E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আমার চোখে প্রবাসে রাজনীতি

২০১৬ মার্চ ১৬ ১১:৫৩:২২
আমার চোখে প্রবাসে রাজনীতি

মাহবুব আরিফ : জ্বি হ্যাঁ আমি একজন প্রবাসী ও বাংলাদেশী, নিজেকে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি মনে করে আজ আমি সেই সাদা কালো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থক, ভাবছেন রঙ্গিন আওয়ামী লীগটা আবার কি!

আমি আসছি সে প্রসঙ্গে, উত্তর দিতে খুব বেশী সময় নেব না, রঙ্গিন আওয়ামী লীগ বলতে যা আমি দীর্ঘ ৩০টি বছরও বেশী প্রবাসে থেকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি সেটাকেই বোঝাতে চাইছি। যারাই আজ দেশের হওয়া খেতে খেতে এই প্রবাসীদের কথা ভুলে গেছেন শুধু তাদেরকে বলছি, হাজার মাইল দূরে মাতৃভূমির ভালোবাসায় যাদের অন্তর প্রতিনিয়ত কাঁদে তাদের হয়তো আপনারা ভুলে গেছেন, অনেকেরই ধারণা ইউরোপে সুখের সাগরে ভেসে বেড়ানো মানুষগুলোর হয়তো আনন্দে আর ফূর্তিতে দিন কাটাচ্ছে, আসলেই কি তাই? দেশের প্রতিটি মানুষকে খুব সহজ করেই বলে দিতে চাই এই প্রবাসের মানুষগুলো বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেই প্রবাসে তাদের আদর্শের দল আওয়ামী লীগ নামের প্রবাসী দলে নাম লেখায়, একজন প্রবাসীও একটি সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে।

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর এই ইউরোপের একটি দেশ সুইডেনের তদানীন্তন রাষ্ট্রদূত জনাব রাজ্জাক সাহেব প্রথম মুস্তাক সরকার আনুগত্য অস্বীকার করে সুইডেনে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন এবং তারই সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের নিবেদিত সৎ কর্মীদেরকে সাথে নিয়েই সুইডেনের মাটিতেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের পদচারণা শুরু করেন, আমার কথা বিশ্বাস না হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাস করলেই প্রমাণ পেয়ে যাবেন।

৮০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে থেকেই ইউরোপে বাঙ্গালীদের ভিড় বাড়তে থাকে আর ঠিক ৯০ দশকের শুরু থেকেই স্বচ্ছ, সুন্দর আর পরিচ্ছন্ন সাদা কালো প্রবাসী আওয়ামী লীগ গুলোর রং বদলাতে শুরু করে। দুর্নীতিবাজ, চাটুকার, ধান্দাবাজদের আগমনে প্রবাসী সাদা মনের দেশ প্রেমিক আওয়ামী লীগের কর্মীরা দূরে চলে যেতে থাকে। দুর্নীতির করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হতে থাকে ইউরোপের আওয়ামী লীগ ও তার কার্যক্রম। মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের অগ্রজ দেশ সুইডেন আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, বিষয়টা একরকম অবাক করার মতই, অন্তত সুইডেনের মাটিতে। ইউরোপ আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা তাদের পছন্দের কর্মীদের এক দেশ থকে অন্য দেশে নির্বাচিত করে চলেছেন, কেউ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন প্রক্রিয়ার কথা বলতে গেলেই দল থকে বহিষ্কারের হুমকি ধমকিতে সাদা কালো মনের আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মীদের দূরে ঠেলে দেন বা তারা দূরত্ব বজায় রাখেন, তখন রঙ্গিন আওয়ামী লীগে শুরু হয় দুর্নীতির খেলা, কে কাকে চেনেন, কোন মন্ত্রীর কাছে কে কত বেশী সমাদৃত, দলের নেতৃস্থানীয়দের কাছে কার পরিচিতি কত বেশী এভাবেই চলতে থাকে রঙ্গিন আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও নির্বাচন।

