E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এক কাল বৈশাখীর ঝড়ে

২০১৬ এপ্রিল ০৫ ১৫:১২:২২
এক কাল বৈশাখীর ঝড়ে

যুথিকা বড়ুয়া : প্রবাস জীবনে শত ব্যস্ততার মধ্যেও বৈশাখ মাস এলেই দেশের টানে মনটা আনচান করে ওঠে। মুহূর্তে ছুটে চলে যায়, কৈশোরের আনন্দ-কোলাহলমুখর এবং হাজার মায়া ঘেরা আমাদের সেই কার্ত্তীকপুর গ্রামে।

চকিতে প্রতিবিম্বের মতো স্মৃতির আয়নায় ভেসে ওঠে, দিগন্ত জুড়ে সবুজ ধানক্ষেত, কচুরীপানাভরা পুকুর, খাল-বিল, নালা-নর্দমা আর ছোট ছোট জলাশয়। যেখানে বর্ষার জল জমে ঝাঁকে ঝাঁকে ব্যাঙাচি আর শোলমাছের পোনা কিলবিল করতো। আমরা পাড়ার ছেলেমেয়েরা সবাই দলবেঁধে হৈ-হুল্লোড় করতে করতে নেমে পড়তাম মাছ ধরতে। কখনো প্রবল ঝড়ের মুখে ছুটে যেতাম, পাড়ার ঝন্টুদের বিশাল আমবাগানের আমগাছতলায় কাদায় লেপটে পড়ে থাকা কাঁচা-পাকা আম আর জামরুলের সন্ধানে। কখনো আমাদের মাথার ওপরেই টপাটপ ঝরে পড়তো। তখন আমরা আনন্দে দিশা হারিয়ে দুইহাতে বুকভরে কুড়োতাম। ততক্ষণে লাঠি নিয়ে তেড়ে আসতেন ঝন্টুর মা, উষারানী দেবী ।

তিনি অকাল বৈধব্যে খিটখিটে মেজাজের হয়ে গিয়েছিলেন। শ্বশুরকূলের ভিটেবাড়িসহ বিষয় সম্পত্তি যা ছিল, মায়ে-ছেলে দিব্যি স্বচ্ছলভাবে চলে যেতো। তন্মধ্যে ওনাদের বিশাল আমবাগান। প্রচুর পরিমানে ফলতো। নিজেরা খেয়েও বাজারে বিক্রি করতেন। অথচ বাইরের কাউকে স্পর্শ করতে দিতেন না। নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু তা কেউই গ্রাহ্য করতো না। উষারানী দেবীর অগোচরে পাড়ার ছেলেমেয়েরা চুপিচুপি আমবাগানে ঢুকে পড়তো। আর দেখতে পেলে রক্ষে থাকতো না। তিনি গরুতাড়া করতেন। রেগে গিয়ে উত্তপ্ত মেজাজে বলতেন,-‘তগোর ডর-ভয় নাই! গাছের ডাল একখান্ ভাইঙ্গা পড়লেও তো ফাইট্যা যাইব গিয়া তগোর মাথা! কই গেল ঝন্টু! হেইডাই হইল গিয়া যত্তো নষ্টের গোড়া। ছ্যামড়া দলবল আইন্যা তুই উৎপাত করস। আমার এত্তো সাধের আমগুলারে ধংস করস!’

