E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

লতিফ সিদ্দিকী আবার নিউইয়র্কে, গন্তব্য কানাডা

২০১৪ অক্টোবর ০৩ ১০:৫৪:৩৭
লতিফ সিদ্দিকী আবার নিউইয়র্কে, গন্তব্য কানাডা

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : অশালীন অযৌক্তিক অসামাজিক অসৌজন্যমূলক অগ্রহনযোগ্য অনভিপ্রেত এবং অসাংবিধানিক বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের মন্ত্রীসভা থেকে অপসারিত আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এখন পাশ্চাত্যের সুবিধাজনক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। মেক্সিকোর হোটেলে দু’রাত কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস হয়ে ফের নিউইয়র্কে এসে সস্ত্রীক দিনাতিপাত করছেন তিনি।

২ অক্টোবর বৃহষ্পতিবার নিউইয়র্ক-ঢাকা তার এয়ারটিকিট রি-কনফার্ম থাকলেও আপাতত দেশে না ফেরারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত চারদিন মেক্সিকো এবং নিউইয়র্কে যারা লতিফ সিদ্দিকীকে সঙ্গ দিয়েছেন বা কাছাকাছি ছিলেন তারা এই প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২৮ সেপ্টেম্বর রবিবার নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির অনুষ্ঠানে বোমা ফাটিয়ে পরদিনই অর্থাৎ সোমবার উড়াল দেন প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকোতে।

৩০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাজধানী মেক্সিকো সিটি থেকে প্রায় ৫শ’ কিলোমিটার দূরবর্তী গুয়াদালাজারা শহরে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলনে (ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন আইসিটি) যোগদান এবং বাংলাদেশের পক্ষে ‘গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ নিজহাতে গ্রহণ করার কথা ছিল তৎকালীন মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর। মেক্সিকো সিটি থেকে সংশ্লিষ্ট সূত্র এই প্রতিবেককে জানাচ্ছে, ২৯ সেপ্টেম্বর এখানে পৌঁছার পর থেকে পহেলা অক্টোবর বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের উদ্দেশ্যে মেক্সিকো ছেড়ে যাবার আগ পর্যন্ত লতিফ সিদ্দিকীকে ন্যূনতম বিচলিত দেখা যায়নি।

মেক্সিকোতে পৌঁছার পর থেকেই সফরসঙ্গী স্ত্রী প্রতিমুহূর্তে তাকে আপডেট দিয়ে যাচ্ছিলেন অনলাইন নিউজপোর্টালগুলো থেকে। তাদের দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিতদের ভাষ্যমতে, ঘন্টায় ঘন্টায় পরিস্থিতি লতিফ সিদ্দিকীর প্রতিকূলে ‘রান’ করলেও অত্যন্ত ধীরস্থির ও স্বাভাবিক ছিলেন তিনি। “অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানস্থলে লতিফ সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন এবং মঞ্চে না উঠে তিনি মঞ্চের সামনে নিজ আসনে বসেছিলেন”- এইমর্মে ঢাকা থেকে সংবাদ প্রকাশিত হলেও মূলত মঙ্গলবার সন্ধ্যার ঐ অনুষ্ঠানস্থলেই যাননি তিনি। তবে ঠিক ঐ সময় গুয়াদালাজারা শহরেই ছিলেন লতিফ সিদ্দিকী এবং হোটেলে শুয়ে-বসে সময় অতিবাহিত করেন।

প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সিদ্ধান্তের কথা তাকে জানানো হলেও বিন্দুমাত্র ‘নার্ভাসনেস’ পরিলক্ষিত হয়নি সাবেক এই জাঁদরেল নেতার মাঝে। বুধবার মেক্সিকো সিটি থেকে সস্ত্রীক ডালাস রওয়ানা হয়ে যান লতিফ সিদ্দিকী। সেখান থেকে ফিরে আসেন আবার নিউইয়র্কে। ২ অক্টোবর বৃহষ্পতিবার ‘জেএফকে’ থেকে ঢাকার ফ্লাইট ধরার কথা থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিউইয়র্কেই ক’দিন থাকার সিদ্ধান্ত নেন লতিফ সিদ্দিকী। পরিবারের তরফ থেকে তাঁকে জানানো হয়, এই মুহূর্তে ঢাকা থেকে কোন গ্রীন সিগন্যালতো নেইই বরং এমনও বলা হয়েছে, খোদ কারাগারের অভ্যন্তরেও তার নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খেতে হবে কারারক্ষীদের।

