E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাওয়ার বাৎসরিক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, পার্থের মাটিতে এক অনন্য উপস্থাপনা

২০২২ আগস্ট ২৫ ১৮:১৩:৩৬
বাওয়ার বাৎসরিক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, পার্থের মাটিতে এক অনন্য উপস্থাপনা

বিশ্বজিৎ বসু : বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া এসেসিয়েশন অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া সংক্ষেপে বাওয়া। পার্থের মাটিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন। প্রবাসে বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার লক্ষ্যে চল্লিশ বছর আগে১৯৮২ সালে গুটিকয়েক পরিবারের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল এ সংগঠনটি।

বাওয়ার বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অন্যতম। প্রতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালনসহ একাধিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাওয়া। এর মধ্যে অনন্য এই বাৎসরিক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। কমিউনিটির সদস্যদের কাছে এ অনুষ্ঠানের আবেদনের মাত্রা সবচেয়ে বেশী। কমিউনিটির ভাষায়এ অনুষ্ঠানের নাম"এনুয়াল কনসার্ট "

প্রতি বছর এপ্রিলে নববর্ষ উদযাপনের পরপর শুরু হয়ে যায় এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। সাংস্কৃতিক সম্পাদক ব্যস্ত হয়ে পরেন অনুষ্ঠান পরিকল্পনায়। কোন কোন গান হবে, কোন গানে নাচ হবে, কে নাটিকা লিখবে, কে অভিনয় করবে। কে হবে কোরাস গানের দলের সমন্বয়ক। কে দলীয় নৃত্যে পরিচালনা করবে। সে এক মহাযজ্ঞের প্রস্তুতি। পরিকল্পনা শেষে শুরু হয় রিহার্সাল, শুরু হয় বাবা মায়ের ব্যস্ততা। বাচ্চাদের নিয়ে আজ গানের রিহার্সালেতো কাল নাচের রিহার্সালে। আজ কারো বাড়িতে রিহার্সেল তোকালকোন কমিউনিটি হলে। এ এক সাজ সাজ রব। এভাবে তিন-চার মাসের ধারাবাহিক মহড়ার আসে সেই মহেন্দ্রক্ষণ।

গত ১৩ই আগস্ট সন্ধ্যা ৬.৩০ ছিল সেই মহেন্দ্রক্ষণ, ২০২২ সালের সেই এনুয়াল কনসার্ট। কমিউনিটির সদস্যদের মত আকাশের মেঘেরাও সেদিন ছিল আনন্দে মাতোয়ারা। সারাদিন ছিল পাগলা হাওয়ার বাদল দিন। আর বাদল সন্ধ্যায় নেচে উঠেছিল পেনরোজ কলেজের অডেটেরিয়াম।

জাতীয় সংগীতের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পাঠশালাবাংলাস্কুলেরছাত্রছাত্রীরা পরিবেশন করে বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত। পাঠশালা বাংলা স্কুলের ক্ষুদে শিশু শিল্পীদের প্রশিক্ষণ ও সমণ্বয়ের দায়ীত্বে ছিলেন স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল শর্মিষ্ঠা সাহা। এরপর বাওয়ার চল্লিশতম বর্ষপূর্তিকে স্মরণকরে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রনাথের গান "জগত জুড়ে উদার সুরে"। মনোনীতা ঘোষের নেতৃত্ব কমিউনিটির তিন প্রজন্মের শিল্পীরা অংশগ্রহণকরে এ দলীয় সংগীতে। উদার সুরের মুর্ছনা শেষ হতেই মঞ্চে আসেন বাওয়ার সভাপতি শাহেদীন শহীদ রাজু। সাতশত দর্শকের ক্ষমতা সম্পন্ন হল তখন কানায় কানায় পূর্ণ।সভাপতির স্বাগত ভাষণেরসময় স্ক্রিনে ভেসে উঠে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার প্রিমিয়ার মার্ক ম্যাগোয়ানের শুভেচ্ছা বানী। স্বাগত ভাষণেরপর পরিবেশিত হয় ভৈরবী সংগীত বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশনা।

ভৈরবী স্কুলের কর্ণধার শাওলী শহীদের পরিচালনায় ইমন রাগের উপর সুর করা গান গেয়ে শোনায় স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা। রাগের মুর্ছনা শেষ হতে না হতে পরিবেশিত হয় কথক নৃত্য। কথকনৃত্যনিয়ে মঞ্চে আসে পার্থের স্ববি খ্যাত নাচের স্কুল স্বরসতী মহাবিদ্যালয়। এরপর অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মঞ্চে ডাকেন অতিথিদের।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার আইন সভার সদস্য ইয়াজ মোবারকি, বিশেষঅতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আইন সভার সদস্য ডাঃ জগদীশ কৃষ্ণান, সিনেটর ফাতিমা পাইমান, ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ভাইস চ্যান্সেলক প্রফেসর অমিত চাকমা, সিটিজেনসিপ এবং মাল্টিকালচার ইন্টারেস্ট অফিসের সিনিয়র পলিসি এডভাইজার সাইদ পাদসা, ইন্ডিয়ান সেসাইটির সভাপতি সতীশ নারায়ণ এবং নেপালি এসেসিয়েশনের সভাপতি বাসুদেব রিগমি।