ঝন্টুই ছিল নাটের গুরু। পাড়ার ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এসে নিজেই উৎপাত উপদ্রপ শুরু করে দিতো। বড় বড় ঢিল ছুঁড়ে গাছের কাঁচা কাঁচা আমগুলিকে নষ্ট করতো। বলের মতো পা দিয়ে খেলতো। মায়ের সাড়া শব্দ পেলেই সবাইকে ভাগিয়ে দিতো। আজ যেখানে হাই-রাইজ্ বিল্ডিং উঠে কি নিদারুণ ঝকঝক্ তকতকে একটি সুন্দর নগরীতে পরিণত হয়েছে। সেই সবুজ-শ্যামল গ্রাম্য পরিবেশের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। কিন্তু কৈশোরে ফেলে আসা স্বর্ণালী দিনের অম্লান স্মৃতিগুলিকে কখনো কি ভোলা যায়! কখনো কি ভোলা যায়, প্রবল বর্ষণের ছটায় পদ্মদীঘির শাফলা ফুলের পাঁপড়ি মেলে মনমাতানো নাচনের অবিস্মণীয় সেই দৃশ্য! তেমনি কখনোই ভোলা যায় না, সবুজ বিলের মাঝে কচুবনের গা-ঘেষে কয়লার ইঞ্জিনে চলন্ত রেলগাড়ির হৃদয় কাঁপানো জোরালো বাঁশি আর ঝিকঝিক্ শব্দের এক অদ্ভুত আকর্ষণে দৌড়ে যেতেই যেদিন চিরদিনের মতো হারিয়ে গেল ঝন্টুর দৃষ্টিশক্তি।

১৯৭৪ সালের কথা। তখন কত আর বয়স আমাদের। সবাই নাবালক। বিবেক-বুদ্ধির বিকাশই ঘটেনি। মুক্ত -বিহঙ্গের মতো বন্ধনহীন, চিন্তাহীন মুক্ত জীবন। কত আনন্দের। ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ বোধ-জ্ঞান তখন কিছুই ছিলনা। আমাদের ইন্ধন জোগাতো ঝন্টু। রাত পোহালেই ওর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা পূর্ণোদ্যমে আনন্দ-কোলাহলে মেতে উঠতাম। লুকোচুরি খেলতাম। পড়ন্ত বিকেলে ক্লান্ত সূর্য্য কখন যে অস্তাচলে ঢলে পড়তো, টেরই পেতাম না। খুশীর পাল তুলে জীবন জোয়ারে ভেসে বেড়াতাম।

বয়সে ঝন্টুই ছিল আমাদের সবার সিনিয়ার। অথচ নিজে অবাধ্যতা ও বেপরোয়ার কারণে প্রতিদিন মায়ের বকুনি খেতো। কখনো উত্তম মধ্যমও পিঠে পগতো। যেমন ছিল অতিরিক্ত চঞ্চল আর দুষ্টুবুদ্ধিতে ভরা, তেমনি লেখাপড়াতে একেবারে অষ্টরম্ভ। কোনরকমে ভাতদু’টো গোগ্রাসে মুখে দিয়ে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে নামমাত্রই স্কুলে ছোটা। তারপর ওর নাগাল পায় কে! কাঁধের ব্যাগটা আমগাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখে মনের সুখে টো টো কোম্পানী করাই ছিল ঝন্টুর ডেলি রুটিন। আর ছুটির দিনে পাড়ার এমাথা থেকে ওমাথা উদয়াস্থ চলতো ওর রাজত্ব। হনুমানের মতো তরতর করে আমগাছের আগায় উঠে শীশ্ দিয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আমাদের সকলকে সমবেত করতো। আমরা চোর পুলিশ খেলতাম। কিন্তু রেলগাড়ির ঝিক্ঝিক্ শব্দ আর বাঁশী শুনলে ঝন্টুকে আর খুঁজেই পাওয়া যেতো না। সবার অলক্ষ্যে চুপিচুপি নৈঃশব্দে ছুটে যেতো কচুবনের ঝাঁড়ে। ছুটতে ছুটতে কাঁটাতারের বিশাল জ্বাল ডিঙ্গিয়ে রেললাইনের ধারে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো আর ভাবতো, কোনপ্রকারে রেলগাড়িতে একবার উঠে যেতে পারলেই বহু দূর-দূরান্তে পৌঁছে যেতে পারবে। অনেক দেশ-বিদেশ দেখতে পাবে। ওকে কেউ বাঁধা দেবার থাকবে না। মনের সাধ মিটিয়ে রেলগাড়িতে চড়তে পারবে।

