্ধীর সঙ্গে বিয়ের পর ভারতেই থেকে গিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী। ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছেন। এর জন্য শাশুড়িকেই কৃতিত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে জীবনের ১৬ বছর কাটাতে পেরে আমি ধন্য। আমি যে ইন্দিরা গান্ধীকে চিনতাম তিনি একধারে মা, শাশুড়ি আবার ঠাকুমাও। অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। কী সহজেই না আমাকে মেনে নিয়েছিলেন। আমি বরং ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। লজ্জায় বেশি কথাও বলতে পারতাম না। কিন্তু তিনিই আমাকে নিজের বাড়ির সদস্য করে নিয়েছিলেন। ধৈর্য্য ধরে ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটিয়েছিলেন। দেশের গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরেছিলেন আমার সামনে। তার জন্যই সকলের সঙ্গে মিশে যেতে পেরেছি। নিজের মাকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে দেখেছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর একদম নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন। তাই অন্যের ব্যথা, বেদনা সহজেই অনুভব করতে পারতেন। আমার সঙ্গে কখনও শআশুড়ির মতো আচরণ করেননি। বরং খুব কাছের বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

কখনও জোর করে নিজের মতামত চাপিয়ে দেননি আমার ওপর। আমি সন্তানসম্ভবা থাকাকালীন অবশ্য করেছিলেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোর করে খাওয়াতেন। রাজনীতির বাইরেও ইন্দিরা গান্ধীর নিজস্ব একটি জগৎ ছিল বলে জানিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী। তার দাবি, ‘রাজনীতির বাইরেও অনেক কিছুতে আগ্রহ ছিল মায়ের। বাড়িতে নানা সংস্কৃতির মেলবন্ধন তো ছিলই, তবে নানা দেশের বইপত্রও পড়তেন। অনেকেই হয়ত জানেন না যে তাবড় লেখক, শিল্পী এবং সমাজকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন তিনি। আজকাল মানুষের মধ্যে পরিবেশ রক্ষা নিয়ে সচেতনতা দেখা যায় বটে। তবে বাকিদের তুলনায় ঢের আগেই পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন তিনি।

(ওএস/এসপি/মে ১৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test