E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয়

২০১৪ জুন ২৮ ১৯:৪৫:৫৩
রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয়

রমজানে প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেক নর-নারীর জন্য রোজা রাখা ফরজ। আর এ ফরজ কাজটি করতে গিয়েই বেশ অসুবিধায় পড়ে যান ডায়াবেটিস রোগীরা। কারণ এ সময় খাদ্যাভাস ও ওষুধের সময়সূচি পরিবর্তনে তাদের শরীরের ক্যালরি এবং ওষুধের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতা দেখা দেয়।

এতে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে আবার কমে যেতে পারে। তাই রমজান মাসে রোজা রাখার জন্য ডায়াবেটিসের রোগীদের দরকার পূর্ব-প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ। এবার রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয় সম্পর্কে জানিয়ে দিচ্ছে উত্তরাধিকার ৭১:

রোজার কারণে ডায়াবেটিক রোগীরা যে ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়:
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, রমজান মাসে ডায়াবেটিক রোগীদের শরীরে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার মাত্রা বেড়ে যায়। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকায় পানিশূন্যতাই এর মূল কারণ। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলে হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় অতিরিক্ত প্রস্রাবের কারণে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। সেই সাথে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের পরিমাণও কমে যেতে পারে। ফলে ব্লাড পেশার কমে গিয়ে অজ্ঞান হওয়া, পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়া, হাড় ভেঙ্গে যাওয়াসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয়:
সর্বপ্রথম প্রস্তুতি হিসেবে ডায়াবেটিস রোগীদের জেনে নেওয়া উচিত তাদের শরীর রোজা রাখার জন্য উপযুক্ত কি না। শরীরে যদি শর্করার মাত্রা খুবই অনিয়ন্ত্রিত থাকে অর্থাৎ তিন মাসের মধ্যে মারাত্মক হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা শর্করাস্বল্পতা, কিটোঅ্যাসিডোসিস বা শর্করার মারাত্মক আধিক্য থাকে তাহলে রোজা রাখা উচিত নয়। ডায়াবেটিস ছাড়াও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা যেমন যকৃতের সমস্যা, হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত হলেও রোজা না রাখাই ভালো। এই তালিকায় অবশ্য গর্ভবতী ডায়াবেটিস রোগী ও ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন এমন রোগীরাও পড়বেন।

অন্যদের মধ্যে যারা কেবল খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমেই শর্করা নিয়ন্ত্রণ করছেন বা মেটফরমিন, ডিপিপি ৪ ইনহিবিটর বা গ্লিটাজন শ্রেণীর ওষুধ খান তাদের রোজা রাখা বেশ নিরাপদ। যারা ইনসুলিন বা ওষুধ ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই নতুন করে ওষুধের মাত্রা ও সময় জেনে নিতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যাভ্যাস:
রমজান মাসে এসব রোগীদের ক্যালরির চাহিদা আগের মতোই থাকবে। শুধু খাবার গ্রহণ ও সময়ের কিছুটা পরিবর্তন হবে। ইফতারে বিকল্প চিনি দিয়ে ইসবগুলের ভুষি, তোকমা, লেবু কাঁচা আম বা তেঁতুল শরবত এসব রোগীদের জন্য উপকারী।

ডাব ছাড়া অন্যান্য মিষ্টি ফলের রস না খাওয়াই ভালো। টক ও মিষ্টি উভয় ধরনের ফলের সালাদ খাওয়া যেতে পারে, এতে খনিজ লবণ ও ভিটামিনের অভাব পূরণ হবে। কাঁচা ছোলার সঙ্গে আদাকুচি, টমেটো কুচি, পুদিনা পাতা ও লবণের মিশ্রণ বেশ সুস্বাদু খাবার। কাঁচা ছোলা রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

সন্ধ্যা রাতে (ইফতার পরবর্তী) খাবার একেবারে বাদ দেওয়া উচিত নয়। কম করে হলেও খেতে হবে। অন্য সময়ের রাতের খাবারের সমপরিমাণ হবে রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার। রোগী ভাত খেতে পারবে তবে চিকিৎসক কর্তৃক বরাদ্দ খাবারের পরিমাণের দিকে সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। হালকা মসলায় রান্না যে কোনো ছোট-বড় মাছ এবং সবজি নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।

সেহরিতে (ভোররাতের খাবারে) রুটি অথবা ভাত রুচি অনুযায়ী গ্রহণ করুন। সেহরির খাবারের পরিমাণ হওয়া উচিত অন্যদিনের দুপুরের খাবারের সমপরিমাণ। সেহরিতে মাছ ও সবজি থাকতে পারে। দুধ অথবা ডাল যে কোনো একটা থাকলে ভালো হয়।

ইফতারে একসঙ্গে বেশি না খেয়ে অনেক খাবার ধাপে ধাপে ভাগ করে খান। এতে রক্তে হঠাৎই শর্করার মাত্রা বেড়ে যাবে না।

ওষুধ ও ইনসুলিন :
রমজান মাসে খাবারের সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ এবং ইনসুলিনের মাত্রা ও সময়সূচির অবশ্যই পরিবর্তন হবে। ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে দিনের ওষুধগুলোর সময় পরিবর্তন করে রাতে তা গ্রহণ করতে হবে। কারণ ওষুধের মাত্রা রক্তে শর্করার পরিমাণের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। এ কারণে নিজ থেকেই ওষুধের সময়সূচি পরিবর্তন করা যাবে না। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ব্যায়াম :
ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে যারা প্রতিদিন রুটিনমাফিক ব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটি করেন। রমজান মাসে তাদের সে রুটিনেও পরিবর্তন আনতে হবে। রোজা রেখে ব্যায়াম ও খুব বেশি হাঁটাহাঁটি করা যাবে না। তবে ইফতারের একঘণ্টা পর ও সেহরির আগে ব্যায়াম করতে পারেন।

সর্তকতা :
১. ডায়াবেটিসের সঙ্গে অন্য কোনো জটিলতা, যেমন- কিডনির রোগ, উচ্চমাত্রার ইউরিক থাকলে ডালের তৈরি খাবার থেকে বিরত থাকুন।

২. আলসার বা গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা থাকলে ডুবো তেলে ভাজা ও ঝাল যুক্ত খাবার পরিহার করুন।

৩. শরীরের ওজন বেশি থাকলে যতটা সম্ভব কম খাবার গ্রহণ করুন এবং খাবারে তেলের পরিমাণ কমিয়ে দিন।

৪. রোজা রেখে অত্যধিক হাঁটা বা ভারী ব্যায়াম থেকে বিরত থাকুন। কারণ এতে আপনার শরীরে রক্তের শর্করার মাত্রা নিচে নেমে গিয়ে বিপদ হতে পারে।

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরের প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত। কারণ শরীর সুস্থ না থাকলে রোজা রাখা এসব রোগীর জন্য অনেক সময় নিরাপদ নাও হতে পারে। তাই শরীর সুস্থ রাখতে দৈনন্দিন খাবারের ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে ডায়াবেটিস রোগীদের।

(ওএস/এস/জুন ২৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test