E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিকাগোতেই হবে ৩৬তম সম্মেলন

যুক্তরাষ্ট্রে ফোবানার সুনাম ক্ষুন্নে ব্যস্ত একটি মহল

২০২২ জুন ২০ ১৫:১৩:৫৪
যুক্তরাষ্ট্রে ফোবানার সুনাম ক্ষুন্নে ব্যস্ত একটি মহল

নোমান ইবনে সাবিত, নিউইয়র্ক : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রাণের মিলন মেলা ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোশিয়েশন্স ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা)-কে নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে বহিস্কৃত এবং ফোবানার নির্বাচনে পরাজিত কিছু ব্যক্তি। তারা একটি ভূয়া আহবায়ক কমিটি গঠনের নাম করে আগামী সেপ্টেম্বর ২-৪ তারিখে শিকাগোতে অনুষ্ঠিতব্য ৩৬তম ফোবানা সম্মেলনকে পন্ড করার জন্য  নানা কুৎসা রটিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের মাঝে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ফোবানার বর্তমান কমিটির চেয়ারম্যান ও এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি। অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে বহিস্কৃত এবং ফোবানার নির্বাচনে পরাজিত কিছু ব্যক্তি ফোবানা বিরোধী কর্মকান্ডে নিয়ে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করেন তারা।

ফোবানার কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় অগ্রহণযোগ্য আচরণের জন্য সভা থেকে বহিস্কৃত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে বহিস্কৃত এবং ফোবানার নির্বাচনে পরাজিত কিছু ব্যক্তি ইতোমধ্যে একটি ভূয়া আহবায়ক কমিটিও গঠন করেছেন যা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী।

ফোবানার অবৈধ এবং বহিষ্কৃত সদস্যরা আহবায়ক কমিটির মাধ্যমে আইনত বার্ষিক সাধারণ সভা ডাকতে পারেন না। আতিকুর রহমান আতিক এবং রফিক খান যথাক্রমে আহবায়ক কমিটির চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারি হিসেবে ঘোষনা করেছেন। আতিক ফোবানার একজন সাবেক সদস্য ছিলেন। তাকে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে বহিস্কৃত করা হয়েছিল। যার মধ্যে রয়েছে আদম ব্যবসা, নারী সরবরাহকারীর পাশাপাশি ফোবানাকে ব্যবসায়িক উদ্যোগ হিসেবে ব্যবহার করা। রফিক খান সেক্রেটারি হিসেবে একটি নির্বাচনে বিব্রতকর এবং লজ্জাজনকভাবে পরাজিত হন। এরপর তিনি ফোবানায় কোনো ভবিষ্যৎ খুঁজে পাননি।

ফোবানার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সংবিধান এবং উপবিধি অননুমোদিত পরিবর্তন করে তিনি নিজেকে ফোবানা-তে সবচেয়ে ধূর্ত ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। তিনি ফোবানার অনুমোদন ছাড়াই ফোবানা ডিসি কর্পোরেট অফিসে পরিচালকদের পরিবর্তন করেছিলেন, যা একটি সাইবার অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হয়। কবির কিরণ আহবায়ক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। তিনি মাত্র ৭ ভোট পেয়েছিলেন, ফোবানার গত নির্বাচনে কোষাধ্যক্ষ পদে ডা. মানিকের বিরুদ্ধে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। মানিক পেয়েছিলেন ৩৮ ভোট।

রফিক খান দম্পতি মিলে একটি সংগঠন পরিচালনা করেন। বৈধ ফোবানায় তার কোন ভবিষ্যৎ নেই। কবির কিরণ একটি বৈধ নির্বাচনে তার লজ্জাজনক পরাজয়ের পর তার আত্মসম্মান বাড়ানোর জন্য ভূয়া আহবায়ক কমিটিতে যোগদানের জরুরি প্রয়োজন অনুভব করেন। আহবায়ক কমিটির তথাকথিত ভাইস-চেয়ার জাহিদ হোসেন পিন্টু একইভাবে ফোবানা নির্বাচনে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে পরাজিত হন। একাধিক ফোবানার উপবিধি এবং সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। লস অ্যাঞ্জেলেসে তার সম্মেলন চলাকালীন অনেক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক শিল্পীদের সাথে প্রতারণার ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।

তার লস অ্যাঞ্জেলেসে কনভেনশনের ব্যর্থতা এবং তহবিলের অপব্যবহার নিয়ে সেই সময় বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক সংবাদ প্রচার হয়। আহবায়ক কমিটির অন্য একজন নির্বাচিত সদস্য বেদারুল ইসলাম বাবলা ২০১৫ সালে তার সম্মেলনে ব্যাপকহারে আদম ব্যবসার চালিয়ে তার শ্যালক শাহিনসহ ফোবানার নামে হাজার হাজার ডলার সংগ্রহ করে করেছেন। তিনিও নির্বাচনে পরাজিত হন এবং নির্বাচনে একজন অসামান্য সদস্য হিসাবে সর্বনিম্ন সংখ্যক ভোট পেয়েছিলেন কিন্তু শুধুমাত্র সমস্ত প্রাক্তন চেয়ারম্যানদের অনুগ্রহে তিনি এই সময়ে মেয়াদে জয়লাভ করতে পেরেছিলেন।

