E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গ্রিসে অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ১৪২ বছরের জেল!

২০২১ নভেম্বর ২০ ১৫:০০:৫০
গ্রিসে অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ১৪২ বছরের জেল!

মতিউর রহমান মুন্না, গ্রিস থেকে : গ্রিসের চিওস দ্বিপের কারাগারে আটক তিন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে বিস্ময়কর সাজা দেওয়া হয়েছে। সোমালিয়া থেকে আসা মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তিকে ১৪২ বছর মেয়াদের সাজা দেয়া হয়েছে। তার সাথে থাকা আফগানিস্তানি আমির যহেরি এবং আকিফ রাউসুলি নামের দুই অভিবাসনপ্রত্যাশী প্রত্যেককে ৫০ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। ‘ইনফোমাইগ্রেন্টস’ এনিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। মামলার নথিপত্র অনুযায়ী সংবাদ মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত তিনজন ডিঙি নৌকায় করে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের গ্রিসে নিয়ে এসেছিলেন।

জানা গেছে, মানবপাচারকারীরা তাদেরকে তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যবর্তী এজিয়ান সাগরে ফেলে চলে গেলে তারা নৌকার দায়িত্ব নেয় তারা। আর নৌকায় থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জীবন বাঁচাতে গ্রিসের চিওস দ্বীপে পৌঁছান।

গত সপ্তাহে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের একদল প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকরা এই তিন অভিবাসনপ্রত্যাশীর সাথে কারাগারে দেখা করেন। সাজাপ্রাপ্ত মোহাম্মদ জানান, এজিয়ান সাগরে সেসময়ে নৌকাটি নিয়ে গ্রিসে আসা ছাড়া তার আর কোনো উপায় ছিল না। তার ভাষ্য, মানবপাচারকারীরা তাকে নৌকাটির দায়িত্ব¡ নিতে বাধ্য করে। এসময় তারা তাকে বন্দুক দিয়ে ভয় দেখায় এবং আঘাত করে। মোহাম্মদ বলেন “নৌকায় থাকা মানুষগুলোর জীবন ঝুঁকিতে ছিল। মানুষের জীবন বাঁচানো সুযোগ পেলে এমন কাজ আমি আবারো করবো।”

এই তিন দ-প্রাপ্ত অভিবাসনপ্রত্যাশীর আইনজীবী আলেকজান্দ্রোস গেওরগোলিস বলেন, “এটা সর্ম্পূণ অসম্ভব বিষয় যে আশ্রয় চাইতে আসা ব্যক্তির যে কিনা চাপের মুখে ঝুঁকির্পূণ নৌকার দায়িত্ব নেওয়ার দায়ে এমন জেল হতে পারে। পাচার হওয়া ব্যক্তিকে পাচারকারী হিসেবে দেখাচ্ছে গ্রিস সরকার।”

মোহাম্মদের নৌকাটিতে প্রায় তিন ডজন অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন। মোহাম্মদ জানান, সেসময় তারা বার বার তুরস্কের সমুদ্ররক্ষীদের সাহায্য চেয়েছিল। কিন্তু সাহায্যের বদলে তুরস্কের সমুদ্ররক্ষীরা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকার চারপাশে চক্রাকারে ঘুরছিল আর প্রচ- বেগে ঢেউয়ের ধাক্কা দিচ্ছিল। ঢেউয়ের ধাক্কায় দুলতে তাকা নৌকা থেকে দুইজন নারী সমুদ্রে পানিতে পড়ে ডুবে যায়। তুরস্কের সীমান্তরক্ষীরা তাদেরকে গ্রিসের দিকে ধাওয়া করে বলে জানান মোহাম্মদ।

এরপর গ্রিসের উপকূলে দেশটির কোস্টর্গাড তাদেরকে উদ্ধার করে। মোহাম্মদ স্বীকার করে যে, সে নৌকাটি চালিয়ে নিয়ে এসেছে। আর একারণে তাকে পাচারকারী হিসেবে অভিযুক্ত করে শত বছরের জেল দেয়। একই ঘটনা ঘটে দুই আফগান অভিবাসনপ্রত্যাশীর বেলায়ও।

আর এমন ঘটনা যে শুধু গ্রিসেই ঘটছে তা কিন্তু নয়। জার্মানি, ইটালি, মালটা, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও গ্রিসে ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এমন ৫৮ ঘটনার তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া চলছে।

তুরস্ক থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিসে প্রবেশের ঘটনা নতুন কিছু নয়। পরিস্থিতি সামলাতে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে গ্রিস সরকার। মানবপাচার ঠেকাতে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-ের বিধান রেখে আইনও বলবৎ আছে।

তবে পরিস্থিতি অনুযায়ীই নিজেদের নিরাপদ রাখতে মরিয়া পাচারকারীরা। নিজেরা নৌকা করে নিয়ে আসার পরিবর্তে অভিবাসনপ্রত্যাশীদেরই জোরপূর্বক নৌকার দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর এর ফলে অভিবাসনপ্রত্যাশী নিজেই তখন সমুদ্ররক্ষীদের চোখে পাচারকারী হয়ে উঠে।

আইনজীবী দিমিত্রিস চোলিস বলেন, ''আমাদের এখানে জেলখানাগুলোতে অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী আটকে আছেন। তারা মূলত নৌকা চালক হিসেবে কাজ করছিল।

ভাগ্যের সুতায় আটকে আছেন আফগানিস্তানের আমির যহেরি এবং আকিফ রাউসুলি। দুবছর আগে তারা নৌকায় করে গ্রিসে এসেছিল। কিন্তু নৌকা চালানোর কারণে তাদের পাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত করে ৫০ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়।

মানবাধিকার সংস্থাগুলি তাদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করছে। আগামি মার্চ মাসে যাহেরি ও রাউসোলির মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ রয়েছে। তবে শুনানির তারিখ এখনো পাননি মোহাম্মদ।

(এম/এসপি/নভেম্বর ২০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test