E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দোলের রং লাগুক প্রাণে; বাঁচুক ত্বক

২০১৪ মার্চ ১২ ১৫:৩৪:২৯
দোলের রং লাগুক প্রাণে; বাঁচুক ত্বক

৪ দিনের মাথায় দোল৷ নিয়ম মেনে রং না খেললে দফারফা হবে ত্বক ও চুলের৷ কাজেই প্রস্ত্ততি শুরু করুন আজ থেকেই৷ পরামর্শ দিচ্ছেন অনামিকা রায়

 

যতই ভাবুন মুখ বাঁচিয়ে দোল খেলবেন, কতটা পেরে উঠবেন বলা মুশকিল৷ কে কোন ধরনের রং নিয়ে আসরে নামবেন তাও অজানা৷ আপনার ত্বকের সুরক্ষার কথা ভেবে অন্য জন দেড়া দামের ভেষজ রং ব্যবহার করবেন এমন আশা, শেষমেশ দুরাশায় পরিণত হওয়ার চান্স খুবই বেশি৷ অতএব আটঘাট বেঁধে কাজে নামুন৷ ডি ডে-র প্রস্ত্ততি শুরু করুন আজ থেকেই৷

 

দোল খেলার প্রস্তুতি

 

আজ থেকে চড়া রোদ এড়িয়ে চলুন৷ সরাসরি রোগ লাগলে সান অ্যালার্জি বা অদৃশ্য যে ক্ষতি হয় ত্বকের তার রঙের ক্ষতিকে বাড়িয়ে দিতে পারে বহুগুণ৷

 

রোদে বেরোনোর আগে তো বটেই, ঘরেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন৷ ৩০ এসপিএফ-এর৷ সকাল ৯টা, বেসা ১২টা ও বিকেল ৩টায়৷

 

মৃদু সাবান ও মৃদু শ্যাম্পু ব্যবহার করুন৷ ত্বক বা চুল যাতে রুক্ষ না হয়ে যায়৷ রুক্ষ ত্বকের রঙের ক্ষতিকর প্রভাব বেশি হয়৷

 

এমনিতেই যাঁদের শুষ্ক ত্বকের ধাত, তাঁরা দিনে বেশ কয়েকবার ময়েশ্চারাইজার লাগান৷

 

পর্যাপ্ত পরিমাণে জল, ফল, শাক-সবজি খান৷ প্রাকৃতিক অ্যান্টিএক্সিডেন্ট ও জলের গুণে ত্বক ভেতর থেকে নমনীয় থাকবে৷ ক্ষতিকর রঙের বিরুদ্ধে যোঝার ক্ষমতা বাড়বে৷

 

এই ক-দিন কেমিক্যাল পিলিং, ডার্মাব্রেশন জাতীয় ত্বকের প্রসিডিওর এমনকী বেশি ঘষাঘষি করে ফেসিয়াল-টেসিয়াল করবেন না৷ এ সব তুলে রাখুন দোলের সপ্তাহখানেক পরের জন্য৷

 

ত্বক রোগাক্রান্ত হলে এই সব নিয়মের পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ মতো আরও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে৷

রোগাক্রান্ত ত্বকের নিয়ম

কিছু কিছু অসুখে রং খেলা বারণ৷ যেমন, মারাত্বক আমবাতের ধাত, বাড়াবাড়ি রকমের একজিমা বা সোরিয়াসিস ইত্যাদি৷ এ রকম কোনও সমস্যা থাকলে আজই ত্বক বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে চিকিত্‍সা শুরু করুন৷ তিনি যদি রং খেলার অনুমতি দেন, তাহলে একমাত্র খেলতে পারেন৷

ডায়াবিটিস, হাইপোথাইরয়েডিজম থাকলে বা ঋতুবন্ধের পরে ত্বক খুব শুকনো হয়ে যায়৷ সেই শুকনোভাব কাটাতে এখন থেকে দিনে ৩-৪ বার করে ময়েশ্চারাইজার লাগান৷ মৃদু সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহার করুন৷ প্রয়োজনে মাথায় কন্ডিশনার লাগান৷ খুসকি না থাকলে তেলও লাগাতে পারেন৷

ত্বকে কোনও সংক্রমণ থাকলে তাড়াতাড়ি সারিয়ে ফেলুন৷ না হলে রং লেগে তা বিষিয়ে যেতে পারে৷ ডায়াবিটিস থাকলে তো বিশেষ করে৷

মুখে অতিরিক্ত ব্রণ থাকলে ডাক্তার দেখিয়ে রোগ সারিয়ে নিন৷

প্রচুর জল ও প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাশাপাশি ডাক্তার যদি বলেন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ট্যাবলেটও খেতে পারেন আজ থেকে৷

দোলের দিন

রোদ ওঠার আগে রং খেলে বাড়ি ঢুকে পড়তে পারলে সবচেয়ে ভালো৷ কারণ রং এবং রোদের প্রভাবে দু-ভাবে ক্ষতি হতে পারে ত্বকের৷

রং থেকে ত্বকে জ্বালা বা চুলকানি নিয়ে দানা দানা অ্যালার্জি হল বা লাল হয়ে ফোস্কা পড়ল, তার উপর রোদ লেগে সমস্যা বেড়ে গেল৷ বা এমন গভীর দাগ পড়ল যে তা তুলতে লেগে গেল বহুদিন৷

