E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নিউইয়র্কে দুই দিনব্যাপী হুমায়ূন মেলার উদ্বোধন 

২০১৮ অক্টোবর ০৯ ১৫:২১:৪৬
নিউইয়র্কে দুই দিনব্যাপী হুমায়ূন মেলার উদ্বোধন 

প্রবাস ডেস্ক : বাংলা সাহিত্যাঙ্গনের কিংবদন্তি পুরুষ হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য-কর্মের বিশ্বায়নের অভিপ্রায়ে তার লেখা ইংরেজীসহ অধিক মানুষের পাঠোপযোগী ভাষায় অনুবাদের ওপর গুরুত্বারোপ করা হলো নিউইয়র্কে ‘হুমায়ূন মেলা’য়। এ লক্ষ্য অর্জনের পথে সামনের বছর নিউইয়র্কে ৩ দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক হুমায়ূন সম্মেলন’ করার ঘোষণাও দেয়া হলো। আর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তার অঙ্গিকার করলো ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্স্যুলেট জেনারেল। নিউইয়র্ক তথা আমেরিকায় সাহিত্য-সংস্কৃতির অন্যতম পৃষ্টপোষক ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিপ এবং মোহাম্মদ শাহনেওয়াজও হোস্ট ‘শো-টাইম মিউজিক’র আলমগীর খান আলমের উদ্যোগে একান্ত সহযোগী হয়ে পাশে কথার কথা বললেন।

নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটস সংলগ্ন কুইন্স প্যালেসের মিলনায়তনে দ্বিতীয়বারের মত দুদিনের এই ‘হুমায়ূন মেলা’র মধ্যমণি ছিলেন হুমায়ূন পতি অভিনেত্রী-নাট্যকার মেহের আফরোজ শাওন। বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে হুমায়ূনের লেখা, জীবনাচার ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা, স্মৃতিচারণ করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কথা সাহিত্যিক ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের উপ-প্রধান ও কবি মাহবুব হাসান সালেহ, বাংলা একাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও লেখক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম,আগামী প্রকাশনীর ওসমান গণি, প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ মুহম্মদউল্লাহ, কথা সাহিত্যিক সিনহা মনসুর,প্রকৌশলী আবু হানিপ , নিউইয়র্ক ইন্স্যুরেন্সের কর্ণধার শাহনেওয়াজ প্রমুখ।মার্কিন আইটি সেক্টরে বাঙালিদের কর্মসংস্থানে অসাধারণ ভ’মিকা পালনরত ‘পিপল এন টেক ইন্সটিটিউট’র প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী আবু হানিপ, নিউইয়র্ক ইন্স্যুরেন্সের কর্ণধার শাহনেওয়াজ প্রমুখ। এ উপলক্ষে হুমায়ূনের বইয়েরও একটি প্রদর্শনী হয় মেলা প্রাঙ্গনে। বাঙালি খাদ্য এবং পণ্যেরও স্টল ছিল মেলার প্রবেশ পথে।

৭ অক্টোবর রবিবার দুপুরে বেলুন উড়িয়ে বিপুল করতালির মধ্যে মেলার উদ্বোধনের পরই প্রাণে প্রাণে মিশে যান সকলে। হুমায়ূনের জাদুকরি আমেজে প্রবাসীরাও একাকার হয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, জীবনের শেষ বছরটি হুমায়ূনের কেটেছে এই নিউইয়র্ক সিটির হাসপাতালে। এর আগে উচ্চ শিক্ষার জন্যে বেশ ক’বছর কাটিয়েছেন এই আমেরিকায়। আর এভাবেই হুমায়ূনের প্রতি প্রবাসীদের বিশেষ এক মমত্ববোধ সদা জাগ্রত রয়েছে। সে চেতনাকে সমুন্নত রাখতে গত বছর থেকে হুমায়ূন মেলার আয়োজন করছে উত্তর আমেরিকায় বিনোদন সম্রাট হিসেবে খ্যাত আলমগীর খান আলম। জীবিতাবস্থায় হুমায়ূনকে নিয়ে সর্বপ্রথম ‘হুমায়ূন মেলা’ করেছিলেন মুক্তধারার বিশ্বজিৎ সাহা।

মেলার চেতনায় হুমায়ূণের প্রিয় গান পরিবেশন করেন মেহের আফরোজ শাওন, এস আই টুটুল, সায়রা রেজা, রানু নেওয়াজ, কৃষ্ণাতিথি, শাহ মাহবুব, কামরুজ্জামান বকুল, চন্দন চৌধুরী এবং সেলিম ইব্রাহিম। এ মেলার মিডিয়া পার্টনারের অন্যতম হচ্ছে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সাংবাদিক শামীম আল আমিনের সঞ্চালনায় হুমায়ূন স্মরণে মূল আলোচনায় কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা বলেন, মূলধারার সাহিত্যের সাথে হুমায়ূন সাহিত্যের যোগসূত্র ঘটাতে পারি, পরিচয় করিয়ে দিতে পারি, তাহলে আমার মনে হয় সেটি অনেক অর্থবহ হবে। একইসাথে অবশ্যই আমরা প্রবাস প্রজন্মকে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য কর্মসম্পর্কে অবহিত করবো। সেই সাথে আমাদের আন্তরিক অর্থেই সচেষ্ট থাকতে হবে, এই মহান লেখকের মহান সাহিত্য কর্মকে আমেরিকানদের মধ্যে বিস্তৃত করতে।