এই তথাকথিত আহবায়ক কমিটির অন্য এক সদস্য জাকারিয়া চৌধুরী কমিটির একজন স্বঘোষিত ষড়যন্ত্রকারী এবং মাস্টারমাইন্ড। প্রাক্তন চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি উপ-আইন এবং সংবিধানের জিরো টলারেন্স নীতি লঙ্ঘন করেছেন। ফলে চেয়ারম্যান থাকাকালে তাকে অযোগ্য ও নিরক্ষর ঘোষণা ঘোষনা করা হয়।

তার বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে বেআইনিভাবে এবং একতরফাভাবে ফোবানা কে বহিষ্কার করার জন্য ভাইস চেয়ারম্যান এবং নির্বাহী সেক্রেটারি যদিও তা করার কোনো ক্ষমতা নেই। ফোবানা থেকে ঘুষ দিয়ে দেশের টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রের সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। তার নিজের জন্য প্রচার করা ছাড়া আর কোন বিপণন যোগ্যতা নেই। তদুপরি তিনি জি আই রাসেল এবং শিব্বির আহমদের অসম্মানজনক কর্মের পরামর্শদাতা এবং মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। জাকারিয়া চৌধুরী ফোবানা শিল্পী এবং পৃষ্ঠপোষকদের সাথেও প্রতারণা করেছেন। এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে, উপরোক্ত দুই ব্যক্তি জি আই রাসেল এবং শিব্বির আহমেদ এই তথাকথিত আহবায়ক কমিটিতে রয়েছেন। যেহেতু তাদের বেআইনি কাজের কারণে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে এবং দ্রুত ফোবানা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

তাদের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তারা গত ফোবানা সম্মেলনে হাজার হাজার ডলার হাতিয়ে আত্মসাত করেছেন এবং ফোবানা সদস্যদের সাথে প্রতারণা করেছেন। তথাকথিত আহবায়ক কমিটির অধীনে তালিকাভুক্ত বেশ কিছু ব্যক্তি এবং সংস্থা রয়েছে, যারা এমনকি জানেন না যে তারা এই ভুয়া আহবায়ক কমিটিতে রয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা এই বেআইনিভাবে গঠিত আহবায়ক কমিটি বেশিরভাগই এক-ব্যক্তি সংস্থা, স্ত্রী-স্বামী সংস্থা, বা ব্যবসায়িক অংশীদার সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত এবং বেশিরভাগেরই ফোবানা সদস্য হওয়ার যোগ্যতাও নেই।

চলতি মাসের ২ জুন কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে ফোবানা এবং ফোবানার কেন্দ্রীয় কমিটি বিরোধী কিছু ব্যক্তি দ্বারা ফোবানার নতুন এডহক কমিটি সংক্রান্ত এক ভুয়া সংবাদ প্রচার করা হয়েছে, যা কোনোক্রমেই সত্য নয় এবং অসাংবিধানিকভাবে ফোবানার নিয়মনীতির প্রতি অশ্রদ্ধা দেখিয়ে এই অপচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে ফোবানা চেয়ারম্যান রেহান রেজা ও এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি মাসুদ রব চৌধুরী স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান। তারা বলেন ফোবানার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য এবং ফোবানায় বিভাজন সৃষ্টির অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে বহিস্কৃত এবং ফোবানার নির্বাচনে পরাজিত কিছু ব্যক্তি এসব কর্মকান্ড চালাচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ শে ফোবানার কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় যেসব ব্যক্তিদের তাদের অগ্রহণযোগ্য আচরণের জন্য সভা থেকে বহিস্কৃত করা হয়েছে, তা ফোবানার নিয়মনীতি মেনেই করা হয়েছে তাদের অসদাচরণের জন্য। তাই প্রতিশোধ গ্রহণ করার ঘৃণ্য স্পৃহায় সেইসব ব্যক্তিবর্গ কেন্দ্রীয় কমিটি এবং ফোবানার সংবিধানের বিরুদ্ধে গিয়ে নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করার অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যারা অসাংবিধানিভাবে ফোবানার কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করার মতো বিষয় উপস্থাপন করে নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে তারাও এক সময় ফোবানার মূল নেতৃত্বে ছিলেন। ভাবতে অবাক লাগে, তাদের আহুত চক্রান্তমূলক সভায় অংশগ্রহণকারী যে সব সংগঠনের কথা বা যে সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া এবং অসত্য। আমরা দ্বিধাহীনভাবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানাতে চাচ্ছি-ফোবানার কেন্দ্রীয় কমিটি এখনো ফোবানার সংবিধান অনুযায়ী বহাল রয়েছে এবং ফোবানার সকল কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য ফোবানার বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি অটল ভূমিকা পালন করে যাবে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ২-৪ তারিখে ৩৬তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরে। স্বাগতিক সংগঠন হিসেবে কাজ করছেন 'বাংলাদেশ অ্যাসোশিয়েশন্স অব শিকাগোল্যান্ড'। সাম্পতি গণমাধ্যমে ফোবানা বিরোধী উক্ত কূচক্রিমহলের ভুয়া তথ্য ও সংবাদে বিভ্রান্ত না হবার জন্য আহবান জানান ফোবানা কর্তৃপক্ষ।

(এন/এসপি/জুন ২০, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test