E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চাকমাদের নাগরিকত্ব নিয়ে ভাবছে ভারত

২০১৭ সেপ্টেম্বর ১৪ ১০:২৯:২৭
চাকমাদের নাগরিকত্ব নিয়ে ভাবছে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নাগরিকত্ব তো দূরে থাক, শরণার্থী হিসেবেও রোহিঙ্গাদের রাখতে চায় না ভারত। কিন্তু চাকমাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে দেশটি।

দীর্ঘদিন ধরে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সহিংসতার মুখে প্রাণ বাঁচাতে ভারতে আশ্রয় নেয় প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম। সম্প্রতি আবারো যখন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনী গণহত্যা চালাচ্ছে, তখন আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ‘নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি’ হিসেবে উল্লেখ করে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে ভারত সরকার।

রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা নিধনের এই সংকটকালীন সময়ে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বুধবার চাকামাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে বৈঠক করেছেন। ভারতের অরুণাচল প্রদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়া বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাকমারা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেতে পারে। তবে স্থানীয় জনগণ সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপের বিরোধী।

টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চাকমারা বৌদ্ধ। ধর্মীয় কারণে ১৯৬০-এর দশকে তৎকালীন পাকিস্তান চাকমা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন চালাতে শুরু করলে হাজারে হাজার চাকমা ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলো দিয়ে প্রবেশ করে। নির্যাতনের মুখে চাকমারা ছড়িয়ে পড়ে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, ত্রিপুরা, মিজোরাম, আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে।

খবরে আরো বলা হয়েছে, চাকমারা বৌদ্ধ, হাজংরা হিন্দু। এই উভয় জাতিগোষ্ঠীর মানুষ তৎকালীন আসামের লুসাই পাহাড় জেলা (বর্তমানে মিজোরাম রাজ্য) দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। তারপর তারা অরুণাচল প্রদেশে আসে। ভারতের কর্মকর্তারা বলছেন, এদের সংখ্যাটা এখন এক লাখের কাছাকাছি।

অরুণাচল প্রদেশ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন, ‘তৎকালীন কংগ্রেস সরকার চাকমাদের অরুণাচল প্রদেশে থাকতে দেয়, কিন্তু তাদের অন্য কোথাও রাখা উচিত ছিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের সম্মতি না নিয়ে চাকমাদের অরুণাচল প্রদশে থাকতে দিয়ে ভুল করেছে কংগ্রেস।’

২০১৫ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট চাকমাদের নাগরিকত্ব দিতে সরকারকে নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং মূলত সেই নির্দেশের আলোকে ব্যবস্থা নিতে চাইছেন।

রাজনাথের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন অরুণাচল প্রদেশের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু। তিনি বলেন, চাকমাদের নাগরিকত্ব দিলে রাজ্যের জনমিতি পাল্টে যাবে। শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো ও অন্যরা দাবি করছে, চাকমারা ভারতীয় হিসেবে স্বীকৃতি পেলে স্থানীয় আদিবাসীরা আরো সংখ্যালঘু হবে যাবে, তারা চাকরি হারাবে, নতুন কাজ পাবে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ অবশ্য বলছেন, চাকমাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হলেও তারা ভূমির মালিক হতে পারবে না। আর যেসব চাকমা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ও জঙ্গল এলাকায় বসবাস করছে, তাদের চলাফেরার জন্য অনুমতিপত্র দেওয়া হবে।

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রধান জেইদ রাদ আল-হুসেইন বলেছেন, ‘যখন মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চলছে, এমন সময়ে তাদের সেদেশে ফেরত পাঠানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত, আমি তার নিন্দা করছি।’ তবে এর বিরুদ্ধে এক বিবৃতিতে ভারত বলেছে, ‘অনেক দেশের মতো আমরাও অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে তারা নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াতে পারে।’

(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test