গত ১৩ই মার্চ, ২০১৬, দীর্ঘ ১৬ বছর পর হয়ে গেল সুইডেন আওয়ামী লীগ সম্মেলন, মাথা ব্যথা সুইডেনে কিন্তু কোন এক মন্ত্রী নাকি ঔষধ খাচ্ছেন ঢাকাতে, সম্মেলনের দিন অন্তত ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে তো সেটাই প্রকাশ পেলো। কাজেই আমি যদি বলি সাদা কালো আওয়ামী লীগ আজ রঙ্গিন হয়ে গেছে, ভুল বলা হবে কি? ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের দুইজন নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ের সারে তিন ঘণ্টা পর সভা স্থলে উপস্থিত হন, দুঃখ প্রকাশ তো দূরের কথা অনেকটা রাজকীয় ভঙ্গিতেই সভায় ২০০ থেকে ৩০০ স্থানীয় বাঙালিদের মতামতের তোয়াক্কা না করে, স্থানীয়দের বক্তব্য দেবার সুযোগ না দিয়েই সমঝোতার বাহানা তুলে সম্মেলন কক্ষে নিজেদের মনগড়া সিদ্ধান্ত দিতে শুরু করতেই হট্টগোল লেগে যায় আর সেটাকে সামাল দিতে পুলিশের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। দেশ ও জাতির জন্যে এটা যে কতটা অপমানজনক তা শুধুমাত্র একজন প্রবাসী বাংলাদেশীই অনুভব করতে পারে, সভ্য দেশে বসবাস করেও প্রবাসী বাঙ্গালীদের এই অসভ্য আচরণ প্রবাসে বাংলাদেশর সুনাম দিনের পর দিন নষ্ট হতে চলেছে।

নির্বাচনের মাধ্যমেই একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করলে হয়তো এই সমস্যার সৃষ্টি হবার সুযোগ থাকতো না, সচরাচর যে দেশে সংগঠন তৈরি হয় সেই দেশের সাংবিধানিক নিয়ম মেনেই একটি নির্বাচন হওয়া উচিত, অন্য দেশের রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র সুইডেনের সাংবিধানিক নিয়ম বা সাংগঠনিক অনেক নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক, বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র মেনে সুইডেনে সংগঠন তৈরি বা নির্বাচন করতে গেলে বিষয়টা নিয়মের মাঝে পরবে না তাই সুইডেনের নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন হওয়া বাঞ্চনীয়, তাই নয় কি? প্রবাসে রাজনৈতিক দল গঠনে, পদ বা স্থান দখলে দুর্নীতি বা পদ বেচাকেনা হবে না এটা কি হলপ করে বলা যায়? কারণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় তখন ইউরোপের একজন আওয়ামী লীগ নেতার দেশের মাটিতে দারুণ প্রতাপ, সামান্য একটু প্রভাব খাটিয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে টাকার বিনিময়ে গ্রাম থেকে শহরে বা শহর থেকে গ্রামে বদলী করাতে পারেন, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ন্যায় নীতির পাশ কাটিয়ে ঢাকাতে একটি জায়গাও বরাদ্দ নিয়ে নিতে পারেন অথবা নিজ এলাকাতে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনী টিকেট যোগাড় করে নিতে পারেন। বাংলাদেশের রাজনীতি বা প্রশাসনে দলই প্রভাব বিস্তারেও দুর্নীতি ঘটে আর তাই প্রবাসী রাজনৈতিক দলের কর্মী হয়ে এই সব কর্মীরা যে দুর্নীতির আশ্রয় নিবে না নেয়া না তার নিশ্চয়তা কোথায়? কারণ তারা তো আজ রঙ্গিন আওয়ামী লীগ নিয়ে ব্যস্ত।

দেশ ও জাতির জন্যে প্রবাসে করণীয় কাজগুলো এগিয়ে নিতে আমাদের প্রয়োজন একটি সাবলীল কর্মক্ষেত্র, সেই দিকে দৃষ্টি দিতে গেলে সুইডেনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি সক্রিয় ভূমিকার প্রয়োজন, প্রবাসে বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক বাংলাদেশ ভিত্তিক আয়োজিত বছরব্যাপী যে সকল আন্তর্জাতিক সভা, সেমিনার আয়োজন করে সে গুলোতে আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নিয়মিত ওয়ার্কশপ ও কার্য প্রণালী নির্ধারণ তথা বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলির সাথে সমন্নয় করে নিজেদের কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, লক্ষ্য রাখতে হবে বর্তমান আধুনিক ও ডিজিটাল যুগে কাজের ধারা, পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। সবার সচেষ্ট ভূমিকা থাকলে দেশ ও জাতির স্বার্থে প্রবাসে আমাদের করণীয় কর্মগুলো সম্পাদনের তাগিদে আমাদের প্রয়োজন একটি যোগ্য আওয়ামী পরিবার। জয় বাংলা।

লেখক : সুইডেন প্রবাসী

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test