E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গ্রীসের রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী লায়লা আইওএম থেকে বহিষ্কৃত

২০১৪ অক্টোবর ২২ ১৪:৪৬:০৭
গ্রীসের রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী লায়লা আইওএম থেকে বহিষ্কৃত

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : ধর্মের কল বাতাসে নড়ে – কথাটি আরো একবার সত্য প্রমাণিত হয়েছে গ্রীসে। অর্থের লোভে লংকাকাণ্ড ঘটিয়ে আইওএম-এর পার্টটাইম দোভাষীর চাকরি হারালেন লায়লা এন্টিপাস। গ্রীক পাসপোর্টধারী এই বাংলাদেশি নারীর দায়ের করা তথাকথিত যৌন কেলেংকারির অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদকে এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় সম্প্রতি ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। সরকারের এই নেতিবাচক সিদ্ধান্ত ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয় এথেন্সের বাংলাদেশ কমিউনিটিতে।

একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে মুখরোচক অভিযোগ এনে লাইমলাইটে চলে আসা লায়লার মূল পেশার আদ্যপ্রান্ত অনুসন্ধানে নামে গ্রীক গোয়েন্দা বিভাগ। কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে তাদের তদন্তে। পার্টটাইম দোভাষীর ছদ্মাবরণে লায়লার বিগত দিনের বহুবিধ অপকর্মের আমলনামা দেরিতে হলেও পৌঁছে যায় এথেন্সের আইওএম কান্ট্রি অফিসে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর গ্রীস কান্ট্রি অফিস থেকে লায়লা এন্টিপাসের অপসারণের বিষয়টি ২২ অক্টোবর বুধবার এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন আইওএম-এর একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, লায়লাকে আমরা আমাদের অফিসে পার্টটাইম দোভাষীর চাকরি দিয়েছিলাম বাংলাদেশ কমিউনিটির এক প্রেসিডেন্টের সুপারিশে, কিন্তু কখনো তার অতীত-বর্তমান কিছুই আমরা তলিয়ে দেখিনি।

দুঃখ প্রকাশ করে এথেন্স আইওএম-এর ঐ কর্মকর্তা আরো বলেন, লায়লাকে অপসারন করার সিদ্ধান্তটি আমরা নিতে বাধ্য হই ঠিক তখনই যখন আইওএম জানতে পারে যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে গ্রীস থেকে সরাতে দোভাষী লায়লার সাথে স্থানীয় বাংলাদেশি ব্রোকারদের বড় অংকের আর্থিক লেনদেন হয়েছে এবং এতদসংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ এখন আইওএম-এর হাতে রয়েছে। এথেন্স আইওএম যে কোন অন্যায়কে অতীতে কখনো প্রশ্রয় দেয়নি এবং দেবেও না বলে জানান উক্ত কর্মকর্তা।

আইওএম থেকে লায়লার বহিষ্কারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এথেন্সের সুপরিচিত আরেক বাংলাদেশি দোভাষী যিনি দীর্ঘদিন কাজ করে এসেছেন গ্রীক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে। লায়লার অন্ধকার জগতের সরব স্বাক্ষী গ্রীসেই বসবাসরত তার আপন বোন খালেদা, যার ওঠাবসা আবার এথেন্সের পাকিস্তানিদের সাথে। প্রসঙ্গত, শুধুমাত্র ইউরোপীয় পাসপোর্ট পেতে কয়েক বছর আগে বাবার বয়সী এক গ্রীক নাগরিককে বিয়ে করে ক্ষান্ত হননি লায়লা, দেহ ব্যবসার এক সুবিন্যস্ত নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে আসছিলেন সাফল্যের সাথে।

অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে একপর্যায়ে লায়লা এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন যে, আপন বোন খালেদাকে জোরপূর্বক দেহব্যবসায় রাজি করাতে না পেরে শারীরিকভাবে টর্চার করতেও কুন্ঠিত হননি। এনিয়ে প্রকাশ্যে অনেক তোলপাড় হয় এথেন্সের বাংলাদেশ ও পাকিস্তান কমিউনিটিতে। লায়লার অন্ধকার জগত এখানেই শেষ নয়। লেবানন থেকে আসা যেসব বাংলাদেশি মহিলারা এথেন্সে গত কয়েক বছর ধরে অবৈধ দেহব্যবসার সাথে জড়িত, তাদেরকে আইওএম-এর ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্যাশ কমিশন আদায় করতেন লায়লা, বিষয়টি এথেন্সে অনেক আগে থেকেই ওপেন সিক্রেট।

অন্ধকার জগত থেকে কালো টাকা সময়ে সময়ে লায়লার হাতে এলেও রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ক্ষিপ্ত গ্রীসের দালাল সিন্ডিকেটের প্রলোভনের জালে আটকে যান তিনি। আত্মস্বীকৃত দুই দালাল মিজানুর রহমান ও শেখ কামরুলের গোপন ছকে রাতের আঁধারে লায়লাকে পৌঁছে দেয়া হয় মোটা অংকের অর্থ। এটাকে ‘পার্ট অব বিজনেস’ হিসেবে নিয়ে লায়লা নিজেই মাঠে নামেন দালালদের ক্রীড়ানক হিসেবে, ইউরো হালাল করতে আইওএম-এর নাম ভাঙ্গিয়ে যা করার তাই করেন তিনি।

উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গ্রীসে কোন প্রকার আইনের আশ্রয় না নিয়ে লায়লা রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে অভিযোগনামা পাঠান।

নারী কেলেংকারির সস্তা অভিযোগ আমলে নেয়া হয় ঢাকার সেগুনবাগিচা থেকে। দূতাবাসকে দালালমুক্ত করার পুরষ্কার (?) স্বরূপ রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ নভেম্বরের শুরুতে ফিরে যাচ্ছেন ঢাকায়। অন্যদিকে আইওএম থেকে অপসারিত হবার পর লায়লা ইতিমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে প্রকাশ। অভিযোগকারী লায়লা যদি ধোয়া তুলসী পাতাই হবেন, তবে আইওএম কেন তাকে আজ বহিষ্কার করেছে – এই প্রশ্ন এখন বারে বারে উচ্চারিত হচ্ছে এথেন্সের বাংলাদেশ কমিউনিটিতে।

(এএস/অক্টোবর ২২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test