রং ও রোদ মিলেমিশে অ্যালার্জি হল বা ত্বক ভরিয়ে দিল কালো ছোপে৷ কাজেই চড়া রোদের মধ্যে রং না খেলাই ভালো৷ স্পর্শকাতর ত্বক হলে তো বিশেষ করে৷ সুগন্ধী রঙে ক্ষতি হয় বেশি৷

রোদ এড়ানো সম্ভব না হলে মুখে-হাতে-গলায় ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে তার উপর লাগান সানস্ক্রিন৷ তার উপর পাউডার লাগিয়ে মিনিট ২০ পরে রোদে বেরোন৷ ঘণ্টা দু-তিনেক পার হয়ে গেলে এক ফাঁকে ঘরে এসে আবার পুরো ব্যাপারটা রিপিট করুন৷ এতে রোদ এবং রং দুই-ই কম ক্ষতি করবে ত্বকের৷

যেখানে জল রং নিয়ে খেলা হচ্ছে সেখানে না যাওয়ার চেষ্টা করুন৷ কারণ ত্বক এবং জামা-কাপড় ভিজে গেলে ত্বকের মধ্যে রং ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে৷ ফলে অ্যালার্জি ও ইরিটেশনের চান্স বাড়ে৷

পিচকিরি বা বেলুনে রং ভরে ছুড়ে দিলে বিপদে বেশি৷ ত্বকের তো বটেই, নাকে-কানে বা মুখের ভিতরে রং ঢুকে বিষক্রিয়া হতে পারে৷ কাজেই এ সব থেকে দূরে থাকুন৷

কালো রংয়ে থাকে পিপিডি নামের কেমিক্যাল৷ ত্বকে লাগলে ইরিটেশন, অ্যালার্জি, কালচে থোপ, শ্বেতীর মতো সাদা দাগ সবই হতে পারে৷ ক্ষতি হয় এনামেল রং থেকেও৷ কাজেই এ সবের হাত এড়িয়ে বাঁচতে হবে আপনাকে৷

তেল রং মুখে লেগে গেলে কম বয়সীদের মুখে জটিল ধরনের ব্রণ হতে পারে৷ সে রকম প্রবণতা থাকলে এই ধরনের রং থেকে দূরে থাকতে হবে৷

চুল বাঁচাতে মাথায় তেল মেখে রং খেলতে যান৷ টুপি বা বড় স্কার্ফেও মাথা ঢেকে নিতে পারেন৷

রং খেলার পর

হালকা ময়েশ্চারাইজার বা সহ্য হলে নারকেল তেল মেখে ভেজা তুলো দিয়ে আলতো করে মুছে নিন৷ এরপর প্রচুর জলের ঝাপটায় রং ধুতে থাকুন৷ ক্লিনজার বা ফেস ওয়াশ দিতে চাইলে দিন এরপর৷ তারপর আবার ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে সানস্ক্রিন লাগান৷

রং সবটুকু না উঠলে টেনশন করবেন না৷ যেটুকু রয়ে গেছে তাতে ক্ষতি কিছু হবে না৷ ঘষে ঘষে তুলতে গেলে বরং বেশি ক্ষতি৷

চুলের ক্ষেত্রেও এক নিয়ম৷ তেল মেখে রং খেলার পর বার দুয়েক মৃদু কোনও শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন৷ রংয়ের রেশ থেকে গেলে চিন্তা করবেন না৷ এরপর কন্ডিশনার অবশ্যই লাগাবেন৷

মুখে বা চুলে কোনও প্রসিডিওর করাতে চাইলে, করান ৭-১০ দিন পরে৷

সমস্যা হলে

ত্বক খুব ড্রাই হয়ে গেলে দিন ৩-৪ বার বা প্রয়োজনে আরও বেশি বার ময়েশ্চারাইজার লাগান৷ দিনের বেলা তার উপর সানস্ক্রিন লাগিয়ে রাখবেন৷ কারণ শুষ্ক ত্বকে সান ড্যামেজ বেশি হয়৷

র‌্যাশ বেরোলে বা ত্বক চুলকালে ময়েশ্চারাইজার দিয়ে রং তুলে বারে বারে ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা দিন৷ বরফ বুলিয়ে নিতে পারেন৷ নরম তোয়ালেয় মুখ আলতো করে চেপে মুছে ক্যালাইমাইন লাগান৷ ব্রণর প্রবণতা থাকলে তেলবিহীন ক্যালামাইন লাগাবেন৷ ত্বক খুব শুকনো লাগলে আগে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে পারেন৷ সমস্যা না কমা পর্যন্ত রোদে বেরোবেন না৷

র‌্যাশ বা চুলকানি বেশি হলে অ্যান্টিহিস্টামিনিট ট্যাবলেট খেতে পারেন দু-একটা৷ তার সঙ্গে ক্যালামাইন লাগানো ও রোদ এড়িয়ে চলা বাধ্যতামূলক৷

ব্রণ বেরোলেও ক্যালামাইন লাগান৷ বাড়াবাড়ি হলে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে৷

চুল খুব ড্রাই হয়ে গেলে ভালো করে কন্ডিশনিং করুন৷ ভেজা চুলে কন্ডিশনার লাগিয়ে ৫-৭ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন৷ খুসকি না থাকলে তেলও লাগাতে পারেন৷

অনেক সময় কয়েক দিন পরে ত্বকে সাদা বা কালো ছোপ দেখা যায়৷ তখন দেবি না করে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন৷ তার পাশাপাশি সানস্ক্রিন মাখা ও চড়া রোদ এড়িয়ে যাওয়া চালিয়ে যান৷

(ওএস/এইচ/মার্চ ১২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test