হুমায়ূন পতি মেহের আফরোজ শাওন বলেন, যাদের জন্ম এই আমেরিকায়, যারা বেড়ে উঠছে আমেরিকায়, তাদের পরিচয় হয়তো এখনও ঘটেনি হুমায়ূণ আহমেদের লেখা ও শিল্পকর্মের সাথে। তারা হয়তো এমনি নামে চেনেন। হুমায়ূনের সৃষ্টিকর্মের সাথে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব মা-বাবার। আশা করবো, প্রবাসের অভিভাবকেরা পারিবারিকভাবে সে চেষ্টা করবেন। বাংলা ভাষার সকল কিংবদন্তী সাহিত্যিকের সাথেই প্রবাস প্রজন্মকে পরিচিত রাখতে হবে। আর এভাবেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা সাহিত্য আরো উজ্জ্বলভাবে উদ্ভাসিত হবে।

কূটনীতিক ও কবি মাহবুব হাসান সালেহ বলেন, আন্তর্জাতিক হুমায়ূন সম্মেলনে শুধু বাঙালিদের জড়ো করলে হবে না, আমেরিকানসহ বিভিন্ন দেশের লোকজনকে আনতে হবে। এটি একজন কূটনীতিক হিসেবে নয়, বাঙালি সাহিত্যপ্রেমী হিসেবে উল্লেখ করলাম। তাহলেই হুমায়ূনের যে সাহিত্যবোধ, তার মধ্য দিয়েই বাঙালির সাহিত্য সম্ভারের বিশ্বায়ন সম্ভব হবে। হুমায়ূন চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের ভিষণ প্রয়োজন। এর মধ্য দিয়ে প্রথমে ইংরেজী এবং পরবর্তীতে অন্য ভাষায় অনুবাদ করতে হবে। কারণ, প্রবাসে বড় একটি প্রজন্ম, যারা বাংলায় কথা বলতে পারলেও পড়তে পারেন না। এদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিাত্যক জ্যোতি প্রকাশ দত্ত বলেন, হুমায়ূন আহমেদ আর আমি রাস্তার এপাড়-ওপাড়ের বাসায় ছিলাম। কখনো কথা হয়নি। তেমনভাবে মেলামেশাও করিনি। তবে শেষের দিকে, তার সাথে আমার এমন সম্পর্ক গড়ে উঠেছে যে, আমার জীবন থেকে কখনো হুমায়ূন হারিয়ে যাবেন না। কারণ, যে হুমায়ূনকে আমরা জেনেছি, যে হুমায়ূনকে মানুষ ভালোবেসেছে, সেই হুমায়ূনের বাইরে আরেকটি হুমায়ূন রয়েছে।

অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম শেষ সময়ে হাসপাতালে হুমায়ূনের স্মৃতিচারণকালে বলেন, মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। সে সময়েও তার মধ্যে রসবোধ পুরোপুরি ছিল। প্রকাশক মাজহারের মাথায় চুলের কমতি ছিল। সেদিকে দৃষ্টিপাত করে হুমায়ূন বললেন যে, কেমো নেয়ার পরও আমার মাথায় চুল ঘনই রয়েছে। তাই আমি মাজহারকে বলতে চাই কেমো নিতে। তাহলে তার মাথায়ও চুল গজাবে। এভাবেই তিনি মানুষকে প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছেন।

সৈয়দ মঞ্জুরুল বলেন, হুমায়ূনের ২/৩টি বই ইংরেজীতে অনুবাদ হচ্ছে। এটি খুবই খুশীর সংবাদ। আরেকটি বিষয়ে আহবান রাখতে চাই, সামনের বছর ৩দিনের যে সম্মেলনের কথা বলা হচ্ছে, সেটির প্রস্তুতি যেন আগে থেকেই শুরু করা হয়। সেখানে যেন প্রবাসের প্রজন্মকে একটি সেমিনারে সম্পৃক্ত করা হয়। তাহলেই হুমায়ূন সাহিত্য আন্তর্জাতিক করণের পথ সুগম হবে।

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব নঈম নিজাম বলেন, কলকাতার দেশ পত্রিকার পূজা সংখ্যায় টানা ৯বার হুমায়ূনের লেখা ছাপা হয়েছিল। অর্থাৎ হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা বাংলাদেশের মত ভারতেও ছিল। পশ্চিমবঙ্গেও তার জনপ্রিয়তা সমান্তরালভাবে ছিল।

হুমায়ূন আহমেদের লেখাগুলো যদি প্রকাশকরা আগের মতোই আন্তরিকতার সাথে প্রকাশ করতে থাকেন, তাহলে নতুন প্রজন্ম বই পড়তে আগ্রহী হবে। বাংলাদেশের প্রজন্মেও বই পড়ার আগ্রহ তৈরী করতে হুমায়ূনের অবদান অনস্বীকার্য-উল্লেখ করে নঈম নিজাম বলেন, ‘আমার মেয়ে এখন ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির এ্যামহার্স্টে পড়ছে। সে স্কলাস্টিকার ছাত্রী ছিল। বই পড়তে তেমন আগ্রহী ছিল না। কিন্তু হুমায়ূনের একটি বই পড়ার পর প্রত্যেক একুশের বইমেলা থেকে হুমায়ূনের সবগুলো বই ক্রয় করতে হয়েছে তার জন্যে।

প্রকৌশলী আবু হানিপ বলেন, ‘হুমায়ূন মেলা প্রতি বছরই করতে হবে বাংলা সাহিত্যের প্রকৃত রূপ প্রবাস প্রজন্মে যথাযথভাবে উপস্থাপনের স্বার্থেই’।

(পিআর/এসপি/অক্টোবর ০৯, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test