E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নিপাহ ভাইরাস এড়িয়ে খেজুরের রস খাবেন যেভাবে

২০২২ জানুয়ারি ১০ ১৫:৪৯:৩৪
নিপাহ ভাইরাস এড়িয়ে খেজুরের রস খাবেন যেভাবে

লাইফস্টাইল ডেস্ক : শীতকাল আসতেই খেঁজুরের রসের ঘ্রাণ ও স্বাদ নেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়! অনেকেই এ সময় গাছ থেকে খেজুরের কলসি নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস খেয়ে থাকেন। আবার অনেকে খেজুরের রস চুলায় জ্বাল দিয়ে সিরাপ, পায়েস বা ক্ষীর তৈরি করে খান।

এ ছাড়াও খেজুরের রসের তৈরি ঝোলা গুড়, পাটালি, নলেন গুড়, ভেলি গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড়সহ নানা ধরনের পিঠার বেশ সুখ্যাতি আছে।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশে সাধারণত কার্তিক থেকে মাঘ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ হয়ে থাকে। এদেশে সবচেয়ে বেশি রস সংগ্রহ হয় যশোর, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরে।

তবে খেজুরের রস খাওয়ার মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়ানোর আতঙ্ক সবার মনেই রয়েছে। বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ ভাইরাস আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, নিপাহ ভাইরাস এক ধরনের ‘জুনোটিক ভাইরাস। যা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। পরে সেটি অন্যান্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।

বিশ্বে প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ায় শূকর খামারিদের মধ্যে। পরবর্তীতে এই ভাইরাস বাংলাদেশে শনাক্ত হয় ২০০১ সালে।

এরপর জানা যায়, বাদুড়ই নিপাহ ভাইরাস খেজুরের রসে ছড়িয়ে দিয়েছে। খেজুরের রসের হাঁড়িতে বাদুড়ের মল লেগে থাকতে দেখা যায়।

আইইডিসিআরের তথ্যমতে, ২০০১-২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে ৩০৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা মোট আক্রান্তের প্রায় ৭০ শতাংশ।

এখন পর্যন্ত নিপাহর সংক্রমণ নওগাঁ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, রংপুরসহ দেশের ৩১টি জেলায় দেখা গেছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয়। এতে রোগী জ্বর ও মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। এক পর্যায়ে খিচুঁনিও দেখা দিতে পারে।

কীভাবে খেজুরের রসে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায়?

রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা সারারাত একটি পাত্র গাছে ঝুলিয়ে রাখেন। যেখানে নিশাচর প্রাণী রাতে বাদুড় রস পান করতে আসে। বাদুড় যখন খেজুরের রসে মুখ দেয়। তখন তাদের মুখ থেকে নিঃসৃত লালা এমনকি তাদের মলমূত্র খেজুরের রসের সঙ্গে মিশে যায়।

এই দূষিত রস কাঁচা অবস্থায় খেলে নিপাহ ভাইরাস সরাসরি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। ফলে জ্বর, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, বমি, ডায়রিয়া নানা ধরণের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। যা মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে।

খেজুরের রস যেভাবে খাবেন?

নিপাহ্ ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে এখনো কোনো টিকা বা কার্যকর চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। এ কারণে খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন।

প্রথমত রস সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। চেষ্টা করতে হবে দ্রুত রস বিতরণ করার ও ঢেকে রাখার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ ভাইরাস থেকে নিস্তার পাওয়ার প্রধান উপায় হলো গাছগুলোর রস সংগ্রহের জায়গায় প্রতিরক্ষামূলক আবরণ বা স্যাপ স্কার্ট ব্যবহার করা। যেন বাদুড় এর সংস্পর্শে আসতে না পারে।

স্যাপ স্কার্ট হলো- বাঁশ, কাঠ, ধইঞ্চা, পাটের খড়ি বা পলিথিন দিয়ে বানানো বেড়া। যেটা রসের নিঃসরণের চোঙের মাথা থেকে কলসির মুখ পর্যন্ত পুরোটা গাছের সঙ্গে বেঁধে ঢেকে রাখা।

তবে আইসিডিডিআর’বির গবেষকরা গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে দেখতে পেয়েছেন, রসের হাড়ির চারপাশ জাল বা স্যাপ স্কার্ট দিয়ে ঢাকা থাকলেও বাদুর কলসির মুখ বরাবর প্রস্রাব করে। ফলে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।

তাই কাঁচা খেজুরের রস পান করা থেকে বিরত থাকুন। জীবন বাঁচাতে রস সেদ্ধ করে পান করুন। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, রস সংগ্রহের পর আগুনে ৭০-৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে কিছু উত্তপ্ত করতে হবে। তাহলেই ভাইরাস মরে যাবে।

খেজুরের রস এতোটা নিয়ম ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে সংগ্রহ করা হয়েছে কি না সেটা নিশ্চিত হওয়া জরুরি এজন্য বিশ্বস্ত সূত্রে রস সংগ্রহ করুন। বিবিসি।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১০, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test