E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

৫৭ ধারাতে সত্য বলা ছেড়েই দিলাম

২০১৫ নভেম্বর ১১ ০৮:১৪:২৭
৫৭ ধারাতে সত্য বলা ছেড়েই দিলাম

।।মাহবুব আরিফ।।


বাংলাদেশের মানুষের জন্যে যা নাকি ছিল স্বপ্ন, সেটাকেই বাস্তবতার রূপ দেবার চেষ্টা বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারে । জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক রাজাকারদের বিচার শুরু করার উপর ভিত্তি করেই এই সরকারের ক্ষমতায় আসা, বর্তমান সরকারের ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সব চাইতে বড় অর্জন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্য সুসম্পন্ন করা আর রাজাকারদের বিচার কার্য শুরু করা | মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় বিচার বিভাগ এ দেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্য সম্পন্ন করতে পেরেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা না থাকলে এই দেশে কোনদিনই এতো বড় দুটি কর্ম সম্পাদন করা সম্ভব ছিল না ।

রাজনৈতিক দল হিসাবে বি এন পিকে অকেজো করার চাইতে বি এন পি থকে জামাতকে বিচ্ছিন্ন করাই ছিল বুদ্ধিমানের কাজ, যে কাজটি বর্তমান আওয়ামীলীগ তো করতেই পারলো না বরং নিজেদের দলে কিছু শিবিরের অনুপ্রবেশ কারীদের স্থান করে দিল । মানেটা দাঁড়াচ্ছে এই রকম যে জামাত শিবির বি এন পিতে যতটা না শক্তিশালী ছিল তার চাইতে দিগুণ শক্তি নিয়ে আওয়ামীলীগে ঢুকে গেল, পরিস্থিতি এখন এমন একটা পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যে বি এন পি শেষ হবার আগেই কিনা আওয়ামীলীগের খেতায় আগুন লেগে যায় ।

কিন্তু হায়, আওয়ামীলীগের সব অর্জন যে আজ বিফলে যাওয়ার পথে, দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আজ অধঃপতনের চরম সীমায় ফলে মানুষ নিরাপত্তা হীনতায় দিন যাপন করছে । দলীয় সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশের সর্ব ক্ষেত্রে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে, প্রশাসন কোন ভাবেই কোন কিছু নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না । একদিকে বি এন পি কে অকেজো করে বিরোধী শক্তি বিহীন সংসদের সৃষ্টি করে জামাত শিবিরের কর্মীদের রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে বরণ করার উৎসবে মেতেছে সরকারী দলের চামচা প্রকৃতির লোকজন, কিছুদিন আগেই যোগাযোগ মন্ত্রী নেতাদের বিলবোর্ড দেখে মন্তব্য করেন "ঢাকা শহর এখন নেতা তৈরি করার কারখানা, তিনি নিজে সিএনজি অটোরিকশা চালককে একজন পুলিশ অফিসারকে দিয়ে কান ধরিয়ে উঠ বস করান, আবার সুযোগ পেলেই সরকারী কর্মকর্তাদের আইনের হাতে তুলে না দিয়ে নিজেই চড় থাপ্পড় দিয়ে জনসম্মুখে অপমান করেন, অপমানের ধাক্কা সইতে না পেরে সরকারী কর্মকর্তার স্কুলে কলেজে পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ।

সত্যই কথা বলতে গেলে এই চিত্রটা দেশে কি প্রবাসে দেখতে একি রকম | অনেকের মনেই হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে আওয়ামীলীগ ধারী চামচদের প্রবাসে চিত্রটা দেখতে কেমন ? প্রবাসের চিত্রটা দেখতে প্রায় একি রকম, দেশ থেকে প্রবাসে সফররত আগত নেতা, মন্ত্রী, সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মচারীদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে তাদের সাথে ছবি তুলে নিতে পারলেই শুরু হয় এইসব প্রবাসী কর্মীদের আসল কর্মকাণ্ড| এইসব নেতা, মন্ত্রীরা চামচাদের সহযোগিতায় শুরু করে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার, নেতা ও সরকারী কর্মচারীরা ঠিক এ ভাবেই বিভিন্ন দেশে নামে, বেনামে প্রচুর টাকা পাচার করে থাকেন, বর্তমান সুইস ব্যাঙ্কে বাঙ্গালীদের টাকার পরিমাণ দেখলেই বুঝতে পারবেন টাকার অঙ্কটা কি পরিমাণের, চামচারা এইসব ছবি নিজ গ্রাম, পারা প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বিতরণ করে এক একজন মহারথী সেজে বসেন, শুধু এতেই ক্ষান্ত হয় না এদের কাজ, শুরু হয় অন্যান্য প্রবাসীদের হুমকি ধমকি, কারণ নেতা ও সরকারী কর্মচারীদের সুবিধা দিয়ে স্বার্থ উদ্ধার করাই হচ্ছে এই সব প্রবাসী পাতি নেতাদের কাজ, দেশে ভ্রমণ কালে দলীয় কার্যালয়ে নিজেদের অমুক দেশের তমুক নেতা জাহির করে পরিচয় দিয়ে থাকেন, আসল দৃশ্যটা কিন্তু ভিন্ন, যেখানে প্রবাসে বাংলাদেশর কোন রাজনৈতিক দলের কোন শাখা সংগঠন থাকার কথা না, রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র থকে এই নিয়ম বাদ দেয়া হয়েছে, প্রবাস দলীয় সমর্থক গোষ্ঠী থাকতে পারে, তারপরও এইসব আতি পাতি নেতারা প্রবাসে দলীয় শাখা সংগঠন বানিয়ে বসে আর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে একটা অনুমোদনও কখনো কখনো জোগাড় করে বসে । আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলেও প্রবাসে এইসব নব্য আওয়ামী লীগের আক্তন নেতা, প্রাক্তন নেতা, দেশী নেতা, প্রবাসী নেতা, অতিনেতা,পাতি-নেতা, বাম নেতা, ওলামা নেতাদের দাপটে আমরা সাধারণ বাঙালি প্রবাসীরা ভয়ে তটস্থ থাকি পাছে দেশে নিজের জায়গাজমি নিয়ে না আবার বিপদে পড়ে যাই, কারণ প্রশাসনের লোকজনদের সাথে তো এদের দারুণ সখ্যতা । ঠিক যেমনটি আমাদের যোগাযোগ মন্ত্রী বলেছেন, দেশটা যেন নেতা তৈরির কারখানা । আওয়ামীলীগ কি এখন নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছে ? যদি তাই হয়, আমরা সাধারণ মানুষ যারা স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আওয়ামীলীগের উপর ভরসা করে আছি তারা কোথায় যাবো ?

