E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গ্রিসে ৩ মাসে ১৮ বাংলাদেশির মৃত্যু

২০২১ অক্টোবর ২৩ ১৮:২২:২৮
গ্রিসে ৩ মাসে ১৮ বাংলাদেশির মৃত্যু

মতিউর রহমান মুন্না, গ্রিস থেকে : প্রবাসে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এমন মৃত্যু অনেকটাই নিয়তিতে পরিণত হয়েছে। এসব মৃত্যু কারণ হিসেবে জানা যায়, বেশির ভাগ প্রবাসী মারা গেছেন স্ট্রোক করে। এছাড়াও যেকোনো দুর্ঘটনা ও স্বাভাবিক কারণে এসব মৃত্যু হয়ে থাকে।  

প্রবাসে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক বলছে, নারীদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যায় মৃত্যুর হার বেশি। আর পুরুষদের হৃদরোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। অল্প বয়সিদের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর বিষয়টি ভাবনার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন স্বজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা এবং ধার করে বিদেশ যাওয়ায় টাকা উপার্জনে মানসিক চাপে ভোগেন তারা। অনেকেই কড়া সুদে বা ধার করে পরিবার, ব্যক্তি বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে গমন করেন। সেখানে গিয়ে টাকা পরিশোধ করার চাপে থাকেন।

এদিকে ইউরোপের দেশ গ্রিসেও বেড়েই চলছে বাংলাদেশিদের অপ্রত্যাশীত মৃত্যুর সংখ্যা। গ্রিস দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, গ্রিসে ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ এর জুন পর্যন্ত মোট ১০৯ জন বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৪৫ জন এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরের সর্বশেষ তিন মাসেই ১৮ জন প্রবাসী মারা গেছেন। বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সহযোগীতায় ও বাংলাদেশ দূতাবাস এথেন্সের তত্ত্ববধানে তাদের মৃতদেহ দেশে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী এক জনের মৃতদেহ গ্রিসেই দাফন করা হয়েছে। আরো ৪ জনের মৃতদেহ দেশে পাঠানোর পক্রিয়া চলছে।

বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, মানসিবভাবে বিপর্যস্থ হওয়ায় বেশির ভাগ মৃত ব্যক্তি মস্তিৃস্কে রক্তক্ষরণ জনিত ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে কেউ জমি বিক্রি করে বা কেউ ঋণ নিয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে গ্রিসে এসছেন। বৈশ্বিক করোনা মহামারীর দরুন সৃজিত মন্দা পরিস্থিতিতে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যায় করে গ্রিসে আসার পর কর্মহীন প্রবাসীরা উক্ত টাকা ফেরত না পেয়ে এবং ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে মানসিক চাপে ভোগেন। বেশিরভাগ প্রবাসীই মারা গেছেন হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেন স্ট্রোক করে। এদের অনেকের বয়সই ৩০ থেকে ৪০ বছর। এমন মৃত্যু পরিবারের কাছেও অপ্রত্যাশিত। বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতে অবৈধভাবে কেউ যাতে কাজের ক্ষেত্র নিশ্চিত না করে বিদেশে পাড়ি না জমায়, তার জন্য অনুরোধ করেন দূতাবাসের এই কর্মকর্তা।

অপরদিকে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য মতে, ২০০৫ সাল থেকে ২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত দেশে মৃতদেহ এসেছে ৪১ হাজার ৭০০টি। ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে এসেছে ২১৮৭। আর ২০২০ সালে এসেছে ২৮৮৪টি লাশ।

প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক বলছে, ৬১ শতাংশ প্রবাসীর মৃতদেহ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। শুধু সৌদি থেকেই আসে ৩১ শতাংশ। এদের অতিরিক্ত মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে প্রবাসে আমাদের কর্মীদের এমন অস্বাভাবিক ও অপ্রত্যাশিত মৃত্যু হচ্ছে।

(এমআর/এসপি/অক্টোবর ২৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test