E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

২০ কোটি টাকা পাচ্ছেন নিউইয়র্কে দুর্ঘটনায় নিহত মোশারফের বাংলাদেশের স্বজনেরা

২০১৬ এপ্রিল ০৬ ১৩:০৬:০৮
২০ কোটি টাকা পাচ্ছেন নিউইয়র্কে দুর্ঘটনায় নিহত মোশারফের বাংলাদেশের স্বজনেরা

নিউইয়র্ক থেকে হাকীকুল ইসলাম খোকন : দীর্ঘ ৮ বছরের আইনী লড়াইয়ের সুফল এলো নির্মাণ শ্রমিক মোশারফ হোসেনের পরিবারের জন্যে। মাননীয় আদালতের নির্দেশে ২.৫ মিলিয়ন ডলার (১.৯ মিলিয়ন ডলারের সাথে ৯% সুদসহ) অর্থাৎ প্রায় ২০ কোটি টাকা পাচ্ছেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের সন্তান এবং নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলীনের নিউকার্কের প্রবাসী মোশারফ হোসেন(৫০) এর স্ত্রী ও সন্তানেরা।

উল্লেখ্য, তার স্ত্রী সেতারা বেগম, ২ পুত্র এবং ২ কন্যার সকলেই বাস করছেন নোয়াখালি জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর গ্রামে। তাদের প্রতিনিধি হিসেবে এই মামলায় লড়েছেন নিউইয়র্কের প্রখ্যাত এটর্নী পেরী ডি সিলভার। মরহুম মোশারফের পরিবারের সাথে যাবতীয় সমন্বয় করেছেন কানেকটিকাটে বসবাসরত (মোশারফের ভগ্নিপতি) কামরুল ইসলাম। এটর্নী পেরী ডি সিলভার এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এটর্নী সিলভার আরো বলেন যে, পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে আনার চেষ্টা চলছে। তারা যদি ভিসা না পান তাহলে বাংলাদেশে তাদের ব্যাংক একাউন্টে জমা করা হবে সমুদয় অর্থ।

মামলার বিবরণে প্রকাশ, ২০০৮ সালের ২ জুন ব্রুকলীনে ৭৮৯ সেন্ট মার্কস এভিনিউতে বহুতল একটি এপার্টমেন্ট ভবনের ৪ তলায় কাজের সময় পড়ে নিয়ে গুরুতরভাবে আহত হন মোশারফ হোসেন। দ্রুত তাকে নেয়া হয় নিকটস্থ কিংস কাউন্টি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা টানা ২৪ ঘন্টা চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারেননি। এরপরই শুরু হয় এই মৃত্যুর জন্যে ক্ষতিপূরণ আদায়ের আইনগত লড়াই। প্রথমদিকে এপার্টমেন্টে বিল্ডিংয়ের মালিকপক্ষ অস্বীকার করেছিলেন যে, মোশারফ তাদের কেউ নন। তারা তাকে কাজে নিয়োগও করেননি।

আরো জানা গেছে, দুর্ঘটনায় নিহত হবার সময় তার জ্যেষ্ঠ পুত্র দেলোয়ার হোসেন (২০) যুক্তরাজ্যে একটি কলেজে অধ্যয়ন করছিলেন। তার ফিউনারেলসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয় কোম্পানীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের মাধ্যমে। কারণ তিনি ছিলেন এই এসোসিয়েশনের সদস্য। এছাড়া, তার লাশ দেশে পাঠানোর দায়িত্বও পালন করে এই এসোসিয়েশন।

এ সংগঠনের সভাপতি সেলিম চৌধুরী বাবুল জানান, লাশ প্রেরণের সময় স্বজনের আপদকালিন প্রয়োজন মেটানোর জন্যে নগদ ৫ হাজার ডলারও দেয়া হয়।

আরো জানা গেছে যে, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার তদন্ত চালায় ‘অক্যুপেশনাল সেইফটি এ্যান্ড হেল্থ এডমিনিস্ট্রেশন’ (Occupational Safety and Health Administration)। তদন্তের পর তারা অসংখ্য অনিয়ম চিহ্নিত করেন। এমনি অবস্থায় ব্রুকলীন কোর্টে পুরোদমে মামলা শুরু করেন এটর্নী পেরী। একইসাথে তিনি মৃত নির্মাণ শ্রমিকের পরিবারের জন্যে প্রাত্যহিক ক্ষতিপূরণও আদায়ে সক্ষম হন। অবশেষে গত বছর তিনি মাননীয় জজ জন জে কেলীকে কনভিন্স করতে সক্ষম হন যে, বিল্ডিং কর্তৃপক্ষের অবহেলার নিষ্ঠুর শিকার হয়েছেন বাংলাদেশী মোশারফ হোসেন। এরপরই ৬ সদস্যের জুরিবোর্ড ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন করেন। ১.৯ মিলিয়ন ডলারের পাশাপাশি মামনীয় আদালতের নির্দিষ্ট করা অর্থের ওপর ৯% হারে সুদও পাবেন তারা। ৪ এপ্রিল মামলাটির চূড়ান্ত নিস্পত্তি ঘটে।

এ মামলায় মরহুমের ময়নাতদন্তের আলোকে বিভিন্ন দিক মাননীয় আদালতে উপস্থাপন করেন লং আইল্যান্ড জুইশ হাসপাতালের এক্সপার্ট চিকিৎসক। তাকে নিয়োগ করেছিলেন এটর্নী পেরী। সে আলোকে একটি ভিডিও প্রদর্শনও করা হয় জুরিবোর্ডের সামনে।

উল্লেখ্য, মোশারফ হোসেন স্ক্যাফল্ডে ভর করে কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় পতিত হন। তার সহকারি ছিলেন জসীমউদ্দিন নামক আরেক বাংলাদেশী। তিনি লাঞ্চ আনার জন্যে স্ক্যাফল্ড থেকে নীচে নামার পরই এ দুর্ঘটনা ঘটে। আরো উল্লেখ্য, বঙ্গবীর জেনারেল এমএজি ওসমানী স্মৃতি পরিষদের সভাপতি আলহাজ্ব নজমুল চৌধুরী হচ্ছেন এটর্নী পেরীর বাংলাদেশী সহকারি। এ রায়ের মধ্য দিয়ে এটিও প্রতিষ্ঠিত হলো যে, বৈধ অভিবাসী না হলেও কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্যে ক্ষতিপূরণ আদায় করা সম্ভব। এবং ক্ষতিপূরণের সে অর্থ বাংলাদেশে অবস্থানরতরাই পাবেন।



(এইচআইকে/এস/এপ্রিল০৬,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test