প্রবীর শিকদারের মত একজন আওয়ামীলীগের সমর্থক, যার কণ্ঠে আছে সততা, স্বপ্নে আছে বঙ্গবন্ধু আর ভালবেসেছেন এই বাংলাদেশকে, যিনি সন্ত্রাসীর হামলায় গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু জীবন যাপন করছেন, সন্ত্রাসীরা তাঁর একটি পা কেড়ে নিয়েছে একটি হাত কে করেছে অকেজো । শ্রদ্ধেয় প্রবীর শিকদার শুধু মাত্র একটি হাত দিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে এসে রাজাকার বিরোধী আন্দোলন করেছেন , আমাদের অনেকের খুব কাছের বন্ধু যার অনুপ্রেরণায় আমরা স্বাধীনতার পক্ষে অন লাইন মিডিয়াতে দিনের পর দিন যুদ্ধ করার সাহস পেয়েছি, আজ তাকেই কিনা হাত কড়া পরিয়ে জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশে মুক্ত স্বাধীন ভাবে কিছু লিখতে গেলেই আমাদের প্রতিটি লেখা ৫৭ ধারাতে ফিল্টার করে নিতে হচ্ছে, রাজাকারদের রাজাকার বলতে অনেকই সাহস হারিয়ে ফেলছে ।

বাংলাদেশের মানুষ আজ শিশু হত্যার হোলি খেলায় মেতে উঠেছে, সোনার বাংলায় সোনার মানুষরা মনের অজান্তেই আজ অন্ধকার জগতের দিকে ধাবিত হচ্ছে | আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, দলীয় চামচারা উন্নয়ন ও অগ্রগতির বুলি শুনিয়ে সামাজিক অপকর্ম গুলোকে ঢেকে ফেলার চেষ্টা করছে । পৃথিবীর প্রতিটি সভ্য দেশের মিডিয়া জগত বাংলাদেশের এই বীভৎস চিত্র দেখে বাক শক্তি হারিয়ে ফেলছে ।
বাংলাদেশ আজ অপরাধের জালে চূর্ণ বিচূর্ণ একটি জাতি, একে উদ্ধার করবে কে ? অসুস্থ রাজনীতি অসুস্থ সমাজ তৈরি করে সেই অসুস্থ সমাজে মানবতা ও মানবিক মূল্যবোধ হ্রাস পেতে থাকে আমাদের মনের অজান্তেই | দিন দিন একটি জাতী তার মানবিক চেতনা-বোধ কে হারিয়ে ফেলে, তখন মানুষই মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলাটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে ধরে নেয় । আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে সামাজিক ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পরে, আর এগুলোকে রক্ষা করার দায়িত্ব অবশ্যই জনগণের ঘাড়ে বর্তায় না, এই দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে সরকারের তথা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার । সঠিক বিচার ব্যবস্থা তৈরি করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার ১০০% দায়িত্ব সরকারের, যেটা সরকার বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, ক্রস ফায়ারে মানুষকে কোমরের নীচে গুলি করা বাঞ্ছনীয়, অথচ এই দায়িত্ব রক্ষা করা তো দুরের কথা অপরাধীরা বিচারবিহীন অবস্থায় রাস্তার উপর মারা পরছে ।

আজ যদি ৫৭ ধরার ভয়ে সত্যকে সঠিক ভাবে বলা থকে বিরত থাকি তবে স্বাধীন বাংলাদেশে নিজেকে একজন অপরাধী হিসাবেই গণ্য হবো, সত্য বলা থেকে আজ যারাই বিরত আছি আমি চাই সত্য প্রকাশে তারও এগিয়ে আসবে । মনে রাখতে হবে যুদ্ধ করে ৩০ লক্ষ প্রানের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন করা হয়েছে, কারুর কাছ থেকে ভিক্ষে করে বাংলাদেশ স্বাধীন করা হয় নাই, সত্যের বাণীকে নীরবে কাঁদতে দেয়া যাবে না, জয় বাংলা, জয় হোক বাংলার মেহেনতি মানুষের ।

লেখক- সুইডেন প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test