E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লেবাননে ৪৭ দিন পর মুক্তি পেলেন অপহৃত আলী আকবর 

২০১৪ সেপ্টেম্বর ০৫ ১১:৩০:৩৮
লেবাননে ৪৭ দিন পর মুক্তি পেলেন অপহৃত আলী আকবর 

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : রাষ্ট্রদূত গওসোল আযম সরকার এবং তার স্ত্রী সাদিয়া আযমের রোষানলের শিকার হয়ে ১৪ জুলাই বৈরুতে অপহরণের শিকার হয়েছিলেন কমিউনিটির জনপ্রিয় মুখ আলী আকবর মোল্লা। গওসোল-সাদিয়ার নির্দেশে এবং তত্ত্বাবধানে তাদেরই পোষ্য বিচ্ছুবাহিনীর ক্যাডার কালা সুমন, ম্যাসেঞ্জার কিরন ও হুক্কা দেলু গং অপরিচিত ভাড়াটে লোক দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায় তার কর্মস্থল থেকে। টানা ৪৭ দিনের বন্দীদশা শেষে চলতি সপ্তাহে মুক্তি পয়েছেন আলী আকবর। ১৯৯৮ সাল থেকে বৈরুতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তিনি।

বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যান সমিতি লেবাননের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আলী আকবর মোল্লা একাধারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ লেবাননেরও নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক। বৈরুতের হাজার হাজার বাংলাদেশির অত্যন্ত প্রিয়ভাজন এই মানুষটি কেন গওসোল দম্পতির বিরাগভাজন হয়েছিলেন ? কী হয়েছিল সেদিন ১৪ জুলাই ? কারা কীভাবে এবং কেন অপহরণ করেছিলো তাকে ? লেবানিজ পুলিশ কর্তৃক উদ্ধার হবার পর কেন তাকে বরণ করতে হয় হাজতবাস ? বৈরুতের কারাগার থেকে মুক্তির পর এই প্রতিবেদককে আদ্যোপান্ত জানালেন আলী আকবর নিজেই।

স্থানীয় বাংলাদেশ দূতাবাসকে ঘিরে গত ২ মাসে যে তুলকালাম ঘটেছে, তার সবই ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়াতে ফলাও করে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসকে ঘিরে গওসোল-সাদিয়া-সুমন-কিরনদের রামরাজত্ব লুটপাট আর নিরীহ মানুষের সীমাহীন ভোগান্তির বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদী ছিলেন আলী আকবর। অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই মূলতঃ কাল হয়েছিল তার। একজন রাষ্ট্রদূত হয়ে গওসোল আযম দফায় দফায় হুমকি দিতেন আলী আকবরকে পুলিশে ধরিয়ে দেবার এমনকি কিডন্যাপ করে উঠিয়ে নিয়ে যাবার।

পোষ্যবাহিনী সুমন-কিরন-দেলু-জসিম-জামাল-জনি-বাবুর মতো দালাল কাম সন্ত্রাসীরাই ছিলো গওসোল-সাদিয়ার শক্তির উৎস। দূতাবাসের ক্যাশিয়ার রব ছিলেন যথারীতি কালো টাকার হিসাবরক্ষক। দুর্নীতিতে ডুব দিয়েছিলেন রাষ্ট্রদূত গওসোল, আর স্ত্রী সাদিয়া কালো টাকার নেশায় বুঁদ হয়েছিলেন এতো বেশি যে, বৈরুতের শেষ দিনগুলোতে ভুল করে বসেন হিসেব-নিকেশে। পথের কাঁটা আলী আকবরকে জেলে ঢোকাবার না হয় গুম করে ফেলার পরিকল্পনা মাথায় আসে গওসোল-সাদিয়ার।

সুমন-কিরনদের সাথে রাতভর আলোচনা করে পাকা করে ফেলেন সিদ্ধান্ত। যেমন পরিকল্পনা তেমন কাজ, আসে ১৪ জুলাই। এদিন কমিউনিটির প্রাণপুরুষ আলী আকবর মোল্লাকে যখন গাড়িতে উঠিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন গাড়ীতে অবস্থানরত অপহরনকারীদের সাথে মোবাইলে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছিলেন গওসোল ও সাদিয়া দু’জনই। অপহরনকারীদের মোবাইলে অপর প্রান্তের গওসোল-সাদিয়ার কন্ঠ স্পষ্ট শুনতে পান আলী আকবর। সিয়াম সাধনার মাস রমজানে এতো বড় অপকর্ম সম্পাদনে বিবেকে বাঁধেনি গওসোল দম্পতির। রোজাদার আলী আকবরকে ইফতারও করতে দেয়নি অপহরনকারীরা।

আলো-বাতাসবিহীন অন্ধকার প্রকোষ্ঠে তাঁকে ভরে চোখও বেঁধে রাখা হয়। এদিকে গওসোল-সাদিয়ার নির্দেশে আলী আকবর অপহরনের ঘটনা কমিউনিটিতে জানাজানি হয়ে গেলে তোলপাড় সৃষ্টি হয় পুরো বৈরুতে। একই সময় রাষ্ট্রদূত গওসোল দূতাবাসের অভ্যন্তরে আটকে রাখেন তার গৃহকর্মীকে। ক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা, শতশত লোক দলেদলে এসে ঘেরাও করে দূতাবাস। আসে লেবানিজ জাতীয় টিভি চ্যানেলের লোকজন, শুরু হয় সরাসরি সম্প্রচার। পুলিশ সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগের জোর তৎপরতা। বিস্ফোরোন্মুখ বাংলাদেশ দূতাবাস, শুরুতেই জিরো টলারেন্স লেবানীজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।

গোটা লেবাননে বাংলাদেশের মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া রাষ্ট্রদূত গওসোলকে দেশ ছাড়ার আল্টিমেটাম দেয় প্রশাসন, ফলাও করে এই সংবাদও প্রচারিত হয় জাতীয় টিভি চ্যনেলগুলোতে। সময়মতো কুল রক্ষা করতে না পারলেও বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় রাষ্ট্রদূতকে ঢাকায় ফিরিয়ে নেয়ার। গওসোল-সাদিয়া-সুমন-কিরন সাম্রাজ্যের পতনের ঠিক এই সময়টিতেই অপহরনকারীদের আস্তানা থেকে আলী আকবর মোল্লাকে উদ্ধার করে লেবানিজ পুলিশ, নিয়ে যায় থানায়।

দুর্ভাগ্য আলী আকবরের, রেসিডেন্স কার্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণের পরিণতিতে আইনী মার-প্যাঁচে বিলম্বিত হয় তাঁর মুক্তি। গওসোলের বিদায়ের পর দূতাবাসের হাল ধরা চার্জ দ্য এফেয়ার্স নজরুল ইসলামের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ৪৭ দিনের বন্দীজীবনের অবসান ঘটে আলী আকবরের। গওসোল আযম ক্যাটাগরির লোকদেরকে ভবিষ্যতে শুধু লেবানন নয়, বিশ্বের কোন বাংলাদেশ দূতাবাসেই যাতে কখনো নিয়োগ দেয়া না হয়, বাংলাদেশ সরকারের কাছে এমনটাই প্রত্যাশা বৈরুতের সদ্য কারামুক্ত এই কমিউনিটি নেতার।

(ওএস/এইচআর/সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test