মেক্সিকো ও নিউইয়র্কের সূত্রগুলো এই প্রতিবেদককে আরো জানায়, গত কয়েক দিনে লতিফ সিদ্দিকীর কথাবার্তা চালচলন কথোপকথন সর্বোপরি তার মানসিক স্থিতিশীলতা ও ‘বডিল্যাংগুয়েজ’ বলছে, তিনি সজ্ঞানে সুস্থ মস্তিষ্কে জেনেশুনে এবং আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েই রবিবার টাঙ্গাইল সমিতির মিটিংয়ে স্বভাবসুলভ ভাষ্য প্রদান করেন। জানা গেছে, মেক্সিকো থেকে ফেরার পর চলতি সপ্তাহে নিউইয়র্কে তার অবস্থানের উদ্দেশ্য এখন দুটো। প্রথমত নিরাপদ স্থান থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং ফাইনাল ডেস্টিনেশন হিসেবে কানাডায় যাবার আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা।

লতিফ সিদ্দিকীর বোন এবং মেয়ে যেহেতু আগে থেকেই টরন্টোর অধিবাসী, সেক্ষেত্রে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তিনি তাদের ‘স্থায়ী আতিথেয়তা’ নিতে পারেন এমন সংবাদ কয়েকদিন আগে ঢাকার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ঢাকা-টাঙ্গাইল-নিউইয়র্ক-মেক্সিকো-ডালাস-টরন্টো তথা দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত আদ্যোপান্ত অনুসন্ধান ও চলমান ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষনে এমনটা দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার হয়ে উঠছে যে, লতিফ সিদ্দিকী তার স্বেচ্ছা নির্বাসন প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে একটু অন্যভাবে নিশ্চিত করেছেন এ যাত্রায় ‘সাত সমুদ্র তের নদী’র ওপারে। যৌক্তিক ও অর্থবহ কারণও রয়েছে নেপথ্যে।

প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে সম্প্রতি লতিফ সিদ্দিকীর কয়েকশ’ কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিশাল খতিয়ান। বিগত মহাজোট সরকারের সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন ‘ম্যারাথন করাপশন’ ও ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করে সম্পদের পাহাড় গড়েন অধুনাপতিত এই মন্ত্রী। সরকারী সম্পত্তি পানির দামে বিক্রি করে দেবার পাশাপাশি কামিয়ে নেন কয়েকশ’ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঐ তদন্ত টিমের প্রতিবেদন ইতিমধ্যে জমা দেয়া হয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ে, যাতে সন্নিবেশিত হয় লতিফ সিদ্দিকীর দুর্নীতির প্রায় অর্ধশত প্রমাণ। দুর্নীতির এই মহারাজাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকের প্রস্তুতিও যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে, ঠিক তখনি সস্ত্রীক দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন লতিফ সিদ্দিকী।

তাছাড়া বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ে যে স্টাইলে লুটপাট তিনি চালিয়েছিলেন, একই স্টাইলে নতুন মন্ত্রনালয়ে হরিলুটের পাইপলাইনটি তিনি ঠিক সেভাবে ক্লিয়ার রাখতে পারছিলেন না, ঢাকার বিভিন্ন সূত্র এমনটাই জানিয়েছে এই প্রতিবেদককে। সব মিলিয়ে নিরাপদে দেশত্যাগের জন্য কাঁচামাল হিসেবে তিনি বেছে নেন সহজলভ্য পাবলিক সেন্টিমেন্টকে। ধর্মকে নিয়ে কটাক্ষ করলে একদিকে বাংলাদেশে যারপরনাই তোলপাড় হবে এটা যেমন নিশ্চিত ছিলেন লতিফ সিদ্দিকী, পাশাপাশি ভালোভাবেই অবগত ছিলেন স্পর্শকাতর এই ইস্যুতে পাশ্চাত্যের অনেক দেশেই তিনি সস্তা সহানুভূতির পাত্র হবেন।

গত টার্মে কামানো কয়েকশ’ কোটি টাকা যার অধিকাংশই ইতিমধ্যে দেশের বাইরে পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে, তার রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিজের নিরাপত্তা সহ সবকিছুর ‘ইউনিক সলিউশন’ হিসেবেই লতিফ সিদ্দিকী নিউইয়র্কে ‘বলি’ দেন টাঙ্গাইলের নির্বোধ প্রবাসীদের, মর্মাহত করেন বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী ধর্মপ্রাণ মানুষদের। ক্যাবিনেট থেকে তাকে ‘কিকআউট’ করে প্রধানমন্ত্রী ‘স্মার্টনেস এন্ড ইন্টেলিজেন্সি’র পরিচয় দিয়েছিন ঠিকই তবে বিশ্লেষকরা বলছেন,লতিফ সিদ্দিকীর এই ‘প্রি-প্ল্যান্ড’ দেশত্যাগ বাংলাদেশের রাজনীতির দেউলিয়াত্ব এবং রাজনীতিবিদদের মহাদুর্নীতির ‘লেটেস্ট এপিসোড’ সহসাই নতুনভাবে জানান দেবে বিশ্ব দরবারে।

(এমএইচ/জেএ/অক্টোবর ০৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test