মঞ্চে অতিথিদের স্বাগত জানান বাওয়া সভাপতি শাহেদীন শহীদ এবং সাধারণ সম্পাদক আবুসাইদ আনোয়ার। তাঁদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় পাঠশালা বাংলা স্কুলের ক্ষুদে ছাত্রছাত্রীরা। অতিথিদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ইয়াজ মেবারকি। এরপর তাসলিমুল গালিব অমিতের নির্দেশনায় পরিবেশিত হয় ফোক এবং বাউল গান। পার্থে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের ত্রিশজন শিল্পী অংশগ্রহণ করে এ পরিবেশনায়।

এরপর ধারাবাহিকভাবে পরিবেশিত হয় নেপালী যুগল নৃত্য, মনোনীতা ঘোষের একক সংগীত, মিথিলা রায়ের পরিচলানায় শিশুদের দলীয় ডিজনি ড্যান্স, রাইসা আনোয়ারের একক সংগীত। প্রথমার্ধের শেষ পরিবেশনা ছিল জারিন লিমার পরিচালনায় শিশুদের দলীয় হাজং নৃত্য।

বাওয়া আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি একটি একটি বৈচিত্র্যময় শিল্পকলার সমাবেশ। ভিতরে মঞ্চে যখন একের পর এক বৈচিত্র্যময় পরিবেশনা তখন জারিন জাহিদ নুপুরের পরিকল্পনায় বাইরে চল্লিশ বছরের ইতিহাস নিয়ে চলছিল প্রদর্শনী।যেখানে এসে দর্শকেরা খুঁজে পায় গত চল্লিশ বছরের ইতিহাস আর এ স্মৃতিতে ধরে রাখতে ছবি তুলে মনের আনন্দে।

বিরতির পর অনুষ্ঠান শুরু হয় বাওয়ার সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ আনোয়ারের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। এরপর মঞ্চে আসেন বাওয়া সভাপতি তার দুই কন্যাকে নিয়ে। তারা পরিবেশন করেন গান" মনশুধু মন ছুয়েছে"।শেষ হতেই শুরু হয় জারিন লিমার পরিচালনায় দলীয় নাচ "সোহাগ চাঁদ বদনী ধনী"।

সোসাল মিডিয়ার জয়জয়কার এযুগে খুব পরিচিত শব্দ ভাইরাল। ২০২২সালে সোসাল মিডিয়াতে ভাইরাল ভুবন বাদ্যকরের কাঁচা বাদাম গানের সাথে নাচ নিয়ে এসেছিল রিজয়ান ইসলামের নির্দেশনায় একদল ক্ষুদে নৃত্যশিল্পী। সোহাগ চাঁদবদনী আর কাঁচা বাদাম পর পরিবেশিত হয় ফারহানা আলী সুমীর রচনা এবং নির্দেশনায় নাটিকা "তার ছেড়া পোডাকশান"

অনুষ্ঠান তখন প্রায় শেষের পথে। এপর্যায়ে মঞ্চে এসে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অনুষ্ঠানের মূল পরিকল্পনাকারী এবং প্রধান সমণ্বয়ক বাওয়ার সাংস্কৃতিক সম্পাদক স্বর্ণা আফসার। তারপর শুরু হয় অনুরোধের আসর। হলে উপস্থিত দর্শকদের অনুরোধ থেকে গান গেয়ে শোনায় তাসলিমুল গালিব অমিত এবং শাওলী শহীদ।সবশেষে পরিবেশিত হয় মিথিলা রায় এবং অনন্যা শর্মার নির্দেশনা ও পরিচানায় দলীয় নৃত্য "স্বদেশ বন্দনা"এবং এখানেই শেষ হয় ২০২২ এর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।

অনুষ্ঠানে পার্থের মাটিতে বেড়ে ওঠা ১০৫ জন শিশু কিশোর সহ ১৪১ জন শিল্পী অংশগ্রহণ করে এ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন অনিন্দিতা চক্রবর্তী এবং নওশিন রাজিয়া এবং ফারহানা আলী সুমী। মঞ্চ ব্যবস্থাপনায় ছিলেন তানজিব শহীদ, নাফিসা আক্তার চৌধুরী, মোঃ মাজেদুল ইসলাম, মোঃ কেফায়েত মজুমদার, মোঃমান্নান মামুন, সৈয়দ মোঃ মারুফ। শব্দ সঞ্চালন ও আলোক প্রক্ষেপণে ছিলেন তাসলিমুল গালিব অমিত।

(বিবি/এসপি/আগস্ট ২৫, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test