E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

চিত্রশিল্পী হোনদা তোয়োকুনির স্টুডিওতে

২০১৪ আগস্ট ২৫ ১৪:১২:৩৩
চিত্রশিল্পী হোনদা তোয়োকুনির স্টুডিওতে

প্রবীর বিকাশ সরকার : ১৩ আগস্ট গিয়েছিলাম টোকিওর কুদানশিতা শহরে। সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে পুরনো গ্রন্থশহর কানদা জিনবোচোওর দিকে যাচ্ছিলাম। তখন পথিমধ্যে পড়ল একটি আটরিয়ে বা স্টুডিও। জাপানের বিশিষ্ট সুমিএ গাকা বা কালোকালির শিল্পী হোনদা তোয়োকুনির স্টুডিও এটা এই বছরের এপ্রিল মাসে উদ্বোধন করেছেন। উঁকি দিয়ে দেখলাম দেয়ালে বিশাল এক চিত্রকর্ম! এবং সম্পূর্ণ কালো রঙের যাকে বলে সুমিএ বা কালো কালির চিত্র। কৌতূহলবশত স্ত্রীসহ ভেতরে প্রবেশ করলাম।

ছোট্ট একটি রুম সেখানে বিস্তর শিল্পকর্ম সবগুলোই হোনদার বলে জানালেন তাঁর তরুণ পুত্র, শিল্পী সেদিন ছিলেন না। ছবিটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে জানালেন, এটা এখনো শেষ হয়নি। বাবা একটু একটু করে আঁকছেন। কী দাঁড়াবে বলা কঠিন! কিন্তু একটা কিসের ছাপ যেন ভেসে উঠেছে বলে মনে হল তবে কী জিনিস পরিষ্কার হচ্ছে না। শিল্পী হোনদা জেন প্রবর্তক দারুমা বা বোদিধর্মের অনেকগুলো ছবি এঁকেছেন কালো এবং অন্যান্য রংএও। জেন বৌদ্ধধর্মের প্রতি তাঁর একটা দুর্বলতা আছে বলে মনে হল। ছোট এবং পোস্টকার্ড চিত্র কয়েকটি কিনে চলে এলাম। বাসায় ফিরে শিল্পীর ওযেবসাইটটি খুলে দেখলাম।

সেখানে লেখা আছে: তিনি ১৯৪৫ সালের ৩১ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেছেন। প্রথম দিকে তিনি তেলচিত্র দিয়েই শুরু করেছিলেন। কিন্তু একটি ঘটনা তাঁর মনকে অন্যদিকে প্রবাহিত করে। মঙ্গোলিয়া এবং চীনের গোবি মরুভূমির গুহামন্দিরে ক্ষয়িষ্ণু রংওঠা অঙ্কনচিত্র দেখে বুঝতে পারলেন রং থাকে না থাকে কেবল কালো রঙের রেখা। সেই থেকে তিনি বহুরং বাদ দিয়ে কেবল কালো রং (সুমি) দিয়ে ছবি অাঁকা শুরু করেন এবং বিষয়বস্তু প্রাচ্যসংস্কৃতি বা এশিয়ার বিবিধ বিষয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে কিয়োতোর জেনজোওজি বৌদ্ধমন্দিরের দেয়ালে দৈর্ঘে ৪৫ মিটার এবং প্রস্তে ৮ মিটার একটি ম্যুরাল তৈরি করেন দুবছর লাগিয়ে। শেষ করেন ১৯৯৯ সালে নাম দেন মহাপরিনির্বাণ। ম্যুরালে ৪৪টি কাননোন বা বোধিসত্ত্ব চিত্র ছিল যেগুলো ভগবান গৌতম বুদ্ধের নির্বাণকে কেন্দ্র করে চিত্রিত। নিঃসন্দেহে একটি শ্রমসাধ্য কাজ যে কারণে তিনি ব্যাপকভাবে প্রশংসিতও হয়েছিলেন। তখন তাঁর বয়স ৫৪। ২০০১ সালে তিনি আরও একটি বিরাট মাপের কাজে হাত দেন।

ক্যালিফোরনিয়ার লেগুনা সৈকতে ঘুরতে গিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন আমেরিকার সবগুলো প্রদেশে যাবেন এবং সেখানকার মানুষ ও সংস্কৃতির চিত্র আঁকবেন। সেই ইচ্ছে অনুযায়ী ৫০টি প্রদেশের মানুষের এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির চিত্র কালোকালিতে আঁকেন। সেখানে তিনি পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য সংস্কৃতির সংমিশ্রণ দেখতে পান। এই প্রকল্পের নাম দেন ইউএসএ ফিফটি। বহু শিল্পকর্ম সৃষ্টিকারী শিল্পী হোনদা তোয়োকুনি জাপানে যেমন খ্যাতি লাভ করেছেন তেমনি তাঁর সার্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রতিভার কারণে ইতালি, ফ্রান্স, স্লোভাক রিপাবলিক এবং চীন দেশ খেকে পুরস্কার অর্জন করেছেন। ২০০২ সালে তিনি উদ্যোগ নেন লাইভ সুমিএ পারফোমেন্স অর্থাৎ লোকসম্মুখে সুমিএ আঁকার উৎসবের। জাপান এবং আমেরিকায় এই পর্যন্ত ৫০টি সমাবেশের আয়োজন করেন। নিজে তো আঁকেনই, আগ্রহী হয়ে আবালবৃদ্ধবনিতাও সুমিএ আঁকার উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। সেইসঙ্গে অনেক কন্ঠশিল্পীও যোগদান করে সেইসব অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলেন। সেদিন শিল্পী উপস্থিত থাকলে আলাপ করতে পারতাম সেটা হল না।

লেখক : জাপান প্রবাসী


(এএস/আগস্ট ২৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test