তখন ছিল চৈত্র মাস। প্রতিদিন ঝড় উঠত। সেদিনও সকাল থেকে গুমোট মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। চারদিক নিঝুম, নিস্তব্ধ। একটু হাওয়া নেই, বাতাস নেই, পশু-পাখীর কলোরব নেই। যেন গোটা পৃথিবীটা থমকে দাঁড়িয়ে আছে। অপরাহ্নেই ঘনিয়ে এসেছে অন্ধকার। গুড়ুম গুড়ুম মেঘের গর্জন, বিদ্যুতের বাঁকা ঝিলিক। সেই সঙ্গে তুফানি পবন আর বাতাসের গোঁঙানী। সে একেবারে প্রলয়ঙ্করী বেগে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে মুছড়ে রাজ্যের ধূলোবালি উড়িয়ে ছুটে চলে দিগ্বিদিকে। তারপর শুরু হয় বৃষ্টি। যেন আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি। প্রবল বর্ষণে জলে থৈ থৈ করছে চারদিক। রাস্তাঘাট চেনা যাচ্ছে না। রেললাইন ডুবে যাওয়ায় সেদিন মাঝপথে থেমে গিয়েছিল রেলগাড়ি। কি ভয়াবহ সেই দৃশ্য। কূয়াশার মতো ধোঁয়াটে আবরণে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছিল না। রাজ্যের হাঁস-মুরগী, পশু-পাখী থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রাণীই নিজের প্রাণ বাঁচাতে হিমশিম খাচ্ছিল। এমতবস্থায় রেলগাড়িতে ওঠার জন্য ঝন্টু ক্যাঙ্গারুর মতো থপ থপ করে পা ফেলে উর্দ্ধঃশ্বাসে মরিয়া হয়ে ছুটে যাচ্ছিল। কিন্তু অদৃষ্টের লিখন খন্ডাবে কে! হঠাৎ বেকায়দায় পা পিছলে কাদার গভীরে আঁটকে যেতেই ঝন্টু হুমড়ি খেয়ে পড়ে কাঁটাতারের ওপর।

সাধারণতঃ বিপদকালেই মানুষ দিশা-জ্ঞান হারিয়ে ফ্যালে। বিবেক-বুদ্ধি লোপ পায়, বুদ্ধিভ্রষ্ঠ হয়ে পড়ে। ঝন্টু তো নাবালক। তাল সামলাতে পারেনি। চোখদু’টোয় গুরুতরো আঘাতে ঘায়েল হয়ে কখন যে সেন্সলেস হয়ে গলা পর্যন্ত জলে ডুবেছিল, কেউ জানেনা। ওদিকে ডেকে ডেকে হয়রান উষারানী দেবী। এহেন ভয়ঙ্কর দুর্যোগের মধ্যে ছেলেটা গেল কোথায়?

কিন্তু এ আর নতুন কি! ঝন্টু সাংঘাতিক দুঃসাহসী ছেলে। বিধাতা যে কোণ্ ধাতূ দিয়ে ওকে গড়েছিলেন, ডর ভয় বলতে কিচ্ছু ছিল না। বাঘের কলিজা ওর। কি শীতকাল, কি বর্ষাকাল, সন্ধ্যে সাতটার আগে কোনদিনও বাড়িতে ওর দর্শণ পাওয়া যেতো না। কিন্তু সন্ধ্যে ঢলে পড়েছে সেই কখন। ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে অন্ধকার। ঝন্টু তখনও নিখোঁজ, বেপাত্তা।

ততক্ষণে সারাপাড়ায় হৈ চৈ পড়ে গিয়েছে। দুঃশ্চিন্তায় ভাবনায় ঝন্টুর মাতা-পিতা অস্থীর হয়ে ওঠেন। দূপুর থেকে ছেলেটা গেল কোথায়? ধারণা করেছিলেন,-নিশ্চিয়ই বৃষ্টিতে কোথাও আঁটকে আছে। হয়তো বা পাড়ার কারো ঘরে ঢুকে বসে আছে!

তখনও ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি পড়ছে। তা উপেক্ষা করে পাড়ার ছেলেরা ছাতা নিয়ে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। সবার মুখে একটাই বুলি,-‘ঝন্টুকে তোমরা কেউ দেখেছ? ওকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা!’

