E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নিউইয়র্কে শেখ রাসেলের ৫২ তম জন্মদিন উদযাপিত

২০১৬ অক্টোবর ২০ ১৪:৫৬:৩৬
নিউইয়র্কে শেখ রাসেলের ৫২ তম জন্মদিন উদযাপিত

নিউজ ডেস্ক : স’-দিয়ে হয় সবুজ এবং স’-য়ে স্বাধীনতা,/ বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক বিষন্নতা.../ র’ দিয়ে হয় রাসেল এবং র’ দিয়ে ঠিক রাত,/ র’ দিয়ে হায় রক্ত এবং তুমুল রক্তপাত.../ অ দিয়ে হয় অক্টোবরও, জন্মদিনের মাস,/ আঠেরোতে শেখ রাসেলের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাস... ।

বাঁধভাঙ্গা আবেগ দিয়ে নিউইয়র্কে পালিত হলো শেখ রাসেলের জন্মদিন। ১৮ অক্টোবর ছিলো সেই মায়াবী কিশোরের ৫২তম জন্মতিথি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট পিতা শেখ মুজিবের সঙ্গে ঘটেছিলো অস্বাভাবিক মৃত্যু। ঢাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে কনিষ্ঠ সহোদরের স্মৃতিচারণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দু’চোখ ভরে উছলে উঠেছিলো ক্রন্দন-জল। নিউইয়র্কের আয়োজনেও উচ্চারিত হয় আবেগ মথিত কথামালা।

কবি-কথাকার সালেম সুলেরীর নিবেদিত কবিতা সবার হৃদয়ে তোলে অনুরণন। কাছ থেকে দেখা শেখ রাসেলকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন প্রবাস ব্যক্তিত্ব নাঈমা খান। ব্যক্তিগতভাবে তিনি শেখ রেহানার স্কুলবন্ধু। পড়ুয়া কিশোর তরুণদের প্রতিষ্ঠান খানস টিউটোরিয়ালের চেয়ারপারসন। একদল ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন আরেক শিক্ষাব্রতী। স্কলাসটিকা টিউটোরিয়ালের কর্ণধার রেজা রশীদ। খবর বাপসনিঊজ।

স্মতিময় অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিলো যুক্তরাষ্ট্র শাখা রাসেল পরিষদ। সংগঠনের পুরো নাম শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ। আহ্বায়ক গোলাম এম খান লিপটন এতে সভাপতিত্ব করেন। প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রায় ১২ কর্মকর্তা আলোচনায় অংশ নেন।

প্রধান অতিথি, আলোচকসহ বক্তাবৃন্দ বলেন, কোনো যুক্তিতেই শিশু শেখ রাসেলের হত্যাকান্ড মেনে নেওয়া যায়না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু পুত্র হিসেবে তার প্রয়োজন যুগে যুগে অনুভূত হবে। ঘাতকচক্র জেনে বুঝেই এই নির্মম কাজটি করেছে। দেশকে নেতৃত্বহীন করার প্রয়াস চালিয়েছে। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা ও জনগণ সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে। দেশরতœ শেখ হাসিনার মতো সুযোগ্য নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছে। আজ ৫২ বছরের শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে জনগণ আরো পরিতৃপ্ত থাকতো।

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ রাসেল পরিষদের প্রশংসা করেন। বলেন এই শাখাটি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ভিত্তিক সংগঠন হিসেবে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, আজকের নিবেদিত কবিতাটি সুলিখিত যা সর্বত্র পুনঃপ্রকাশ ও ব্যাপকভাবে প্রচার করা প্রয়োজন। প্রবাসে অনুবাদের মাধ্যমেও নতুন প্রজন্মের মাঝে বিতরণের কথা বলেন। তিনি কবি-সাংবাদিক সালেম সুলেরীকে ধন্যবাদ জানান কবিতাটি রচনা ও আবৃত্তির জন্যে।

অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিবের একটি শুভেচ্চা বক্তব্য পঠিত হয়। বিশিষ্ট শিল্পপতি ও আওয়ামী লীগের এমপি মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী এটি পাঠিয়েছেন। তিনি সিলেট-৩ এর নির্বাচিত এমপি ও জাতীয় সংসদের প্যানেল স্পিকার। মহাসচিব জনাব চৌধুরীর এই আবেগভরা বার্তাটি পাঠ করেন লেখিকা-প্রকাশক পপি চৌধুরী। নতুন প্রজন্মের কিশোর-তরুণেরাও শেখ রাসেল বিষয়ে আবেগভরা বক্তব্য রাখেন। জন্মদিনের কেক কাটার পর্বে নেতৃত্ব দেয় ১১ জন ছাত্র-ছাত্রী। উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালে ১৮ অক্টোবর জন্ম নেওয়া রাসেল প্রাণ হারান ১১ বছর বয়েসে। অনুষ্ঠান সভাপতি গোলাম লিপটন কিশোরদের নিয়ে কার্যক্রম ঘোষনা করেন। বলেন, শেখ রাসেলের অতীত ও কিশোরদের ভবিষ্যতে করণীয় বিষয়ে বক্তৃতা প্রতিযোগিতা আয়োজিত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে সংগঠকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাখাওয়াত বিশ্বাস, কাজী কয়েস, হেলাল মাহমুদ, নুরুজ্জামান, মাহবুবুর রহমান টুকু, দুরূল হুদা রনেল, রফিকুর রহমান, আলী আকবর, মনিরুল আলম দিপু, আফরোজা হাসমত, রেজাউল করিম কিরন প্রমুখ। সার্বিক সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগনেএী মিনা ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন আলী আকবর। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন জুনেদ আহমেদ চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান, কথাসাহিত্যিক সিরাজুল ইসলাম সরকার, শেখ কামাল হাসান, শাহ রহিম শ্যামল, জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় নিউইয়র্কের বাঙালিপাড়া খ্যাত জ্যাকসন হাইটসে। মেজবান পার্টি হলে নৈশভোজেরও ব্যবস্থা ছিল। সেই কবিতাটি :


যে শিশুরা রাসেল হবে
সালেম সুলেরী

স’-দিয়ে হয় সবুজ এবং স’-য়ে স্বাধীনতা,
বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক বিষন্নতা।
ব’ দিয়ে হয় বাংলা এবং দ’দিয়ে ঠিক দেশ,
দ’য়ে ব’য়ে মিলিয়ে হয় হিংসুটে বিদ্বেষ।
র’দিয়ে হয় রাসেল এবং র’দিয়ে ঠিক রাত,
র’দিয়ে হায় রক্ত এবং তুমুল রক্তপাত।

ম’ দিয়ে হয় মহা-মুজিব, ম’-এ আছেন মা,
আগস্ট মাসের পনেরোতে শিউরে ওঠে গা।
গা ছমছম হত্যা খেলা, পরদেশীদের চর
শোক সাগরে ভাসিয়ে দিলো বাংলা মায়ের ঘর
রক্ত দিলেন মহা-মুজিব, সপরিবার খুন,
গর্ভে’ভরা বাঙালিদের মুখে কালি চুন।
যে দিয়েছে স্বাধীনতা, যে বোঝালো দেশ,
তারই সাথে নফরমানী, হিংসা ও বিদ্বেষ!

জ’ দিয়ে হয় জাতির জনক, শ’দিয়ে হয় শেখ,
সরে অ’তে অরুণিমা, অ’তে অভিষেক।
অ দিয়ে হয় অক্টোবরও, জন্মদিনের মাস,
আঠেরোতে শেখ রাসেলের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাস
কী বারতা জন্মদিনের, বেলুন কেকে’র দিন,
বঙ্গরাজ্যের সঙ্গশিশু, উৎসবে উড্ডীন।
হাসলে রাসেল বাংলা হাসে, টোল পড়া গোল-গাল
শৈশবে আর কৈশোরে ভর, জীবনটা উত্তাল।

ইশকুলে যায়, পড়ায় লেখায় ধাপের পরে ধাপ,
রাসেল ছিলো খুব সাধারণ, মেধাবী নিষ্পাপ।
স্বপ্ন ছিলো মানুষ হ’বার, দীপ্ত দ্যুতিময়,
কণ্ঠ ছিলো মন-ভেজানো, দারুণ শ্রুতিময়।
রাসেল ছিলো সম্ভাবনা, দেশের ভবিষ্যৎ,
দেশ-বিরোধী ঘাতকেরা তাই হেনেছে ক্ষত।

ব’-দিয়ে সেই বঙ্গ এবং ব’-দিয়ে বিশ্বাস,
ন’-দিয়ে হায় নির্মমতা, নির্মমে নিঃশ্বাস।
কী অপরাধ ঐ শিশুটির, স্বপ্নচারী বালক,
রাসেল মানেই বাংলা শিশুর মুগ্ধ হাসি, আলোক,
সেই হাসিটা অন্ধকারে, জ্বলবে আবার তাই,
বলবে হেসে দেশ-বিদেশে লক্ষ রাসেল চাই।

রাসেল মানে আর ভীতি নয়, এবার প্রতিবাদ,
সংগঠনে সংগঠিত, মিডিয়া সংবাদ
দেশের পাশে বিদেশ বুকে মুষ্টি ধরা হাত,
আর পাবেনা উদার সুযোগ আনতে কালো রাত
এখন কেবল সূর্য সেনা, ঘুরছে অবিরাম,
সবার বুকে মুখে মুখে শেখ রাসেলের নাম।

(এইচকে/এএস/অক্টোবর ২০, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test