একসময় থেমে যায় বৃষ্টি। শিথিল হয়ে আসে প্রকৃতির উন্মাদনা। চারিদিকে ক্রমশ অন্ধকারে ছেয়ে আসছে। জলে থৈ থৈ করছে সারাপাড়া। গ্যাঁঙর গ্যাঁঙর করে ব্যাঙ ডাকছে, ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকছে। ঝন্টু তখনও নিখোঁজ। হাক ডাক দিয়ে তন্ন তন্ন করে ওকে খুঁজজে সবাই।

এক গোয়ালা দুধ দিতে আসতো পাড়ায়। সেদিন ফিরতি পথে তার নজরে পড়ে, কে যেন রেললাইনের ধারে উপুর হয়ে পড়ে আছে। সন্নিকটে গিয়ে দ্যাখে, ওর নিঃশ্বাস চলছে। হুঁশ জ্ঞান নেই। চারদিকে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। কাদাজলে মিশে কালো হয়ে গেছে।

খবরটি মুহূর্তের মধ্যে সারাপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। আর শোনামাত্রই পাড়ার যুবক ছেলেরা ছুটে যায় সেখানে। যারা কাঁধে চেপে ঝন্টুকে নিয়ে গিয়েছিল স্থানীয় হাসপাতালে। সেখানে মাসখানিক চিকিৎসাধীনে থাকার পর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ঝন্টু বাড়ি ফিরে আসে ঠিকই কিন্তু চিরতরে হারিয়ে গেল ওর দৃষ্টিশক্তি।

সেইদিন থেকে পাড়ায় উৎপাত উপদ্রপ, হৈ-হুল্লোড়, চিৎকার-চেঁচামিচি সব বন্ধ হয়ে গেল। স্তব্ধ হয়ে গেল আমাদের আনন্দ-কোলাহল, হাসি-গুঞ্জরণ। কিছুতেই ভাবতে পারতাম না, ঝন্টু অন্ধ। চোখে দেখতে পায়না। সে যে কি কষ্ট-বেদনা বুকে পুষে রেখে কৈশোরের বাকি দিনগুলি আমরা অতিবাহিত করেছিলাম, ভাবলে আজও চোখে জল আসে।

তারপর কত ঝড়-তুফান এলো আর গেল, ঝন্টুদের আমবাগানে আমরা কেউ আর যেতাম না আম কুড়োতে। গাছের আম গাছতলাতেই পড়ে শুকিয়ে যেতো। কখনো পোঁচে দুর্গন্ধ বের হতো। কেউ দেখাশোনা করতো না। পরিস্কার করতো না।

আর এভাবে দীর্ঘদিনের নোংরা আবর্জনা জমে গিয়ে একসময় গভীর জঙ্গলে ছেয়ে যায়। যেখানে রাজ্যের সাপ-ব্যাঙ, কীট-পতঙ্গ, পোকা-মাকড় গিয়ে বাসা বেঁধেছিল। কিন্তু মানুষের জীবন নদীর প্রবাহ সদা চঞ্চল, বহমান। কখনো একজায়গায় থেমে থাকেনা। জোয়ার ভাটার টানে কখন কোন্ মোহনার দিকে ধাবিত করে, তা কেউ বলতে পারেনা। কালের বিবর্তনে জায়গা জমি বেচে দিয়ে আমাদের গ্রাম ছেড়েই ঝন্টুরা অন্যত্রে গিয়ে স্থায়ীভাবে বাসা বাঁধে। তারপর কোনদিন আর দেখা হয়নি ওর সাথে।

আমার আজও স্পষ্ট মনে পড়ে, চোখে কালো চশমা পড়ে ঝন্টু যেদিন হাসপাতাল থেকে পাড়ায় ফিরে আসে, সেদিন ছিল বাংলা নববর্ষ। ১৩৮০ সাল, ১লা বৈশাখ। প্রতিটি মুদিদোকানে হালখাতা হচ্ছিল। মাইকে শ্রুতিমধুর বাংলা গান বাজজিল। আমরা সঙ্গী-সাথীরা সবাই নতুন জামা-কাপড় পড়ে বাংলা নববর্ষকে স্বাগতম জানাতে নাচে, গানে, সুর ও ছন্দের তালে আনন্দে মেতে উঠেছিলাম, বাঙালির আবহমানকালের চিরাচরিত ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সভ্যতা এবং সংস্কৃতির আনন্দ মেলায়। কিন্তু দুঃখের দহনে, করুণ রোদনে সেদিন ঝন্টুর মায়ের বুকের পাঁজরখানা কিভাবে যে ভেঙ্গে গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছিল, তা একবারও ভাবিনি। ভাবতে পারিনি। একবারও মনে হয়নি, কিভাবে ঝন্টুর দিন কাটবে, রাত পোহাবে। জীবনের এতখানি দীর্ঘ পথ ও’ কিভাবে অতিক্রম করবে! কি হবে ওর ভবিষ্যৎ! কি হবে ওর পরিণাম!

ঝন্টু সারাদিন জানালার ধারে উদাস হয়ে বসে থাকতো। নৈঃশব্দে কেউ গিয়ে দাঁড়ালে উষ্ণ নিঃশ্বাস প্রঃশ্বাসে তার উপস্থিতি টের পেয়ে ফ্যাঁচ্ ফ্যাঁচ্ করে কাঁদতো। দু’হাতে চোখের জল মুছতো আর জিজ্ঞ্যেস করতো,-‘কটা বাজেরে এখন? খেলতে যাসনি তোরা? সূর্য্য কি ডুবে গিয়েছে?’

কিন্তু ওকে যে কোন্ ভূতে পেয়েছিল, জীবনের এতবড় একটা সম্পদ চিরতরে হারিয়েও ওর এতটুকু দুঃখ ছিল না। অনুতাপ ছিল না। মন্ত্রের মতো সারাদিন শুধু জপতো, -‘রেলগাড়িতে আমার আর চড়া হলো না রে! আর চড়াই হলো না আমার রেলগাড়িতে!’

কিন্তু কতদিন? যৌবনের চৌকাঠে পৌঁছেও কি ঝন্টু একই স্বপ্ন দেখতো? নিশ্চয়ই নয়। কারণ যৌবনেই প্রতিটি মানুষের সম্পূর্ণ নিজস্ব মালিকানায় সৃষ্টি হয়, একটি কাল্পনিক জগত। সেটাই তার একান্ত আপন ভুবন। যেখানে অবিরল অবয়ব রূপের মহিমায় তার মনগড়া কোনো এক স্বপ্নপরীর আর্বিভাবে তার মনের মণিকোঠায় অতি সংগোপনে লালিত হয়, জীবনের পরম কাক্সিক্ষত স্বপ্ন, কামনা-বাসনা। যার অব্যক্ত আনন্দে শরীর এবং মনকে পুলকিত করে, বিকশিত করে। আর তারই প্রভাবে কতনা আকাশকুসুম ভাবনার জাল বুনে কত রঙ্গিন স্বপ্ন আঁকা শুরু হয় দু’চোখের কোণে। রচনা করে ভালোবাসার পান্ডুলিপি। যখন জীবনের একান্ত চাওয়া পাওয়াকেই সবচে’ বেশী গুরুত্ব দেয় সমগ্র মনুষ্যজাতি।

কিন্তু ঝন্টু বেলায় তা হয়তো চিরস্থায়ী হয়নি। হয়তো বা দৃষ্টিহীনতার গ্লানিতেই ওর হৃদয়পটে এঁকে রাখা রঙ্গিন স্বপ্নগুলি সব নিশ্চিহ্ন হয়ে মুছে গিয়েছে। কিংম্বা ওর গহীন অন্ধকার এবং অনিশ্চিত জীবনে চলার পথে সহযাত্রী হয়ে কোনো এক মায়াবিনি বিদূষী নারী সহমর্মিতা হয়ে আলোর পথ দেখাতে স্বেচ্ছায় ঝন্টুর হৃদয়দ্বারে এসে ধরা দিয়েছে, তা কে জানে!

লেখক : কানাডা প্রবাসী গল্পকার, গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত শিল্পী


পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test